Nishat Tasnim-
অন্য কোনো প্রাণির যদি মানুষের কন্ঠস্বর নকল করে কথা বলার সামর্থ্য থাকে তাহলে বুঝতে হবে অবশ্যই ঐ প্রাণির সাথে মানুষের গঠনগত কিছু মিল রয়েছে।সেগুলোই আলোচনা করা যাক।
১. মস্তিষ্ক—মানুষ বনাম টিয়াঃ-
ছবিতে লাল চিহ্নিত অংশটি দেখছেন এটি হলো Pontine Nuclei। এটি আমাদের মস্তিষ্কের সবচেয়ে বড় দুটি অংশের(সেরেব্রাম ও সেরেবেলাম) মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করে।এটি মূলত অসংখ্য নিউরন নিয়ে গঠিত। সেরেব্রাম ও সেরেবেলামের মধ্যকার সমন্বয় সাধনের ফলেই স্তন্যপায়ীতে বিভিন্ন উন্নত বৈশিষ্ট্যের উদ্ভব হয়েছে।
তবে পাখির মস্তিষ্কে এই অংশটি না পাওয়া গেলেও সেখানে একই রকম কাজ করা একটি গঠন পাওয়া গেছে।যার নাম medial spiriform nucleus (SpM)। এটি প্রায় একই কাজ করে। ফলে বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, পাখিদের মস্তিষ্ক স্তন্যপায়ী ছাড়া অন্যান্য প্রাণিদের তুলনায় অনেক উন্নত।পরবর্তীতে বিজ্ঞানীরা অনেকগুলো পাখি প্রজাতির উপর গবেষণা করলে দেখা যায় যে, টিয়াসহ অন্যান্য যেসকল পাখি কথা বলতে পারে তাদের ক্ষেত্রে এই অংশ(SPM) অন্য সব প্রজাতি থেকে ৩-৪ গুণ বড় হয়। এছাড়াও এসব পাখির মস্তিষ্কে "Nidopallium" নামক গঠন দেখা যায়। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, পাখির বিভিন্ন উন্নত বৈশিষ্ট্যগুলো এই অংশটিই নিয়ন্ত্রণ করে।
২.স্বরযন্ত্র—মানুষ বনাম টিয়া:
গলায় একটু হাত দিন তো! একটা উঁচু জিনিস পাচ্ছেন? এইটা হলো থাইরয়েড তরুনাস্থি(স্বরযন্ত্রের সবচেয়ে বড় তরুনাস্থি)।স্বরযন্ত্রের(Larynx) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ভোকাল কর্ড। যখন আমরা কথা বলি তখন ফুসফুস থেকে বাতাস বেরিয়ে এসে স্বররজ্জু (Vocal Cord) কে কম্পিত করে। ফলে শব্দের সৃষ্টি হয়। নইলে শব্দের বদলে কেবল শোঁ শোঁ করে বাতাসই বের হতো।
পাখিদেরও স্বরযন্ত্র আছে। না থাকলে কি আর আমরা পাখির কিচিরমিচির শব্দে ঘুম থেকে উঠতে পারতাম! তবে পাখিতে যেটা আছে সেটা হলো Syrinx। এটা ঠিক স্বরযন্ত্রের মতো কাজ করে। অর্থাৎ, ফুসফুস নিঃসৃত বাতাস এখানে কম্পিত হয়ে শব্দ সৃষ্টি করে। প্রজাতির ভিন্নতার উপর ভিত্তি করে Syrinx এর গঠনে ভিন্নতা দেখা যায়। যেসব পাখি কন্ঠ নকল করতে পারে তাদের ক্ষেত্রে যেরকম গঠন দেখা যায় অন্যান্য সাধারণ পাখির ক্ষেত্রে ভিন্ন গঠন দেখা যায়। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এসব পাখিদের ক্ষেত্রে Syrinx এর গঠন তাদের কথা বলার জন্য অনুকূল। ফলে তারা কথা বলতে পারে।
টিয়াপাখি সহ অন্যান্য পাখি যারা কথা বলায় পটু তারা এই জিহ্বাকে ব্যবহার করেই আমাদের বলা শব্দগুলো উচ্চারণ করে।
টিয়াপাখি যখন মানুষের মাঝে বাস করতে শুরু করে তখন তার সামাজিক আচরণও উন্নত হতে শুরু করে। ফলে, দেখা যায় এদের যেসব উন্নত বৈশিষ্ট্য আছে সেগুলোও আস্তে আস্তে জাগ্রত হতে শুরু করে।তাই একসময় এরা মানুষের কথাও কিছুটা মনে রাখতে পারে এবং সাথে সাথে বলতেও পারে। তবে অনেকে মনে করে টিয়াপাখি যা বলে তা না বুঝে বলে। আসলে এটা সঠিক না। এমনকি টিয়াপাখিকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অনেক দক্ষও বানানো যায়।
©সংগ্রহীত