সহশিক্ষামূলক কার্যক্রম কেন গুরুত্বপূর্ণ? - ScienceBee প্রশ্নোত্তর

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রশ্নোত্তর দুনিয়ায় আপনাকে স্বাগতম! প্রশ্ন-উত্তর দিয়ে জিতে নিন পুরস্কার, বিস্তারিত এখানে দেখুন।

0 টি ভোট
443 বার দেখা হয়েছে
"চিন্তা ও দক্ষতা" বিভাগে করেছেন (20,400 পয়েন্ট)

1 উত্তর

0 টি ভোট
করেছেন (20,400 পয়েন্ট)
Extra Curricular এর সাথে আমরা কম-বেশি সকলেই পরিচিত। Extra Curricular এর আক্ষরিক বাংলা অর্থ দাঁড়ায় সহশিক্ষামূলক কার্যক্রম, যা পাঠ্যবইয়ের বহির্ভূত। অর্থাৎ, পাঠ্যবই বহির্ভূত শিক্ষামূলক কার্যক্রমই হচ্ছে Extra Curricular। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই হোক সেটা স্কুল,কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় Extra Curricular রয়েছে। হতে পারে সেটা বিতর্ক, আবৃত্তি, চিত্রাঙ্কন, উপস্থিত বক্তৃতা, উপস্থাপনা কিংবা খেলাধুলা। এছাড়াও রয়েছে বৃক্ষরোপণ অভিযান, সাক্ষরতা অভিযান, রক্তদান কর্মসূচি, স্কাউট, গার্লস গাইড ইত্যাদি!  আবার রয়েছে গণিত, জীববিজ্ঞান, রসায়ন, বিজনেস ইত্যাদি অলিম্পিয়াড। তবে আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষই মনে করেন যে Extra Curricular এক্টিভিটি কোনো কাজে লাগে না, যেহেতু এগুলো আমাদের একাডেমিক ফলাফলে কাজে আসছে না। তাই Extra Curricular এক্টিভিটিজ শুধুই সময় নষ্ট আর বোকামি ছাড়া কিছুই নয়! কিন্তু আসলেই কি তাই?

আমাদের দেশের বেশিরভাগ ক্লাস টপারই বইকুনো প্রকৃতির! একাডেমিক পড়ার বাইরে Extra Curricular এদের কাছে হাস্যকর এবং সময়ের অপচয় মনে হয়। আবার অনেকেই পরিবারের চাপের কারণে Extra Curricular-এ অংশ নিতে পারেনা! জিপিএ-৫ কিংবা বৃত্তি পাওয়ার লোভে অনেকেই Extra Curricular-কে উপেক্ষা করে একাডেমিক পড়াশোনায় মগ্ন থাকে!
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের সহকারী অধ্যাপক জুরানা আজিজ বলেছেন,

"আমাদের বাবা-মায়েরা এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটির গুরুত্ব অনুধাবন করেন না, আর তাই এগুলোর জন্য সন্তানদেরকে উদ্বুদ্ধও করেন না। তাদের মূল ফোকাস থাকে ক্লাসে ফার্স্ট হওয়ার প্রতিযোগিতায়। একই কাজ করে স্কুলগুলোও, যেখানে শিক্ষার্থীদেরকে পরীক্ষা নিয়ে অতিরিক্ত চাপ দেয়া হয়, এবং স্কুলে এক্সট্রা কারিকুলার অনুশীলন করার সুযোগটুকুও দেয়া হয় না। এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটি পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত তহবিল গঠন করা হয় না, অথচ স্কুলে এগুলো অব্যাহত রাখার জন্য লজিস্টিক সাপোর্ট খুব জরুরি।"

তাই বলে একাডেমিক পড়াশোনা বাদ দিয়ে সমস্ত ধ্যান-জ্ঞান এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিজে দেওয়া অবশ্যই অযৌক্তিক! কিন্তু পড়াশোনাকে জীবনের একমাত্র ধ্যান-জ্ঞান বানানোও অযৌক্তিক। তাই পড়াশোনার বাইরেও আনুষঙ্গিক কার্যক্রমে অংশ নিতে হবে। আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা বিজ্ঞান মেলা কিংবা গণিত অলিম্পিয়াডে ফার্স্ট হলে বাবা-মা খুশি হন না, কিন্তু সেই ছেলেমেয়ে ক্লাসের পরীক্ষায় ফার্স্ট হলে বাবা-মা ঠিকই খুশি হন! অথচ এটি হওয়ার কথা ছিল না। দুটো অর্জনই তো একই!  সমান বাহবা পাওয়ার অধিকার রাখে।

এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিজ নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা, পরিবার ও সমাজের চাপে এখনকার ছেলেমেয়েরা বইকুনো হয়ে গিয়েছে। হারিয়ে যাচ্ছে আকাশ সংস্কৃতির(অপসংস্কৃতি) অন্ধকার জগতে! আমরা সবাই একটি প্রবাদ বাক্য শুনেছি "গ্রন্থগত বিদ্যা আর পরহস্তে ধন, নহে বিদ্যা নহে ধন হলে প্রয়োজন।" তাই আমাদের অর্জিত জ্ঞানকে বাস্তব জীবনে কাজে লাগাতে হলে এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিজ অত্যন্ত জরুরি!

১. নিজের কমফোর্ট জোন ভাঙতে সাহায্য করে

 

আমাদের প্রত্যেকেরই একটি নির্দিষ্ট কমফোর্ট জোন থাকে। আমরা সাধারণত এই জোনের বাইরে বের হতে পারিনা। কিন্তু পরস্পরের সহযোগিতামূলক সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত আমাদের এই সমাজে কমফোর্ট জোনের বাইরে বের হওয়াটা খুব জরুরি। কো-কারিকুলার এক্টিভিটিজের মাধ্যমে আপনি অনেক মানুষের সাথে মিশতে পারবেন, নতুন নতুন পরিবেশের সাথে পরিচিত হতে পারবেন। যা আপনাকে আপনার কমফোর্ট জোন থেকে বের হতে সাহায্য করবে।

২. সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটায়

 

আমরা সবাই কোনো না কোনো বিষয়ে পারদর্শী! সবার মধ্যেই কোনো না কোনো বিষয়ে প্রতিভা আছে। কিন্তু সেই প্রতিভার বিকাশের জন্য সেই প্রতিভাকে খুঁজে বের করা অত্যন্ত জরুরি। এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিজে আপনি যখন অংশ নিতে থাকবেন, তখন আপনি নিজেই আপনার সুপ্ত প্রতিভার খোঁজ পেয়ে যাবেন। পেয়ে যাবেন সেই প্রতিভা বিকাশের সুযোগও।

৩. সিভি ভারী করে

 

বর্তমান সময়ে চাকরির বাজার বেশ প্রতিযোগিতামূলক। যে-কোনো চাকরির জন্য আপনার সিভি ভারী হওয়া জরুরি। আপনার সিভি ভারী করার জন্য কো-কারিকুলার এক্টিভিটিজ আপনাকে সাহায্য করতে পারে! সিভি ভারী হওয়ার কারণে মোটামুটি একাডেমিক রেজাল্ট নিয়েও অনেকেই ভালো চাকরি পেয়ে যাচ্ছে, আবার ভালো রেজাল্ট থাকলেও সিভি হালকা হওয়ায় অনেকেই ভালো চাকরি পাচ্ছে না! জব সেক্টরে আপনার দক্ষতা গুরুত্বপূর্ণ, আপনার একাডেমিক রেজাল্ট আপনাকে হেল্প করবে না।

৪. নতুন নতুন স্কিল অর্জনে সাহায্য করে

 

এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিজে অংশ নেওয়ার মাধ্যমে আপনি নতুন নতুন স্কিল অর্জন করতে পারবেন। যা আপনার জীবনের সব ক্ষেত্রেই আপনাকে সাহায্য করবে! তাই একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিজ থাকা জরুরি।

৫. কর্মদক্ষতা এবং টাইম ম্যানেজমেন্ট বাড়ায়

 

আপনি যখন মাল্টিটাস্কিংয়ে অভ্যস্ত হবেন, তখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে টাইম ম্যানেজমেন্ট আপনার মধ্যে চলে আসবে। ফলে আপনার দৈনন্দিন জীবন ছন্দে চলে আসবে। আপনি আপনার কাজগুলো সুন্দরভাবে সম্পাদন করতে পারবেন। এছাড়াও মাল্টিটাস্কিং আপনার কর্মদক্ষতা বাড়িয়ে তুলবে, ফলে আপনার কাজের চাপ গ্রহণের ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে!

৬. সৃজনশীলতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে

 

আগ্রহ, সৃজনশীলতা নিজে থেকে অনেকের মধ্যে গড়ে ওঠে, এটা ঠিক। তাই বলে কারোও মধ্যেই গড়ে তোলা যাবে না, এমনটা নয়। উপযুক্ত পরিবেশ প্রদান করলে যে-কারো মধ্যে সৃজনশীলতার উন্মেষ ঘটানো সম্ভব। আবার সুপ্ত সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটানোর জন্য এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিজ গুরুত্বপূর্ণ। তাই সৃজনশীলতার বিকাশে এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিজে অংশ নিতে হবে।

৭. মানসিক চাপ, ডিপ্রেশন কমায়

 

আমরা অনেক সময়ই নানা রকম মানসিক চাপ, ডিপ্রেশনে থাকি। এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিজের মাধ্যমে আমরা নতুন একটা পরিবেশ পাই, সেখানে নানা রকম সৃজনশীলতা এবং ব্যস্তায় ডুবে থাকি। আবার নতুন নতুন কার্যক্রমে অংশ নিলে মানসিক চাপ অনেকাংশেই কমে যায়। যা আমাদের ডিপ্রেশন কমাতে সাহায্য করে।

৮. সুষ্ঠু সামাজিকীকরণ নিশ্চিত হয়

 

আমরা সমাজবদ্ধ জীব। পরস্পরের সাথে নির্ভরশীলতার মধ্য দিয়ে আমাদের এই সমাজ গড়ে উঠেছে। কিন্তু যারা বইকুনো/ঘরকুনো প্রকৃতির হয়, তারা অনেকাংশেই সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে। ফলে তাদের সামাজিকীকরণ নিশ্চিত হয় না। দিনশেষে তারা একাকিত্বে ভোগে! কিন্তু আপনি যখন বাইরে যাবেন, নতুন নতুন পরিবেশে মিশবেন, নতুন নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হবেন, তখন আপনার সামাজিকতা অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে। ফলে আপনি আপনার কমফোর্ট জোন ভাঙতে সক্ষম হবেন!

৯. আত্মবিশ্বাস বাড়ায়

 

আমরা পরীক্ষার খাতায় যা লিখি সবই কিন্তু বই থেকে ধার করা বিদ্যা। নিজেদের কোনো অর্জিত জ্ঞান সেখানে থাকে না। ফলে মুখস্তবিদ্যায় আমরা অভ্যস্ত হয়ে পড়ি। মুখস্তবিদ্যা আমাদের আত্মবিশ্বাস সহজেই কমিয়ে ফেলে। এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিজের মাধ্যমে আমরা যে-সব জ্ঞান-অভিজ্ঞতা লাভ করি, সবই আমাদের অর্জন! এগুলো আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তোলে।

একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিজের ব্যাপারে ভ্রান্ত ধারণাগুলো দূর করার জন্য সর্বস্তরের সচেতনতা প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে সরকার নতুন একটি রূপরেখা প্রণয়নের মাধ্যমে কোনো একটি এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিজকে বাধ্যতামূলক করে দিতে পারে! তবেই তো টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব!

-হায়াত মোহাম্মাদ ইমরান আরাফাত

সম্পর্কিত প্রশ্নগুচ্ছ

0 টি ভোট
1 উত্তর 475 বার দেখা হয়েছে
0 টি ভোট
1 উত্তর 219 বার দেখা হয়েছে
+1 টি ভোট
2 টি উত্তর 369 বার দেখা হয়েছে
0 টি ভোট
3 টি উত্তর 418 বার দেখা হয়েছে

10,826 টি প্রশ্ন

18,533 টি উত্তর

4,744 টি মন্তব্য

754,915 জন সদস্য

83 জন অনলাইনে রয়েছে
30 জন সদস্য এবং 53 জন গেস্ট অনলাইনে

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত বিজ্ঞান প্রশ্নোত্তর সাইট সায়েন্স বী QnA তে আপনাকে স্বাগতম। এখানে যে কেউ প্রশ্ন, উত্তর দিতে পারে। উত্তর গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই একাধিক সোর্স যাচাই করে নিবেন। অনেকগুলো, প্রায় ২০০+ এর উপর অনুত্তরিত প্রশ্ন থাকায় নতুন প্রশ্ন না করার এবং অনুত্তরিত প্রশ্ন গুলোর উত্তর দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রতিটি উত্তরের জন্য ৪০ পয়েন্ট, যে সবচেয়ে বেশি উত্তর দিবে সে ২০০ পয়েন্ট বোনাস পাবে।


Science-bee-qna

সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ট্যাগসমূহ

মানুষ পানি ঘুম পদার্থ - জীববিজ্ঞান চোখ পৃথিবী এইচএসসি-উদ্ভিদবিজ্ঞান এইচএসসি-প্রাণীবিজ্ঞান রোগ রাসায়নিক শরীর #ask রক্ত আলো মোবাইল ক্ষতি চুল #science কী চিকিৎসা পদার্থবিজ্ঞান সূর্য প্রযুক্তি মাথা স্বাস্থ্য প্রাণী গণিত মহাকাশ বৈজ্ঞানিক পার্থক্য #biology এইচএসসি-আইসিটি বিজ্ঞান গরম খাওয়া শীতকাল #জানতে ডিম চাঁদ কেন বৃষ্টি কারণ কাজ বিদ্যুৎ রং রাত শক্তি উপকারিতা সাপ লাল আগুন গাছ মনোবিজ্ঞান খাবার সাদা মস্তিষ্ক আবিষ্কার দুধ উপায় হাত শব্দ মাছ মশা ঠাণ্ডা ব্যাথা ভয় বাতাস স্বপ্ন তাপমাত্রা গ্রহ রসায়ন কালো উদ্ভিদ পা মন কি বিস্তারিত রঙ পাখি গ্যাস সমস্যা মেয়ে বৈশিষ্ট্য বাচ্চা হলুদ বাংলাদেশ সময় ব্যথা মৃত্যু চার্জ অক্সিজেন ভাইরাস আকাশ গতি কান্না দাঁত বিড়াল আম
...