আমেরিকায় শিক্ষা, গবেষণা সবকিছু এত ব্যয়বহুল কেন ? - ScienceBee প্রশ্নোত্তর

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রশ্নোত্তর দুনিয়ায় আপনাকে স্বাগতম! প্রশ্ন-উত্তর দিয়ে জিতে নিন পুরস্কার, বিস্তারিত এখানে দেখুন।

0 টি ভোট
393 বার দেখা হয়েছে
"বাংলাদেশ ও বিশ্ব" বিভাগে করেছেন (3,220 পয়েন্ট)
Wamim Hasan Nirob এর #sbq :

আমার একটা প্রশ্ন ছিল, কিছু মানুষকে প্রায়ই এদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা কে ইউরোপ আমেরিকার শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে তুলনা করতে দেখা হয়। কিছুদিন আগে গ্রুপের এক ভাই ও করেছিল।

আমি ভেবেছিলাম আমেরিকার এক ইউনিভার্সিটি তে এপ্লাই করবো কিন্তু এসব জায়গায় ইউনিভার্সিটির যেই টিউশন ফী এবং যেই লিভিং কোস্ট সেটা বাংলাদেশের অভিজাত সন্তানেরাও হিমশিম খেয়ে যাবে স্কলারশিপ ছাড়া। প্রশ্ন টা হচ্ছে, এসব দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নত ঠিক আছে কিন্তু আমরা বাঙালী রা কজন টাকা দিয়ে এসব শিক্ষা নিতে পারবো স্কলারশিপ ছাড়া? তাদের শিক্ষা যেমন ভালো তেমন বাজেট ও তো বেশি আছে? কোয়ালিটি যেখানে ভালো হয় সেখানে টাকা টাও তো বেশি পড়ে? আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা যদি আগা থেকে মাথা ঠিক করা হয়, স্কিলড টিচারস নেওয়া হয় ভালো ল্যাব তৈরী করা হয়, রিসার্চ সেন্টার করা হয় তাহলে তো এখানে একটা বাজেট লাগবে, বেতন অনেক বেশি দিতে হবে তো তখন আমাদের পকেট থেকে কি দু পয়সা বেশি বের হবে?

3 উত্তর

0 টি ভোট
করেছেন (3,220 পয়েন্ট)

আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা কেন এত ব্যয়বহুল  ?

লিখেছেন:    সাইফুল্লাহ আল মানসুর

আমেরিকা পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী দেশ। ধনী দেশ হওয়ার সাথে সাথে আমেরিকা বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও গবেষণাতেও সবচেয়ে এগিয়ে। আমেরিকায় শিক্ষা ও গবেষণার মান খুবই উন্নত। উন্নত হওয়ার সাথে আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা খুবই ব্যয়বহুল। অন্যান্য উন্নত ও ধনী দেশের তুলনায় কমপক্ষে দ্বিগুণ ব্যয়বহুল। গড়ে একজন আমেরিকান শিক্ষার্থীকে বছরে ৩০ হাজার ডলারের অধিক ব্যয় করতে হয়। [১] যদিও আজ থেকে ৫৫ বছর আগে অবস্থা এরকম ছিলো না। ১৯৫০, ১৯৬০ এবং ১৯৭০ এর দশকে আমেরিকায় রাজ্যের বাসিন্দাদের জন্য বছরে মাত্র কয়েকশো ডলার টিউশন ফি ছিলো। এছাড়া এর আগে তা আরও কম ছিলো। ১৯৫০ এর দশকে ইউনিভার্সিটি অফ পেনসেনভেলিয়ার টিউশন ফি ছিলো মাত্র ৬০০ ডলার। এর আগে ১৯৪৪ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অংশগ্রহণকারীদের জন্য বছরে মাত্র ৫০০ ডলার টিউশন ফি ছিলো। [২] কোন রাজ্যে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ে ঐ রাজ্যের নাগরিক পড়লে তাঁকে মাত্র কয়েকশো ডলার ফি দিতে হতো। যার ফলে অনেক আমেরিকান উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছিলেন। কিন্তু এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটতে শুরু ১৯৭০ এর দশকে। এর দ্বায় ভিয়েতনাম যুদ্ধের এবং রোনাল্ড রিগ্যানের। কিন্তু কীভাবে?

⭕ ভিয়েতনাম যুদ্ধ ও রোনাল্ড রিগ্যানঃ রোনাল্ড রিগ্যান আমেরিকার ৪০ তম প্রেসিডেন্ট। যার আমলে শীতল যুদ্ধে আমেরিকা জিতছিলো। তিনি ১৯৬৭ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর ছিলেন। ১৯৬৭ সালে ভিয়েতনাম যুদ্ধ চলছিলো প্রচন্ড মাত্রায়। হাজার হাজার টন বোমা নির্বিচারে নিক্ষেপ করা হচ্ছিলো ভিয়েতনামের নিরপরাধ মানুষের ওপর। এই যুদ্ধে আমেরিকার কোন লাভ হচ্ছিলো না। শুধু লাভ হচ্ছিলো মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্সের। বিভিন্ন ডকুমেন্টস লিক হয়ে আমেরিকার মিডিয়ার হাতে এসে পড়ে। মিডিয়ায় এটা নিয়ে বড় বড় নিউজ হতে থাকে। শীঘ্রই আমেরিকার রাস্তায় মানুষ নেমে আসে যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, মিছিল, মানববন্ধন করতে থাকে। শুধু রাস্তাতেই না আমেরিকার ইউনিভার্সিটি ও কলেজের ক্যাম্পাসগুলোতেও শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদে নামে। সবকিছু খুব গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছিলেন ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর রোনাল্ড রিগ্যান। তিনি ছিলেন ভিয়েতনাম যুদ্ধের কট্টর সমর্থক। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ছাত্রদের এসব আন্দোলনকে তিনি সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পথে কাঁটা ভাবতেন। যখন তিনি নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছিলেন তখন থেকেই তিনি এসবের বিরোধিতা করছিলেন। রোনাল্ড রিগ্যান ও তাঁর সহকারীরা আমেরিকার অনেকক্ষেত্রে বিনামূল্যে ও কম খরচে উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থাকে সমস্যা মনে করতেন। তারা মনে করতেন উচ্চশিক্ষা নামমাত্র মূল্যে থাকায় দরিদ্র ও নিচু শ্রেণীর লোকেরা উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে। যার ফলে সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সমস্যা হচ্ছে। এছাড়া এরা ভবিষ্যতে বৃহৎ সমস্যা তৈরি করতে পারে। রোনাল্ড রিগ্যান ও তাঁর টিম গরীব ও নিচু শ্রেণীর আমেরিকানদের উচ্চশিক্ষা নেওয়া থেকে বিরত রাখার প্রচেষ্টা শুরু করলেন৷

১৯৬৭ সালে তাঁর সহকারী রজার ফ্রীম্যান বলেন - "আমাদের অবশ্যই বাচাই করে নিতে হবে কাদের কাদের আমরা উচ্চশিক্ষার সুযোগ দেবো। রোনাল্ড রিগ্যান ১৯৬৭ সালের ১৭ ই জানুয়ারী বলেন - "আমাদের শুধু ডলার সংকট আছে এবং এটা বিশ্বাস করা খুবই কষ্টকর যে ইউনিভার্সিটিগুলোর খরচ কমিয়ে দেওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই।" রোনাল্ড রিগ্যান বিভিন্নভাবে ইউনিভার্সিটিতে সরকারি অর্থায়ন কমিয়ে দিয়ে উচ্চশিক্ষা ব্যয়বহুল করার চেষ্টা করতে থাকেন। এই কাজে তাঁকে সাহায্য করে তৎকালীন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন। রিচার্ড নিক্সন খরচ কমিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে সম্মত হয়। রোনাল্ড রিগ্যান ইউনিভার্সিটিতে আন্দোলন বন্ধ করার জন্য ১৯৭০ সালের মে মাসে সকল ইউসি কলেজ এবং স্টেট কলেজ বন্ধ ঘোষণা করেন। [৩] এরপর ইউনিভার্সিটির খরচ কমিয়ে দেন। সেই থেকে আজ পর্যন্ত আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা ব্যয়বহুল থেকে ব্যয়বহুল হয়েই যাচ্ছে। [৪]

⭕ ট্রিলিয়ন ডলারের স্টুডেন্ট লোনঃ আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা ব্যয়বহুল হওয়ায় অধিকাংশ হাইস্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা নেয় না। এই অধিকাংশের ভিতর রয়েছে আফ্রিকান আমেরিকান, এশিয়ান আমেরিকানরা। যারা উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে তাদের অনেকেই সামর্থ্যবান পরিবারের সন্তান। যারা সামর্থ্যবান পরিবারের সন্তান নয় তারা স্টুডেন্ট লোন নিয়ে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে। এই মুহূর্ত আমেরিকার স্টুডেন্ট লোন ১.৭৭ ট্রিলিয়ন ডলারের। [৫] যা কানাডার জিডিপির প্রায় কাছাকাছি। বাইডেন এ বছরের আগষ্ট মাসে বছরে ১ লক্ষ ২৫ হাজার ডলারের কম আয়কারী স্টুডেন্টদের জন্য ২০ হাজার ডলার স্টুডেন্ট লোন মওকুফ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। [৬] [৭] যাতে মিলিয়ন মিলিয়ন সুবিধা পাবে। যাতে আমেরিকার কেন্দ্রীয় সরকারের মোট খরচ হবে ৩০০ বিলিয়ন ডলারের বেশী। তাও এটা আমেরিকার উচ্চশিক্ষা পদ্ধতিতে কোন সংস্কার করবে না।

⭕ ইউসি কলেজ এবং সিএসইউ কলেজঃ ইউসি (UC) বা University Of California হলো ক্যালিফোর্নিয়ার একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। যা আমেরিকার অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়। এর অধীনে ১০ টি কলেজ রয়েছে। এই কলেজগুলোকে ইউসি কলেজ বলা হয়। ক্যালিফোর্নিয়ার ১০ টি বড় বড় শহরে এই কলেজগুলো অবস্থিত। প্রতিটি কলেজে গড়ে ২০ হাজারের অধিক ছাত্র রয়েছে। ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়াতে ২ লক্ষ ৮০ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে, শিক্ষক এবং স্টাফ রয়েছে ২ লক্ষ ২৭ হাজার। সিএসইউ (CSU) বা California State University হলো ক্যালিফোর্নিয়ার আরও একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। তবে এটি ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার মতো নয়। ইউসি গবেষণার জন্য বিখ্যাত। অন্যদিকে সিএসইউ গ্র্যাজুয়েটদের বিভিন্ন স্কিল শেখানোর জন্য বেশি বিখ্যাত। ক্যালিফোর্নিয়ার ছোট বড় ২৩ টি শহরে সিএসইউ এর ২৩ টি কলেজ রয়েছে। যেগুলোকে সিএসইউ কলেজ বলা হয়। ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ৪ লক্ষ ৭৭ হাজার ছাত্র রয়েছে, শিক্ষক এবং স্টাফ রয়েছে ৫৬ হাজার। [৮]

⭕ আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা ব্যয়বহুল হওয়ার আরও একটি কারণঃ আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা ব্যয়বহুল হওয়ার কারণে অনেক শিক্ষার্থী হাইস্কুল পাশ করে চাকরিতে যোগদান করে। অনেক শিক্ষার্থী আমেরিকার সেনাবাহিনীতেও যায়। সেনেটর জিম ব্যাংকস টুইট করে বলেন "স্টুডেন্ট লোন মওকুফ করা, আমাদের সেনাবাহিনীর বৃহৎ নিয়োগ প্রক্রিয়াকে বাঁধাগ্রস্ত করবে।" যেসব ছেলেরা উচ্চশিক্ষা নেয় না তাদের অনেকেই সেনাবাহিনীতে যোগদেয়। যদি উচ্চশিক্ষা সহজলভ্য হয় স্টুডেন্ট লোন মওকুফ করার মতো বিভিন্ন পদক্ষেপে তাহলে আমেরিকান যুবকরা সেনাবাহিনীতে খুব বেশি যোগ দেবে না। তারা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে উচ্চ বেতনের চাকরি করবে। যা আমেরিকার মতো সুপার পাওয়ার কখনোই চাইবে না। সব মিলিয়ে আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা অত্যন্ত ব্যয়বহুল।

[সমাপ্ত]

[কমেন্টে জানান কেমন লাগলো আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা কেন এত ব্যয়বহুল?]

তথ্যসূত্রঃ

১। Undergraduate Tuition Fees in the U.S. per State in 2023 - Masters Portal
২। Putting the Rising Cost of College in Perspective - Time - August 31, 2016.
৩। Reagan Closes Campus System in Face of Disorders - The New York Times - May 6, 1970.
৪। Why Is American College So Expensive? - Second Thought - September 16, 2022.
৫। Student Loan Debt: 2022 Statistics and Outlook - Investopedia.
৬। The Biden-Harris Administration's Student Debt Relief Plan Explained - studentaid.gov
৭। Biden announces student loan relief for borrowers making less than $125,000 - CNN - August 24, 2022.
৮। UC vs CSU: What’s the Difference? Which Is Better? - Prep Scholar - 2 November, 2022.

0 টি ভোট
করেছেন (3,220 পয়েন্ট)

আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা কেন এত ব্যয়বহুল  ?

লিখেছেন:    সাইফুল্লাহ আল মানসুর

আমেরিকা পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী দেশ। ধনী দেশ হওয়ার সাথে সাথে আমেরিকা বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও গবেষণাতেও সবচেয়ে এগিয়ে। আমেরিকায় শিক্ষা ও গবেষণার মান খুবই উন্নত। উন্নত হওয়ার সাথে আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা খুবই ব্যয়বহুল। অন্যান্য উন্নত ও ধনী দেশের তুলনায় কমপক্ষে দ্বিগুণ ব্যয়বহুল। গড়ে একজন আমেরিকান শিক্ষার্থীকে বছরে ৩০ হাজার ডলারের অধিক ব্যয় করতে হয়। [১] যদিও আজ থেকে ৫৫ বছর আগে অবস্থা এরকম ছিলো না। ১৯৫০, ১৯৬০ এবং ১৯৭০ এর দশকে আমেরিকায় রাজ্যের বাসিন্দাদের জন্য বছরে মাত্র কয়েকশো ডলার টিউশন ফি ছিলো। এছাড়া এর আগে তা আরও কম ছিলো। ১৯৫০ এর দশকে ইউনিভার্সিটি অফ পেনসেনভেলিয়ার টিউশন ফি ছিলো মাত্র ৬০০ ডলার। এর আগে ১৯৪৪ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অংশগ্রহণকারীদের জন্য বছরে মাত্র ৫০০ ডলার টিউশন ফি ছিলো। [২] কোন রাজ্যে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ে ঐ রাজ্যের নাগরিক পড়লে তাঁকে মাত্র কয়েকশো ডলার ফি দিতে হতো। যার ফলে অনেক আমেরিকান উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছিলেন। কিন্তু এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটতে শুরু ১৯৭০ এর দশকে। এর দ্বায় ভিয়েতনাম যুদ্ধের এবং রোনাল্ড রিগ্যানের। কিন্তু কীভাবে?

⭕ ভিয়েতনাম যুদ্ধ ও রোনাল্ড রিগ্যানঃ রোনাল্ড রিগ্যান আমেরিকার ৪০ তম প্রেসিডেন্ট। যার আমলে শীতল যুদ্ধে আমেরিকা জিতছিলো। তিনি ১৯৬৭ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর ছিলেন। ১৯৬৭ সালে ভিয়েতনাম যুদ্ধ চলছিলো প্রচন্ড মাত্রায়। হাজার হাজার টন বোমা নির্বিচারে নিক্ষেপ করা হচ্ছিলো ভিয়েতনামের নিরপরাধ মানুষের ওপর। এই যুদ্ধে আমেরিকার কোন লাভ হচ্ছিলো না। শুধু লাভ হচ্ছিলো মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্সের। বিভিন্ন ডকুমেন্টস লিক হয়ে আমেরিকার মিডিয়ার হাতে এসে পড়ে। মিডিয়ায় এটা নিয়ে বড় বড় নিউজ হতে থাকে। শীঘ্রই আমেরিকার রাস্তায় মানুষ নেমে আসে যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, মিছিল, মানববন্ধন করতে থাকে। শুধু রাস্তাতেই না আমেরিকার ইউনিভার্সিটি ও কলেজের ক্যাম্পাসগুলোতেও শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদে নামে। সবকিছু খুব গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছিলেন ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর রোনাল্ড রিগ্যান। তিনি ছিলেন ভিয়েতনাম যুদ্ধের কট্টর সমর্থক। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ছাত্রদের এসব আন্দোলনকে তিনি সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পথে কাঁটা ভাবতেন। যখন তিনি নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছিলেন তখন থেকেই তিনি এসবের বিরোধিতা করছিলেন। রোনাল্ড রিগ্যান ও তাঁর সহকারীরা আমেরিকার অনেকক্ষেত্রে বিনামূল্যে ও কম খরচে উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থাকে সমস্যা মনে করতেন। তারা মনে করতেন উচ্চশিক্ষা নামমাত্র মূল্যে থাকায় দরিদ্র ও নিচু শ্রেণীর লোকেরা উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে। যার ফলে সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সমস্যা হচ্ছে। এছাড়া এরা ভবিষ্যতে বৃহৎ সমস্যা তৈরি করতে পারে। রোনাল্ড রিগ্যান ও তাঁর টিম গরীব ও নিচু শ্রেণীর আমেরিকানদের উচ্চশিক্ষা নেওয়া থেকে বিরত রাখার প্রচেষ্টা শুরু করলেন৷

১৯৬৭ সালে তাঁর সহকারী রজার ফ্রীম্যান বলেন - "আমাদের অবশ্যই বাচাই করে নিতে হবে কাদের কাদের আমরা উচ্চশিক্ষার সুযোগ দেবো। রোনাল্ড রিগ্যান ১৯৬৭ সালের ১৭ ই জানুয়ারী বলেন - "আমাদের শুধু ডলার সংকট আছে এবং এটা বিশ্বাস করা খুবই কষ্টকর যে ইউনিভার্সিটিগুলোর খরচ কমিয়ে দেওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই।" রোনাল্ড রিগ্যান বিভিন্নভাবে ইউনিভার্সিটিতে সরকারি অর্থায়ন কমিয়ে দিয়ে উচ্চশিক্ষা ব্যয়বহুল করার চেষ্টা করতে থাকেন। এই কাজে তাঁকে সাহায্য করে তৎকালীন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন। রিচার্ড নিক্সন খরচ কমিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে সম্মত হয়। রোনাল্ড রিগ্যান ইউনিভার্সিটিতে আন্দোলন বন্ধ করার জন্য ১৯৭০ সালের মে মাসে সকল ইউসি কলেজ এবং স্টেট কলেজ বন্ধ ঘোষণা করেন। [৩] এরপর ইউনিভার্সিটির খরচ কমিয়ে দেন। সেই থেকে আজ পর্যন্ত আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা ব্যয়বহুল থেকে ব্যয়বহুল হয়েই যাচ্ছে। [৪]

⭕ ট্রিলিয়ন ডলারের স্টুডেন্ট লোনঃ আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা ব্যয়বহুল হওয়ায় অধিকাংশ হাইস্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা নেয় না। এই অধিকাংশের ভিতর রয়েছে আফ্রিকান আমেরিকান, এশিয়ান আমেরিকানরা। যারা উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে তাদের অনেকেই সামর্থ্যবান পরিবারের সন্তান। যারা সামর্থ্যবান পরিবারের সন্তান নয় তারা স্টুডেন্ট লোন নিয়ে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে। এই মুহূর্ত আমেরিকার স্টুডেন্ট লোন ১.৭৭ ট্রিলিয়ন ডলারের। [৫] যা কানাডার জিডিপির প্রায় কাছাকাছি। বাইডেন এ বছরের আগষ্ট মাসে বছরে ১ লক্ষ ২৫ হাজার ডলারের কম আয়কারী স্টুডেন্টদের জন্য ২০ হাজার ডলার স্টুডেন্ট লোন মওকুফ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। [৬] [৭] যাতে মিলিয়ন মিলিয়ন সুবিধা পাবে। যাতে আমেরিকার কেন্দ্রীয় সরকারের মোট খরচ হবে ৩০০ বিলিয়ন ডলারের বেশী। তাও এটা আমেরিকার উচ্চশিক্ষা পদ্ধতিতে কোন সংস্কার করবে না।

⭕ ইউসি কলেজ এবং সিএসইউ কলেজঃ ইউসি (UC) বা University Of California হলো ক্যালিফোর্নিয়ার একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। যা আমেরিকার অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়। এর অধীনে ১০ টি কলেজ রয়েছে। এই কলেজগুলোকে ইউসি কলেজ বলা হয়। ক্যালিফোর্নিয়ার ১০ টি বড় বড় শহরে এই কলেজগুলো অবস্থিত। প্রতিটি কলেজে গড়ে ২০ হাজারের অধিক ছাত্র রয়েছে। ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়াতে ২ লক্ষ ৮০ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে, শিক্ষক এবং স্টাফ রয়েছে ২ লক্ষ ২৭ হাজার। সিএসইউ (CSU) বা California State University হলো ক্যালিফোর্নিয়ার আরও একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। তবে এটি ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার মতো নয়। ইউসি গবেষণার জন্য বিখ্যাত। অন্যদিকে সিএসইউ গ্র্যাজুয়েটদের বিভিন্ন স্কিল শেখানোর জন্য বেশি বিখ্যাত। ক্যালিফোর্নিয়ার ছোট বড় ২৩ টি শহরে সিএসইউ এর ২৩ টি কলেজ রয়েছে। যেগুলোকে সিএসইউ কলেজ বলা হয়। ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ৪ লক্ষ ৭৭ হাজার ছাত্র রয়েছে, শিক্ষক এবং স্টাফ রয়েছে ৫৬ হাজার। [৮]

⭕ আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা ব্যয়বহুল হওয়ার আরও একটি কারণঃ আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা ব্যয়বহুল হওয়ার কারণে অনেক শিক্ষার্থী হাইস্কুল পাশ করে চাকরিতে যোগদান করে। অনেক শিক্ষার্থী আমেরিকার সেনাবাহিনীতেও যায়। সেনেটর জিম ব্যাংকস টুইট করে বলেন "স্টুডেন্ট লোন মওকুফ করা, আমাদের সেনাবাহিনীর বৃহৎ নিয়োগ প্রক্রিয়াকে বাঁধাগ্রস্ত করবে।" যেসব ছেলেরা উচ্চশিক্ষা নেয় না তাদের অনেকেই সেনাবাহিনীতে যোগদেয়। যদি উচ্চশিক্ষা সহজলভ্য হয় স্টুডেন্ট লোন মওকুফ করার মতো বিভিন্ন পদক্ষেপে তাহলে আমেরিকান যুবকরা সেনাবাহিনীতে খুব বেশি যোগ দেবে না। তারা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে উচ্চ বেতনের চাকরি করবে। যা আমেরিকার মতো সুপার পাওয়ার কখনোই চাইবে না। সব মিলিয়ে আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা অত্যন্ত ব্যয়বহুল।

[সমাপ্ত]

তথ্যসূত্রঃ

১। Undergraduate Tuition Fees in the U.S. per State in 2023 - Masters Portal
২। Putting the Rising Cost of College in Perspective - Time - August 31, 2016.
৩। Reagan Closes Campus System in Face of Disorders - The New York Times - May 6, 1970.
৪। Why Is American College So Expensive? - Second Thought - September 16, 2022.
৫। Student Loan Debt: 2022 Statistics and Outlook - Investopedia.
৬। The Biden-Harris Administration's Student Debt Relief Plan Explained - studentaid.gov
৭। Biden announces student loan relief for borrowers making less than $125,000 - CNN - August 24, 2022.
৮। UC vs CSU: What’s the Difference? Which Is Better? - Prep Scholar - 2 November, 2022.

0 টি ভোট
করেছেন (5,600 পয়েন্ট)

 

আমেরিকায় শিক্ষা, গবেষণা এত ব্যয়বহুল হওয়ার বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে।

  • শিক্ষা ব্যয়: আমেরিকায় শিক্ষা ব্যয় বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি। এর কারণ হল আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়গুলি তাদের শিক্ষার্থীদের উচ্চমানের শিক্ষা প্রদানের জন্য ব্যয়বহুল শিক্ষক, সুযোগ-সুবিধা এবং গবেষণা সুবিধা সরবরাহ করে।
  • গবেষণা ব্যয়: আমেরিকা বিশ্বের গবেষণার কেন্দ্র। আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়গুলি এবং সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলি প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ অর্থ গবেষণায় ব্যয় করে। এই ব্যয়ের মধ্যে রয়েছে গবেষকদের বেতন, গবেষণা সরঞ্জাম এবং সুযোগ-সুবিধা।
  • অর্থনীতি: আমেরিকা একটি উচ্চ-আয়ের দেশ। এর অর্থ হল আমেরিকানরা অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি অর্থ ব্যয় করতে পারে। এই অতিরিক্ত আয় শিক্ষা এবং গবেষণার জন্য ব্যয় করা হয়।

শিক্ষা এবং গবেষণার ব্যয় বৃদ্ধির বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে:

  • শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি: আমেরিকান শিক্ষকদের বেতন বিশ্বের অন্যতম বেশি। এই বেতন বৃদ্ধি শিক্ষা ব্যয় বাড়ায়।
  • সুযোগ-সুবিধার ব্যয় বৃদ্ধি: আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়গুলি তাদের শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে। এই সুযোগ-সুবিধার মধ্যে রয়েছে আবাসিক হল, ক্যাফেটেরিয়া, ক্রীড়া সুবিধা এবং স্বাস্থ্যসেবা। এই সুযোগ-সুবিধার ব্যয় শিক্ষা ব্যয় বাড়ায়।
  • গবেষণা সরঞ্জাম এবং সুযোগ-সুবিধার ব্যয় বৃদ্ধি: গবেষণা সরঞ্জাম এবং সুযোগ-সুবিধাগুলি ক্রমাগত উন্নতি হচ্ছে। এই উন্নতির ফলে গবেষণার ব্যয় বাড়ছে।

শিক্ষা এবং গবেষণার ব্যয় বৃদ্ধি একটি উদ্বেগের বিষয়। এটি শিক্ষার অ্যাক্সেসকে সীমিত করতে পারে এবং গবেষণার জন্য অর্থের পরিমাণ হ্রাস করতে পারে। এই ব্যয় বৃদ্ধির কারণগুলি বোঝা এবং এটি কীভাবে পরিচালনা করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করা গুরুত্বপূর্ণ।

সম্পর্কিত প্রশ্নগুচ্ছ

0 টি ভোট
1 উত্তর 263 বার দেখা হয়েছে
0 টি ভোট
1 উত্তর 1,066 বার দেখা হয়েছে
13 জুলাই 2022 "বাংলাদেশ ও বিশ্ব" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন SH Sakib (160 পয়েন্ট)
0 টি ভোট
1 উত্তর 1,031 বার দেখা হয়েছে

10,776 টি প্রশ্ন

18,469 টি উত্তর

4,743 টি মন্তব্য

272,583 জন সদস্য

59 জন অনলাইনে রয়েছে
2 জন সদস্য এবং 57 জন গেস্ট অনলাইনে
  1. Shariar Rafi

    420 পয়েন্ট

  2. Tazriyan

    190 পয়েন্ট

  3. Shourov Viperr

    110 পয়েন্ট

  4. Khandoker Farhan

    110 পয়েন্ট

  5. Eyasin

    110 পয়েন্ট

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত বিজ্ঞান প্রশ্নোত্তর সাইট সায়েন্স বী QnA তে আপনাকে স্বাগতম। এখানে যে কেউ প্রশ্ন, উত্তর দিতে পারে। উত্তর গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই একাধিক সোর্স যাচাই করে নিবেন। অনেকগুলো, প্রায় ২০০+ এর উপর অনুত্তরিত প্রশ্ন থাকায় নতুন প্রশ্ন না করার এবং অনুত্তরিত প্রশ্ন গুলোর উত্তর দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রতিটি উত্তরের জন্য ৪০ পয়েন্ট, যে সবচেয়ে বেশি উত্তর দিবে সে ২০০ পয়েন্ট বোনাস পাবে।


Science-bee-qna

সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ট্যাগসমূহ

মানুষ পানি ঘুম পদার্থ - জীববিজ্ঞান চোখ এইচএসসি-উদ্ভিদবিজ্ঞান এইচএসসি-প্রাণীবিজ্ঞান পৃথিবী রোগ রাসায়নিক শরীর #ask রক্ত আলো মোবাইল ক্ষতি চুল কী #science চিকিৎসা পদার্থবিজ্ঞান সূর্য প্রযুক্তি স্বাস্থ্য মাথা প্রাণী গণিত বৈজ্ঞানিক মহাকাশ পার্থক্য #biology এইচএসসি-আইসিটি বিজ্ঞান খাওয়া গরম শীতকাল #জানতে কেন ডিম চাঁদ বৃষ্টি কারণ কাজ বিদ্যুৎ রাত রং উপকারিতা শক্তি লাল আগুন সাপ মনোবিজ্ঞান গাছ খাবার সাদা আবিষ্কার দুধ উপায় হাত মশা শব্দ মাছ ঠাণ্ডা মস্তিষ্ক ব্যাথা ভয় বাতাস স্বপ্ন তাপমাত্রা গ্রহ রসায়ন উদ্ভিদ কালো পা কি বিস্তারিত রঙ মন পাখি গ্যাস সমস্যা মেয়ে বৈশিষ্ট্য হলুদ বাচ্চা সময় ব্যথা মৃত্যু চার্জ অক্সিজেন ভাইরাস আকাশ গতি দাঁত কান্না আম হরমোন বাংলাদেশ
...