নিউটনের গতিসূত্রানুযায়ী যেকোনো গতিশীল বস্তু বাঁধাপ্রাপ্ত না হলে সেটি সরলরেখা বরাবরই চলা উচিৎ । তবে তরঙ্গ এমন বেয়াদপি করে কেন ?
সত্যি কথা , এমন এঁকেবেঁকে গিয়ে তরঙ্গ তো পুরো নিউটনের সূত্রকেই ব্যর্থ করে দিল ।
আসলে তরঙ্গ কিন্তু অনৈতিক কাজ করেনি।
কারণ তার ক্ষেত্রে নিউটনের সূত্র আরোপিত হবেই না তবে আর বেনিয়ম করার কথা আসছে কোথা থেকে ?
আমি জানি এই কথাটা শুনে আপনাদের ভ্রুটা একটু কুঁচকে যাবে । তাই ভনিতা ছেড়ে আসল কথাটা বলেই ফেলি । তরঙ্গ কখনো এক স্থান থেকে অন্য স্থানে অগ্রসর হয় না কোন বস্তুকণার মতো । কথাটা শুনে বিশ্বাস করতে একটু অসুবিধা হচ্ছে তাই না ?
তবে ভাবুন একটা লাফদড়ি নিয়ে আপনি আর আপনার বন্ধু খেলা করছেন । একপ্রান্ত আপনি ধরেছেন আর অন্যপ্রান্ত আপনার বন্ধু । এমতাবস্থায় আপনি লাফদড়ির মাঝখানে একটা লাল রং এর সেলুটেপ আটকে দিয়েছেন । আপনি কী খেলার সময় সেলুটেপটাকে এগিয়ে যেতে দেখবেন ? বরং সেলুটাপটা এক জায়গায় থেকেই উপর নীচে ওঠানামা করবে । সুতরাং সেলুটেপের যা চলন সেটা ওপর -নীচেই সীমাবদ্ধ।
এবার ভাবুন জলের মধ্যে আপনি একটা ঢিল ছুঁড়ে মারলেন। এরফলে জলের মধ্যে তরঙ্গের উদ্ভব হয় । সেটিও তো এক জায়গায় থেকেই উপর -নীচে ওঠানামা করে শুধু ।
যেকোনো তরঙ্গের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে। আসলে তরঙ্গ হল চলমান এক বা একাধিক পরিমাপের পরিবর্তন (সাম্যতা থেকে ) । যেমন - শব্দতরঙ্গের ক্ষেত্রে একটি কণায় পীড়নের ফলে তার স্থানচ্যুতি ঘটে এবং সেটি পাশ্ববর্তী কণায় সেই পীড়নকে স্থানান্তরিত করে এভাবে শব্দ প্রবাহিত হয়।
তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গের ক্ষেত্রে ম্যাক্সওয়েল সমীকরণ অনুযায়ী, তড়িৎক্ষেত্র এবং চুম্বকক্ষেত্রের পরিবর্তনের মাধ্যমে এই তরঙ্গ অগ্রসর হয়।
তাই সেই অর্থে তরঙ্গের অগ্রগতি হয় না এবং আমরা যে তরঙ্গ দেখি সেটা মূলত চলমান পরিবর্তনকেই প্রকাশ করে । এটাই বস্তুকণা আর তরঙ্গের মধ্যে পার্থক্য।