দরজার কপাট যেমন ঘরের ভেতরে বা বাইরে মানুষের যাওয়া আসা নিয়ন্ত্রণ করে তেমনি ভাবে হৃদপিণ্ডের কপাটিকা বা ভাল্ব হৃদপিণ্ডের রক্ত সঞ্চালন নিয়ন্ত্রণ করে। এক কথায় কপাটিকাকে হৃদপিন্ডের বিশেষ একরকম দরজা বলা যায় যেটি দিয়ে রক্ত কেবল ঢুকতে পারবে কিন্তু উল্টো দিকে ফিরে আসতে পারবে না ।
হৃদপিণ্ড ৪ টি প্রকোষ্ঠ নিয়ে গঠিত। উপরের প্রকোষ্ঠ দুটিকে ডান ও বাম অলিন্দ এবং নিচের প্রকোষ্ঠ দুটিকে ডান ও বাম নিলয় বলে।
চিত্রঃ গুগল হতে সংগৃহীত।
হৃৎপিণ্ডের উভয় অলিন্দ এবং নিলয়ের মাঝে যে ছিদ্রপথ আছে , তা খােলা বা বন্ধ করার জন্য ভালভ ( valve ) বা কপাটিকা থাকে । ডান অলিন্দ এবং ডান নিলয়ের মধ্যবর্তী ছিদ্রপথ তিন পাল্লাবিশিষ্ট ট্রাইকাসপিড ভালভ দিয়ে সুরক্ষিত । একইভাবে বাম অলিন্দ এবং বাম নিলয় দুই পাল্লাবিশিষ্ট বাইকাসপিড ভালভ ( মাইট্রাল ভালভ নামেও পরিচিত ) দিয়ে সুরক্ষিত থাকে । মহাধমনি ও ফুসফুসীয় ধমনির মখে অর্ধচন্দ্রাকার কপাটিকা থাকে । এদের অবস্থানের ফলে পাম্প করা রক্ত একই দিকে চলে এবং এক ফোঁটা রক্তও উল্টো দিকে ফিরে আসতে পারে না ।
অলিন্দ দুটি প্রসারিত হলে কার্বন ডাই - অক্সাইড যুক্ত রক্ত ডান অলিন্দে প্রবেশ করে । অন্যদিক অক্সিজেন যুক্ত রক্ত বাম অলিন্দে প্রবেশ করে ।
অলিন্দ দুটির সংকোচন হলে নিলয় দুটির পেশি প্রসারিত হয় । তখন ডান অলিন্দ - নিলয়ের ছিদ্রপথের ট্রাইকাসপিড ভালভ খুলে যায় এবং ডান অলিন্দ থেকে কার্বন ডাই - অক্সাইড যুক্ত রক্ত ডান নিলয়ে প্রবেশ করে । ঠিক এই সময়ে বাম অলিন্দ এবং বাম নিলয়ের বাইকাসপিড ভালভ খুলে যায় তখন বাম অলিন্দ থেকে অক্সিজেন যুক্ত রক্ত বাম নিলয়ে প্রবেশ করে । এর পরপরই ছিদ্রগুলাে কপাটিকা দিয়ে বন্ধ হয়ে যায় । এর ফলে নিলয় থেকে রক্ত আর অলিন্দে প্রবেশ করতে পারে না ।
যখন নিলয় দুটি সংকুচিত হয় , তখন ডান নিলয় থেকে কার্বন ডাই - অক্সাইডযুক্ত রক্ত ফুসফুসে প্রবেশ করে । এখানে রক্ত পরিশােধিত হয় । ঠিক একই সময়ে বাম নিলয় থেকে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত ধমনীর মাধ্যমে সারা দেহে পরিবাহিত হয় এবং উভয় ধমনির অর্ধচন্দ্রাকৃতির কপটিকাগুলাে বন্ধ হয়ে যায় । ফলে রক্ত পুনরায় নিলয়ে ফিরে আসতে পারে না ।এভাবে হৃদপিণ্ডে পর্যায়ক্রমিক সংকোচন এবং প্রসারণের মাধ্যমে আমাদের সারাদেহে রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া চলতে থাকে।
তথ্য সূত্রঃ নবম - দশম শ্রেণির জীববিজ্ঞান বই।