সুয়েজ খাল কেন গুরুত্বপূর্ণ? - ScienceBee প্রশ্নোত্তর

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রশ্নোত্তর দুনিয়ায় আপনাকে স্বাগতম! প্রশ্ন-উত্তর দিয়ে জিতে নিন পুরস্কার, বিস্তারিত এখানে দেখুন।

0 টি ভোট
793 বার দেখা হয়েছে
"বাংলাদেশ ও বিশ্ব" বিভাগে করেছেন (2,760 পয়েন্ট)

2 উত্তর

0 টি ভোট
করেছেন (2,760 পয়েন্ট)
 
সর্বোত্তম উত্তর

 

সুয়েজ খালের ইতিহাস ও ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব

সুয়েজ খালকে বিশ্ব বাণিজ্যের ধমনী বলা হয়। ১৯৩.৩০ কিলোমিটার লম্বা এই খাল সিনাই উপদ্বীপ থেকে আফ্রিকার মূল ভূমিকে পৃথক করেছে। লোহিত সাগর ও ভূমধ্যসাগরকে যুক্ত করার মধ্য দিয়ে এই খাল এশিয়ার সাথে ইউরোপ ও আমেরিকার বাণিজ্য সহজ করেছে। এই খাল চালুর পূর্বে ইউরোপ থেকে এশিয়ার দেশগুলোর সাথে যোগাযোগে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হত। আফ্রিকার নিচে উত্তমাশা অন্তরীপ দিয়ে ভারত মহাসাগরে প্রবেশ করতে হতো৷

সুয়েজকে ঘিরে রয়েছে সুদীর্ঘ ইতিহাস। ভূ-কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই খাল নিয়ে অতীতে যেমন ব্যাপক আলোচনা ছুটেছে, সামনের দিনেও চলবে এটা নিশ্চিত। অনেকেই এই খালের বিকল্প পথ নিয়েও কথা বলছেন। বিকল্প পথ তৈরি হয়ে গেলে অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক উভয় ক্ষেত্রে ক্ষতির মুখে পড়বে মিসর।

সুয়েজ খাল কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?

১৮৬৯ সালে চালু হওয়া এই খালের মধ্য দিয়ে বিশ্ব বাণিজ্যের ১২ ভাগ পরিচালিত হয়। সাগরকেন্দ্রিক তেল বাণিজ্যের ১০ ভাগ ও তরল প্রাকৃতিক গ্যাস রফতানির ৮ ভাগ এই খাল দিয়েই হয়ে থাকে।

সুয়েজ খাল কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্য মতে ২০২০ সালে এই খাল দিয়ে প্রায় ১৯০০০ জাহাজ পাড়ি দিয়েছে। প্রতিদিন প্রায় ৫১টি জাহাজ এই খাল পাড়ি দেয়। এই খাল থেকে মিসর অর্থনৈতিকভাবে উপকৃত হয়। ২০২০ সালে মিসর এই খাল থেকে ৫.৬১ বিলিয়ন ডলারের রাজস্ব আদায় করেছে।

সম্প্রতি এভার গিভেন নামক একটি জাহাজ আটকে যাওয়ার ঘটনায় সুয়েজ খাল নিয়ে আলোচনা নতুন করে সামনে এসেছে। বিশ্ব বাণিজ্যের প্রধান এই পথ এক সপ্তাহ বন্ধ থাকায় মিসর ৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার হারিয়েছে।

খাল বন্ধ থাকায় বিশ্ব বাণিজ্যে ৬০০ থেকে ১০০০ কোটি ডলার ক্ষতি হতে পারে বলে এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে। বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান মুডি'স জানিয়েছিল খাল বন্ধ থাকায় বিশ্ব বাণিজ্যের ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ক্ষতি হতে পারে। খাল বন্ধ থাকায় জ্বালানি তেলের দাম ৬ শতাংশ বেড়ে গিয়েছিল।

সুয়েজ খাল খননের ইতিহাস
সুয়েজ খাল প্রতিষ্ঠার ইতিহাস বহু পুরানো। প্রাচীন ফারাও রাজা থেকে শুরু করে রোমান ও পারস্য সম্রাটরাও এই খাল খননের ইতিহাসের সাথে জড়িয়ে আছেন। কথিত আছে, বিখ্যাত ক্লিওপেট্রাও এই খালে ভ্রমণ করেছেন। ক্ষুদ্র পরিসরে বহু আগেই এই খাল খনন করা হয়েছিল। পলি জমে ভরাট হয়ে যাওয়ার বারবার খনন ও পূরণের খেলা চলেছে। সর্বশেষ উসমানীয় শাসনামলে এসে সুয়েজ খাল পূর্ণরূপে বিকশিত হয়৷

খ্রিস্টপূর্ব ১৮৮৭-৮৯ অব্দে ফারাও তৃতীয় সেনুস্রেতের সময়ে লোহিত সাগর ও ভূমধ্যসাগরের সংযোগ সাধনে প্রথম খাল খনন করা হয়। ফারাওদের খাল নামে পরিচিত এই খাল মূলত সুয়েজ উপসাগরের সাথে নীল নদের শাখানদীগুলোর সংযোগ ঘটিয়েছিল। এরপর আলেকজান্ডারের উত্তরসূরী প্লটলেমিস ফারাওদের খাল গ্রেট বিটার লেকের মধ্য দিয়ে প্রসারিত করেন৷ ফলে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চল ও রোমের মধ্য বাণিজ্যের উন্নতি সাধিত হয়। তবে এই খাল প্রায় পলি জমে ভরাট হয়ে যেত।

টলেমীয় ফারাওরা ও পারস্যের সম্রাট দারিয়ুস দ্য গ্রেট এই খাল সংস্কারে কাজ করেন। বিশেষ করে টলেমীয় শাসনামলে এই খাল সমৃদ্ধ হয় ও আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়। রোমান সম্রাট ট্রাজান এই খাল সংস্কারে কাজ করেন। তখন এই খাল ট্রাজান খাল নাম পরিচিত ছিল। রোমান সভ্যতার পতন হলে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য এই খালকে অগ্রাহ্য করে। তখন হান আক্রমণ মোকাবেলা করতেই তারা ব্যস্ত ছিল। প্রাচীন আরবদের দ্বারা পুনরায় এই খাল চালু হয়। আব্বাসীয় শাসনামলে খালটি সামরিক প্রয়োজনে পূরণ করা হয়।

১৭৯৮ সালে নেপোলিয়ান মিসর দখল করেন। তিনি খাল খননের সম্ভাব্যতা যাচাই করতে বিশেষজ্ঞ দল পাঠান। দলটি জানায়, লোহিত ও ভূমধ্যসাগরের উচ্চতার তারতম্যের দরুণ খাল খনন সম্ভব নয়। খাল খনন করা হলে পার্শ্ববর্তী অঞ্চল বন্যায় ডুবে যেতে পারে। নেপোলিয়ান পরিকল্পনা বাতিল করেন।

উনিশ শতকে মিসর উসমানীয়দের অধীনে আসে। ওই সময় মিসরের শাসককে খেদিভ বলা হতো। খেদিভের অনুমতি নিয়ে ফ্রান্সের ফার্ডিনান্ড ডি লেসেপস সুয়েজ খাল কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে খাল খনন শুরু করেন। ১৮৫৯ সালে খনন কাজ শুরু হয়। লেসপস ৯৯ বছরের বছরের জন্য খাল নিয়ন্ত্রণের চুক্তিও করে নেয়। মজার বিষয় হলো লেসেপস সুয়েজ খাল খননে সফল হলেও পানামা খাল খননে ব্যর্থ হয়েছেন।

এখানে ফ্রান্সের শেয়ারের পরিমাণ ছিল ৫২ ভাগ আর মিসরের ছিল ৪২%। ১৮৬৯ সালে খাল খুলে দেয়া হয়। ১৮৭৫ সালে খেদিভ ইসমাইল পাশা আর্থিক সংকটে পতিত হলে স্বল্পদামে ব্রিটেন খালের শেয়ার কিনে নেয়। ১৮৭৬ সালে ফ্রান্স ও ব্রিটেন যৌথভাবে খালের নিয়ন্ত্রণভার লাভ করে। ১৮৮২ সালে অ্যাংলো-মিসরীয় যুদ্ধ শুরু হয় এবং ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধিভুক্ত হয় মিসর। বিশাল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বাণিজ্য ও সামরিক স্বার্থে এই খালের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম।

১৮৮৮ সালে প্রধান সামরিক শক্তিগুলোর মধ্যে Convention of Constantinpole স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুসারে এইপথে সব দেশের জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়। খাল পাড়ের আশেপাশে দুর্গ ও পরিখা খনন নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু এই চুক্তিতে ব্রিটেন ১৯০৪ সাল পর্যন্ত স্বাক্ষর করেনি। ইসমাইল পাশার শেয়ার ব্রিক্রির ফলে সুয়েজ খাল মিসর ভূখণ্ডে হলেও এখানে তারা নিষ্ক্রিয় দর্শক হয়ে যায়। ১৯২২ সালে মিসর স্বাধীনতা লাভ করে৷ ১৯৩৬ সালের চুক্তিবলে ব্রিটিশরা সুয়েজ খালে সামরিক অবস্থান ধরে রাখার অধিকার লাভ করে। ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত এখানে ব্রিটেনের সেনা মোতায়েন ছিল।

১৯৪৯ সালে লভ্যাংশের ৭ ভাগ বরাদ্দ মিসরকে দেয়া হয়। কারগির কাজের লোক নিয়োগে শতকরা ৮০ ভাগ ও ক্লার্ক নিয়োগে শতকরা ৯০ ভাগ মিসরীয়দের জনগণের জন্য নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়। এর মাধ্যমে পুনরায় খাল পরিচালনায় মিসরীয়দের আগমন ঘটে। ১৯৪৯ সালে ইসরাইলের সাথে আরব দেশগুলোর চুক্তি হলে মিসর ইসরাইলকে এই খাল ব্যবহার করার অনুমতি দিতে অস্বীকার করে। ১৯৫২ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে মিসরের ক্ষমতায় আসেন গামাল আবদেল নাসের। সুয়েজকে ঘিরে বিশ্ব রাজনীতি নতুন পথে চলতে শুরু করে।

সুয়েজ সংকট
মিসরের প্রেসিডেন্ট গামাল আবদেল নাসের আসওয়ান বাঁধ নির্মাণের তহবিল সংগ্রহে সুয়েজ খালকে জাতীয়করণ করলে সংকটের সৃষ্টি হয় যা সুয়েজ সংকট নামে পরিচিত। ১৯৫০ সালে ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্র আসওয়ান বাঁধ নির্মাণে মিসরকে ঋণ দিতে রাজি হয়েছিল। চুক্তির শর্ত মনঃপুত না হওয়ায় মিসর এই চুক্তি প্রত্যাখান করে।

লেসপসের সাথে করা ৯৯ বছরব্যাপী চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে ১৯৫৬ সালের ২৬ জুলাই মিসর সুয়েজ খাল জাতীয়করণ করে। অন্য দিকে আকাবা উপসাগরে তিরানা প্রণালী বন্ধ করে দেয়। নাসেরের সাহসী পদক্ষেপ তাকে জনপ্রিয় করে তোলে। নাসেরের জনপ্রিয়তায় ক্ষিপ্ত হয়ে চার্চিল মন্তব্য করেছিলেন, 'প্রাচ্যের সঙ্গে যোগাযোগের রাস্তার ওপর আমি এই শূয়োরটাকে বসে থাকতে দিতে পারি না।'

নাসেরের পদক্ষেপের বিপরীতে ত্রিদেশীয় জোট ফ্রান্স, ব্রিটেন ও ইসরাইল মিলিতভাবে মিসরের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। ব্রিটিশ ও ফরাসি বাহিনী সুয়েজ দখল করে নিলে সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট নিকিতা ক্রুশ্চেভ মিসরের পাশে দাঁড়ান। তিন দেশের বাহিনী সুয়েজ ত্যাগ না করলে তিনি পরমাণু মিসাইল মোতায়েনের হুমকি দেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নড়েচড়ে বসেন। মধ্যপ্রাচ্যে সোভিয়েত আধিপত্য বিস্তারের আশঙ্কায় তিনি ত্রিদেশীয় বাহিনীকে সুয়েজ এলাকা ছাড়তে নির্দেশ দেন। নির্দেশ অমান্য করলে অবরোধ আরোপের হুমকিও দেন। যুক্তরাষ্ট্রের অনুমতি না নিয়েই এই যুদ্ধ শুরু হয়েছিল।
আইজেনহাওয়ার জাতিসঙ্ঘে প্রস্তাব পাশ করেন। সুয়েজের ঘটনাকে কেন্দ্র করেই জাতিসঙ্ঘ শান্তি রক্ষী বাহিনী নামক ধারণা অনুমোদন করে। ২২ ডিসেম্বর ১৯৫৬ জাতিসঙ্ঘের নির্দেশনায় সরে যায় ব্রিটেন ও ও ফ্রান্স। ইসরাইল পরের বছরের মার্চে সরে যায়৷

সুয়েজকে ঘটনায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি ইডেনের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যায়। এই যুদ্ধে বড় সুবিধা পেয়েছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন। সারা বিশ্বের নজর মধ্যপ্রাচ্যে থাকায় হাঙ্গেরির বিদ্রোহ দমন করে ফেলে সোভিয়েত ইউনিয়ন। অনেক বিশ্লেষক সুয়েজ যুদ্ধকে দ্বিতীয় দিয়েন বিয়েন ফু হিসেবে দেখে থাকেন। ভিয়েতনামের যুদ্ধের সাথে দিয়েন বিয়েন ফু জড়িত।

সুয়েজ সংকটের পথ ধরেই মধ্যপ্রাচ্যে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের পথচলা গতি লাভ করে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আইজেনহাওয়ার মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে আইজেনহাওয়ার ডকট্রিনের জন্ম দেন। এই মতবাদ অনুসারে সাম্যবাদের দ্বারা পরিচালিত কোনো দেশের সশস্ত্র আক্রমণের বিরুদ্ধে সেই দেশ সাহায্যের আবেদন করলে যুক্তরাষ্ট্র সেনা মোতায়েন করবে। স্নায়ুযুদ্ধের আমেজ নতুন রঙ পায়। সুয়েজ সংকট শেষ হওয়ার কিছুদিন পরেই কিউবার মিসাইল সংকটকে কেন্দ্র করে বিশ্ব স্নায়ুযুদ্ধের ব্যাপকতা প্রত্যক্ষ করে৷

১৯৬৭ সালের ৬ দিনের যুদ্ধ, ১৯৭৩ সালের ইয়ম কাপুর যুদ্ধেও সুয়েজ প্রধান কেন্দ্রবিন্দু ছিল। এই সময় মিসর সরকার সুয়েজ খাল বন্ধ করে দিয়েছিল। এই সময় গ্রেট বিটার লেকের কাছে ১৫টি আন্তর্জাতিক জাহাজ পানিবন্দি হয়ে পড়েছিল যা সেখানে দীর্ঘ আট বছর আটকে ছিল। এই ঘটনা পরে ইয়েলো ফ্লিট নামে পরিচিত পায়৷ ১৯৭৫ সালে পানিবন্দী এই জাহাজগুলো খাল ত্যাগের অনুমতি পেয়েছিল।

© দৈনিক নয়া দিগন্ত

0 টি ভোট
করেছেন (12,550 পয়েন্ট)
সুয়েজ খালকে বিশ্ব বাণিজ্যের ধমনী বলা হয়। ১৯৩.৩০ কিলোমিটার লম্বা এই খাল সিনাই উপদ্বীপ থেকে আফ্রিকার মূল ভূমিকে পৃথক করেছে। লোহিত সাগর ও ভূমধ্যসাগরকে যুক্ত করার মধ্য দিয়ে এই খাল এশিয়ার সাথে ইউরোপ ও আমেরিকার বাণিজ্য সহজ করেছে। এই খাল চালুর পূর্বে ইউরোপ থেকে এশিয়ার দেশগুলোর সাথে যোগাযোগে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হত। আফ্রিকার নিচে উত্তমাশা অন্তরীপ দিয়ে ভারত মহাসাগরে প্রবেশ করতে হতো৷

১৮৬৯ সালে চালু হওয়া এই খালের মধ্য দিয়ে বিশ্ব বাণিজ্যের ১২ ভাগ পরিচালিত হয়। সাগরকেন্দ্রিক তেল বাণিজ্যের ১০ ভাগ ও তরল প্রাকৃতিক গ্যাস রফতানির ৮ ভাগ এই খাল দিয়েই হয়ে থাকে।

সুয়েজ খাল কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্য মতে ২০২০ সালে এই খাল দিয়ে প্রায় ১৯০০০ জাহাজ পাড়ি দিয়েছে। প্রতিদিন প্রায় ৫১টি জাহাজ এই খাল পাড়ি দেয়। এই খাল থেকে মিসর অর্থনৈতিকভাবে উপকৃত হয়। ২০২০ সালে মিসর এই খাল থেকে ৫.৬১ বিলিয়ন ডলারের রাজস্ব আদায় করেছে।

সম্প্রতি এভার গিভেন নামক একটি জাহাজ আটকে যাওয়ার ঘটনায় সুয়েজ খাল নিয়ে আলোচনা নতুন করে সামনে এসেছে। বিশ্ব বাণিজ্যের প্রধান এই পথ এক সপ্তাহ বন্ধ থাকায় মিসর ৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার হারিয়েছে।

খাল বন্ধ থাকায় বিশ্ব বাণিজ্যে ৬০০ থেকে ১০০০ কোটি ডলার ক্ষতি হতে পারে বলে এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে। বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান মুডি'স জানিয়েছিল খাল বন্ধ থাকায় বিশ্ব বাণিজ্যের ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ক্ষতি হতে পারে।

১৮৮৮ সালে প্রধান সামরিক শক্তিগুলোর মধ্যে Convention of Constantinpole স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুসারে এইপথে সব দেশের জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়। খাল পাড়ের আশেপাশে দুর্গ ও পরিখা খনন নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু এই চুক্তিতে ব্রিটেন ১৯০৪ সাল পর্যন্ত স্বাক্ষর করেনি। ইসমাইল পাশার শেয়ার ব্রিক্রির ফলে সুয়েজ খাল মিসর ভূখণ্ডে হলেও এখানে তারা নিষ্ক্রিয় দর্শক হয়ে যায়। ১৯২২ সালে মিসর স্বাধীনতা লাভ করে৷ ১৯৩৬ সালের চুক্তিবলে ব্রিটিশরা সুয়েজ খালে সামরিক অবস্থান ধরে রাখার অধিকার লাভ করে। ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত এখানে ব্রিটেনের সেনা মোতায়েন ছিল।

 

১৯৪৯ সালে লভ্যাংশের ৭ ভাগ বরাদ্দ মিসরকে দেয়া হয়। কারগির কাজের লোক নিয়োগে শতকরা ৮০ ভাগ ও ক্লার্ক নিয়োগে শতকরা ৯০ ভাগ মিসরীয়দের জনগণের জন্য নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়। এর মাধ্যমে পুনরায় খাল পরিচালনায় মিসরীয়দের আগমন ঘটে। ১৯৪৯ সালে ইসরাইলের সাথে আরব দেশগুলোর চুক্তি হলে মিসর ইসরাইলকে এই খাল ব্যবহার করার অনুমতি দিতে অস্বীকার করে। ১৯৫২ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে মিসরের ক্ষমতায় আসেন গামাল আবদেল নাসের। সুয়েজকে ঘিরে বিশ্ব রাজনীতি নতুন পথে চলতে শুরু করে।

সুয়েজকে ঘটনায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি ইডেনের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যায়। এই যুদ্ধে বড় সুবিধা পেয়েছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন। সারা বিশ্বের নজর মধ্যপ্রাচ্যে থাকায় হাঙ্গেরির বিদ্রোহ দমন করে ফেলে সোভিয়েত ইউনিয়ন। অনেক বিশ্লেষক সুয়েজ যুদ্ধকে দ্বিতীয় দিয়েন বিয়েন ফু হিসেবে দেখে থাকেন। ভিয়েতনামের যুদ্ধের সাথে দিয়েন বিয়েন ফু জড়িত।

সুয়েজ সংকটের পথ ধরেই মধ্যপ্রাচ্যে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের পথচলা গতি লাভ করে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আইজেনহাওয়ার মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে আইজেনহাওয়ার ডকট্রিনের জন্ম দেন। এই মতবাদ অনুসারে সাম্যবাদের দ্বারা পরিচালিত কোনো দেশের সশস্ত্র আক্রমণের বিরুদ্ধে সেই দেশ সাহায্যের আবেদন করলে যুক্তরাষ্ট্র সেনা মোতায়েন করবে। স্নায়ুযুদ্ধের আমেজ নতুন রঙ পায়। সুয়েজ সংকট শেষ হওয়ার কিছুদিন পরেই কিউবার মিসাইল সংকটকে কেন্দ্র করে বিশ্ব স্নায়ুযুদ্ধের ব্যাপকতা প্রত্যক্ষ করে৷

১৯৬৭ সালের ৬ দিনের যুদ্ধ, ১৯৭৩ সালের ইয়ম কাপুর যুদ্ধেও সুয়েজ প্রধান কেন্দ্রবিন্দু ছিল। এই সময় মিসর সরকার সুয়েজ খাল বন্ধ করে দিয়েছিল। এই সময় গ্রেট বিটার লেকের কাছে ১৫টি আন্তর্জাতিক জাহাজ পানিবন্দি হয়ে পড়েছিল যা সেখানে দীর্ঘ আট বছর আটকে ছিল। এই ঘটনা পরে ইয়েলো ফ্লিট নামে পরিচিত পায়৷ ১৯৭৫ সালে পানিবন্দী এই জাহাজগুলো খাল ত্যাগের অনুমতি পেয়েছিল।

সম্পর্কিত প্রশ্নগুচ্ছ

0 টি ভোট
1 উত্তর 533 বার দেখা হয়েছে
0 টি ভোট
1 উত্তর 613 বার দেখা হয়েছে
12 ডিসেম্বর 2023 "জীববিজ্ঞান" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Fariha akther (1,810 পয়েন্ট)
0 টি ভোট
1 উত্তর 439 বার দেখা হয়েছে
+1 টি ভোট
1 উত্তর 188 বার দেখা হয়েছে
+1 টি ভোট
1 উত্তর 341 বার দেখা হয়েছে

10,807 টি প্রশ্ন

18,512 টি উত্তর

4,744 টি মন্তব্য

510,900 জন সদস্য

86 জন অনলাইনে রয়েছে
21 জন সদস্য এবং 65 জন গেস্ট অনলাইনে
  1. আব্দুল্লাহ আল মাসুদ

    1280 পয়েন্ট

  2. Dibbo_Nath

    370 পয়েন্ট

  3. Fatema Tasnim

    340 পয়েন্ট

  4. _Polas

    160 পয়েন্ট

  5. Arnab1804

    140 পয়েন্ট

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত বিজ্ঞান প্রশ্নোত্তর সাইট সায়েন্স বী QnA তে আপনাকে স্বাগতম। এখানে যে কেউ প্রশ্ন, উত্তর দিতে পারে। উত্তর গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই একাধিক সোর্স যাচাই করে নিবেন। অনেকগুলো, প্রায় ২০০+ এর উপর অনুত্তরিত প্রশ্ন থাকায় নতুন প্রশ্ন না করার এবং অনুত্তরিত প্রশ্ন গুলোর উত্তর দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রতিটি উত্তরের জন্য ৪০ পয়েন্ট, যে সবচেয়ে বেশি উত্তর দিবে সে ২০০ পয়েন্ট বোনাস পাবে।


Science-bee-qna

সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ট্যাগসমূহ

মানুষ পানি ঘুম পদার্থ - জীববিজ্ঞান চোখ পৃথিবী এইচএসসি-উদ্ভিদবিজ্ঞান এইচএসসি-প্রাণীবিজ্ঞান রোগ রাসায়নিক শরীর রক্ত #ask আলো মোবাইল ক্ষতি চুল কী #science চিকিৎসা পদার্থবিজ্ঞান সূর্য প্রযুক্তি মাথা স্বাস্থ্য প্রাণী গণিত মহাকাশ বৈজ্ঞানিক পার্থক্য #biology এইচএসসি-আইসিটি বিজ্ঞান খাওয়া গরম শীতকাল #জানতে ডিম চাঁদ কেন বৃষ্টি কারণ কাজ বিদ্যুৎ রাত রং শক্তি উপকারিতা সাপ লাল আগুন মনোবিজ্ঞান গাছ খাবার সাদা আবিষ্কার দুধ উপায় হাত মাছ মশা শব্দ ঠাণ্ডা ব্যাথা মস্তিষ্ক ভয় বাতাস স্বপ্ন তাপমাত্রা গ্রহ রসায়ন উদ্ভিদ কালো পা মন কি বিস্তারিত রঙ পাখি গ্যাস সমস্যা মেয়ে বৈশিষ্ট্য হলুদ বাংলাদেশ বাচ্চা সময় ব্যথা মৃত্যু চার্জ অক্সিজেন ভাইরাস আকাশ গতি কান্না দাঁত বিড়াল আম
...