পরিসংখ্যান বলছে প্রতি বছর যে পরিমাণ পরিযায়ী পাখিরা এখানে আসে তাদের মূল খাদ্য হয় মশা। তাই যদি মশাই না থাকে, তাহলে প্রায় ৫০ শতাংশ পরিযায়ী পাখি আর দুই মেরুতে আসবে না। ফলে সেখানকার পরিবেশে বদল আসতে শুরু করবে।
শুধু তাই নয়, এখানে ভিন দেশ থেকেও বছরের নানা সময় লক্ষাধিক গবাদি পশু এই অংশে মাইগ্রেট হয়ে থাকে। মশার কামড় থেকে বাঁচতে যে জায়গায় মশার ঝাঁক বেশি থাকে, সে জায়গা এড়িয়ে অন্য পথ বেছে নেয় এই গবাদি প্রাণীরা। এমনটা তারা বহু বছর ধরে করে আসছে। হঠাৎ যদি কোনও এক বছর এই মশার ঝাঁক না থাকে, তাহলে কোন দিকে যেতে হবে, তা তো বুঝতেই পারবে না এই গবাদি পশুরা। ফলে রাস্তা হারিয়ে হয়তো কাতারে কাতারে মারাই যাবে।
আর এরা এত সংখ্যায় মারা গেলে মাংসাশী প্রাণীরা কী খাবে? এদের গোবরের মাধ্যে থাকা বীজের কারণে যে গাছেদের জন্ম হয় তাওতো আটকে যাবে। ফলে পরিবেশের স্থিরতা বিঘ্নিত হবে। আর এমনটা হলে যে তার প্রভাব কোনও না কোনও সময় মানুষের উপরও পড়বেই, তা কী আর বলার অপেক্ষা রাখে!
খাবারের অভাব দেখা দেবে পরিবেশ সংক্রান্ত একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে মশারা না থাকলে তাদের লার্ভাও থাকবে না। ফলে মাছেদের মূল খাদ্যে টান পড়বে। আর এমনটা হলে শুধু মশারা নয়, খাদ্যের অভাবে একের পর এক মাছেদের প্রজাতিও বিলুপ্ত হতে থাকবে। প্রসঙ্গত, মশাদের লর্ভা খেয়ে বেঁচে থাকা প্রাণীদের সংখ্যা কিন্তু কম নয়। অনেক পোকা-মাকড়, মাকড়শা, টিকটিকি, এমনকী ব্যাঙদের মূল খাদ্য হল মশা। তাই মশারা না থাকলে মাছেদের মতো এদেরও হয়তো পৃথিবীর বুকে আর দেখা যাবে না।
পাখিদের সংখ্যা চোখে পড়ার মতো কমবে সম্প্রতি প্রকাশিত এক সমীক্ষা রিপোর্টে প্রশ্ন করা হয়েছে, যেসব পাখিরা মূলত মশা খেয়ে বেঁচে থাকে তাদের কী হবে। মশারা না থাকলে তো এরাও পর্যাপ্ত খাবার পাবে না। তখন? পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে তখন কিছুটা বাধ্য হয়েই পাখিদের অন্য কিছু খেতে হবে। একই অবস্থা হবে বাদুড়দেরও। এমনটা চলতে থাকলে এক সময়ে গিয়ে মারাত্মক খাবারের অভাব দেখা দেবে। আর এমনটা হলে যে তা প্রাণী জগতের কাছে সুখবর নয়, তা নিশ্চয় বলার অপেক্ষা রাখে না।
সব শেষে: তুল্য-মূল্য বিচার করে বিজ্ঞানীদের মনে হয়েছে মশারা না থাকলে পরিবেশে মারাত্মক একটা শূন্যস্থান তৈরি হবে, যার প্রভাব খাদ্য চক্রের উপর থেকে নীচ পর্যন্ত পড়বে। কিন্তু কোনও প্রাণীই একমাত্র মশা বা তার লার্ভার উপর ভরসা করে বেঁচে নেই। তাই প্রভাবটা যে মারাত্মক কিছু হবে, তেমন নয়। বরং বহু মানুষ মশার কারণে হওয়া রোগের হাত থেকে রক্ষা পাবেন। তাই বিজ্ঞানীরা মনে করছেন যুদ্ধে যেমন কোল্যাটারাল ড্যামেজ হয়, তেমনি মশারা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলে কিছু প্রাণী হয়তো মারা যাবে, কিন্তু মারাত্মকভাবে লাভবান হবে মানবজাতি। এমন ভাবনায় আবার প্রমাণ করে মানুষ কতটা স্বার্থপর। তারা যে নিজের থেকে বেশি কারও কাথা ভাবে না, তা হয়তো আরেকবার প্রমাণ হয়ে যাবে যদি সত্যিই কোনও দিন এই পৃথিবী থেকে মশাদের চিহ্ন মুছে যায়।
সূত্র: ওয়ান ইন্ডিয়া