রংধনু কখন হয়, সেটি কমবেশি সবারই জানা। বৃষ্টির সময় রোদ উঠলে রংধনু ওঠে। মাঝেমধ্যে উঁচু ঝর্ণা বা জলপ্রপাতের গোড়াতেও রংধনু দেখা যায়। তার মানে এটা পরিষ্কার, রংধনুর জন্য পানি লাগবে, আর লাগবে রোদ।
এখন কথা হলো, রোদ-বৃষ্টি হলেই কি রংধনু হয়? অনেকটা তাই; তবে সূর্যকে একটু কোনাকুনি/অ্যাঙ্গেলে থাকতে হবে। তাই ভরদুপুরে রংধনু ওঠে না। কারণ, তখন সূর্য একদম খাড়া উপরে থাকে, কোনাকুনির কোনো বালাই-ই থাকে না। রংধনুর জন্য আলোর একটি বিশেষ ধর্ম দায়ী। এক বলা হয় আলোর প্রতিসরণ।
আলোর তো চলতে কোনো মাধ্যমই লাগে না। তাই সূর্য আর পৃথিবীর মাঝখানে কোনো পদার্থ না থাকলেও আলো ঠিকই সূর্য থেকে পৃথিবীতে চলে আসতে পারে। কিন্তু যখনই আলো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে, ওর চলার পথে নানা পদার্থ চলে আসে—বিভিন্ন গ্যাস, ধুলোবালি, আরো কত কী। এসবই পদার্থ বা মাধ্যম। এগুলোর মধ্য দিয়ে আসার সময় আলো একটু একটু করে বেঁকে যায়। আলোর এই বেঁকে যাওয়াকেই বলে আলোর প্রতিসরণ।
এখন, বৃষ্টির সময় বাতাসে প্রচুর জলীয় বাষ্প থাকে। মানে আলোর চলার পথে পদার্থ বা মাধ্যম অন্য সময়ের তুলনায় অনেক বেশি থাকে। ফলে সূর্যের আলো আসার সময় আলোর প্রতিসরণও বেশি হয়। এমনি সময়ে আলোর প্রতিসরণ বা বেঁকে যাওয়াটা খুব বেশি পরিমাণে হয় না বলে আলোর সব রং আলাদা করে দেখা যায় না। যে রংটা অপেক্ষাকৃত বেশি বাঁকে, সেটাই দেখা যায়।
কিন্তু বৃষ্টির সময় এই প্রতিসরণ অনেক বেশি হয়। কারণ, জলীয় বাষ্প বা পানি বায়ুমণ্ডলের অন্য সব পদার্থ বা মাধ্যমের তুলনায় একটু বেশিই ভারী। তখন আলোর সব রং-ই অনেক বেশি করে বাঁকে। ফলে সূর্যরশ্মিতে থাকা সাতটা রং-ও আলাদা আলাদা করে দেখা যায়—বেগুনি (violet), নীল (indigo), আসমানি (blue), সবুজ (green), হলুদ (yellow), কমলা (orange) ও লাল (red)।
বাংলাতে এই রংগুলোর নামের প্রথম অক্ষর নিয়ে সংক্ষেপে বলা হয় ‘বেনীআসহকলা’। ইংরেজিতে প্রথম বর্ণগুলোকে নিয়ে বলা হয় VIBGYOR।
এখন প্রশ্ন হলো, আলো বেঁকে গেলে সাতটি রং আলাদা করে কেন দেখা যায়? এই আলাদা সাতটি রঙের আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যও আলাদা। তরঙ্গদৈর্ঘ্য আলাদা বলেই আলোগুলোর আলাদা রং হয়। এখন এই আলাদা তরঙ্গদৈর্ঘ্যের জন্য প্রতিটি আলোর বেঁকে যাওয়ার পরিমাণও আলাদা হয়। এই যেমন লাল রঙের আলো ৪২ ডিগ্রি কোণে বাঁকে। আবার বেগুনি রঙের আলো বাঁকে ৪০ ডিগ্রি কোণে। অন্য রঙের আলোগুলো বাঁকে ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রির মধ্যের বিভিন্ন পরিমাণে। এ কারণে রংধনুতে সব সময় রংগুলোকে একটি নির্দিষ্ট সারিতে দেখা যায়।
তবে রংধনুর সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, রংধনু কখনো একা একা ওঠে না। মানে, রংধনু সব সময় দুটো করে ওঠে! আসল যে রংধনু, তার একটু ওপরে আরেকটি রংধনু ওঠে। সেটা অবশ্য আসল রংধনুর চেয়ে কম উজ্জ্বল, আর রংগুলোও থাকে বিপরীতক্রমে। এ দুই রংধনুর মাঝখানের অংশে আকাশের অন্যান্য অংশের চেয়ে আলো একটু কম থাকে। অবশ্য এ দুই নম্বর রংধনু আর মাঝের কম আলোকিত অংশ খুব একটা স্পষ্টভাবে দেখা যায় না। আকাশ অনেক বেশি পরিষ্কার থাকলে আর যথেষ্ট আলো থাকলে, তবেই এদের দেখতে পাওয়া যায়।