- সামান্য একটা ম্যাথ করতে পারিস না! তুই একটা গরু।
- গাধার মতো কথা বলবি না সব সময়!
- তুই একটা ছাগল।
- তোর মতো বলদ আমি জীবনেও দেখি নাই!
নিজেদের পরিবারের কাছ থেকে বা বন্ধুদের কাছ থেকে বা শিক্ষক-শিক্ষিকার কাছ থেকে এরকম চারপেয়ে নিরীহ গৃহপালিত পশুর সাথে নিজের তুলনা শুনে হয়তো সকলেই অভ্যস্ত। যদি বলেন আপনি এমনটা কখনোই শুনেন নি, তাহলে বলব আপনি এক দুর্লভ শ্রেণির মানুষ। সে যা-ই হোক, যারা প্রতিনিয়ত শুনে থাকেন বা মাঝেমাঝেই শোনেন, তারা যদি নিজেদেরকে সত্যি সত্যি গরু-ছাগল বা গাধা ভাবতে শুরু করেন তাহলে? মনে হতেই পারে এসব পাগলের প্রলাপ, কিন্তু একেবারেই তা নয়। বিরল এক মানসিক ব্যাধি রয়েছে যাতে আক্রান্ত ব্যক্তি নিজেকে গরু বা ষাঁড় ভাবতে শুরু করে! এই মানসিক ব্যাধির নাম ‘বোয়ানথ্রপি’।
বোয়ানথ্রপি কী?
বোয়ানথ্রপি হলো এমন এক ধরনের মানসিক রোগ যাতে আক্রান্ত হলে ব্যক্তি একাগ্রচিত্তে বিশ্বাস করে সে একটা গরু। তবে শুধু বিশ্বাস করাই নয়, বরং তার আচার, ব্যবহার ইত্যাদিও সেরকমই হয়ে যায়। গরু কী কী করে তা ভাবার আগে ‘বোয়ানথ্রপি’ শব্দটি কোথা থেকে এলো তা জেনে নেয়া যাক। ল্যাটিন শব্দ Bo (গবাদি পশু) এবং গ্রিক শব্দ Anthropy (মানুষ) থেকে ইংরেজি Boanthropy শব্দের উৎপত্তি। এর শাব্দিক অর্থ দাঁড়ায় ‘গবাদি পশুর ন্যায় মানুষ’।
কীভাবে বুঝবেন আপনার বোয়ানথ্রপি হয়েছে?
এবার আসা যাক গরু আসলে ঠিক কী কী করে সেদিকে। গরু ঘাস খায়, শিং দিয়ে গুঁতোয়, গোয়াল ঘরে থাকে মাঠে চরে বেড়ায় ইত্যাদি। একজন বোয়ানথ্রপি রোগীও এরকম আচরণই করে থাকে। যেমনঃ
-ভাত-মাছ-মাংস খাওয়া বাদ দিয়ে ঘাস চিবানো শুরু করবে।
-বিছানা বাদ দিয়ে মাটিতে ঘুমাবে।
-হাত দুটিকে পা ভাববে এবং গরুর মতো হাঁটার চেষ্টায় হামাগুড়ি স্টাইলে হাঁটবে।
-কথা বলা কমিয়ে দেবে বা একেবারেই বলবে না। তবে হাম্বা-হাম্বা করতেই পারে!
-নখ কাটবে না।
-ঘরের বাইরে; যেমনঃ মাঠে-ঘাটে থাকতে পছন্দ করবে।
কাদের হয় এমনটা?
মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা যে কারোই হতে পারে, তেমনি বোয়ানথ্রপিও যে কারোই যে কোনো বয়সে হতে পারে। তবে বলা হয় বোয়ানথ্রপিতে আক্রান্তদের বেশিভাগই পুরুষ!
কেন হয়?
যেহেতু বোয়ানথ্রপি বিরল একটি মানসিক রোগ, সেহেতু এটি নিয়ে গবেষণাও খুবই কম। কেস স্টাডি থেকে যে কারণগুলো পাওয়া যায় সেগুলো হলো:
-জীবনে প্রবল হতাশা (Severe Depression)
-উৎকণ্ঠা (Anxiety)
-স্ট্রেস (Stress)
জীবনে এগুলোর পরিমাণ খুব বেড়ে গেলে মানুষ স্বাভাবিকভাবেই অসুখী হয়ে পড়ে। মুক্তি পেতে চায় এই দুঃসহ অবস্থা থেকে। এক্ষেত্রে নিজের চরিত্র বদলে নতুন রূপ দিতে নিরীহ প্রাণী গরুর মতো আচরণ করতে পারে। অর্থাৎ চরিত্র বদলের মাধ্যমে কষ্ট থেকে মুক্তি পাবার চেষ্টা।
এছাড়াও আরো কিছু আনুষঙ্গিক কারণ থাকতে পারে, যেমন-
অন্যের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত খারাপ মন্তব্য যেমন “তুই একটা গরু”, “তুই একটা বলদ” ইত্যাদি শুনতে শুনতে এক সময় নিজের ভেতরেই এ বিশ্বাস চলে আসতে পারে যে, সে আসলেই গরু এবং তার পরপরই আচরণে পরিবর্তন দেখা যেতে পারে।
ছোটবেলায় সকলেই নানা কল্পকাহিনী শুনে থাকবেন। তার ভেতর ‘টোটেম’ এর কথা শুনেছেন কী? না শুনে থাকলে একটু জেনে নেয়া যাক। টোটেম হলো কোনো বস্তু বা প্রাণী বা গাছ, যা কোনো পরিবার বা গোষ্ঠী বা কোনো পূর্বপুরুষের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এমন হতে পারে অনেকেই এই টোটেমের গল্প বা ইতিহাস শুনতে শুনতে নিজেকেই টোটেম ভাবা শুরু করলো। ব্যাপারটা অনেকটা এমন – পূর্বপুরুষ গরু বা ষাঁড় ছিল এবং আমিও আমার পূর্বপুরুষের ন্যায় হয়ে যাচ্ছি।
আসলে নিজের অবস্থান থেকে পলায়নের চেষ্টাই হলো বোয়ানথ্রপির প্রধান কারণ।
ক্রেডিট: কানিজ ফাতেমা কলি (রোর বাংলা)