দই,ফলের রস,ডাল বা পানির সাথে ১ গ্রাম পরিমাণ চুন মিক্স করে খেলে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ সম্ভব।
অনেকেই হয়তো জানেন না চুনের দারুন সব উপকারিতা রয়েছে।যথাযথ মাত্রায় ও উপায়ে চুন প্রয়োগে অনেক মারাত্মক রোগের চিকিৎসা করা যায়। চুন সাধারণত ক্যালসিয়ামের কার্বনেট, অক্সাইড ও হাইড্রো অক্সাইডের যৌগসমূহ চুন হিসেবে পরিচিত। চুনাপাথর, চক ইত্যাদির মতো ক্যালসিয়াম কার্বনেট সমৃদ্ধ শিলা চুনের প্রধান উৎস। শুষ্ক অবস্থায় এটি সাধারণত সাদা বর্ণের গুড়াজাতীয় পদার্থ। বাড়িঘরে চুনাকরণ, প্লাস্টার এবং ব্লিচিং পাউডার তৈরি ছাড়াও এই চুন কৃষিক্ষেতে কৃষিজমির অম্লত্ব হ্রাস এবং খাবার পানির অস্থায়ী ক্ষারত্ব দূরীকরণে ব্যবহূত হয়। স্বাস্থ্যগত উপকারীতা ও প্রয়োগ পদ্ধতি জেনে চুনের ব্যবহার করা যেতে পারে।
১। জন্ডিস এর সমস্যায় প্রায় গমের দানার সমান অর্থাৎ একেবারে অল্প চুন কে আঁখের জুসের সাথে মিশিয়ে পান করান। চুন নপুংসক রোগের সবথেকে ভালো এবং কার্যকারী ঔষধ। চুন আঁখের রসের সাথে মিশিয়ে নিয়মিত ১ বছর পান করলে এই সমস্যা পুরোপুরি ভাবে ঠিক হয়ে যাবে। মহিলাদের জন্যও এটি কার্যকারী হয়ে থাকে।
২। উচ্চতা বৃদ্ধি করার জন্য নিয়মিত চুন সেবন করুন, একটি গমের দানার সমান চুন নিয়ে সেটিকে ডালের সাথে মিশিয়ে সেবন করুন। চুন খাওয়ার ফলে স্মরণশক্তি বৃদ্ধি পায়। কম উচ্চতা যুক্ত ছেলে-মেয়েদের চুন অবশ্যই সেবন করান। এটি উচ্চতা বাড়াতে খুবই কার্যকারী হয়ে থাকে।
৩। গর্ভাবস্থায় মায়েদের কে ক্যালসিয়াম এর চাহিদা পূরণ করার জন্য অবশ্যই চুন খাওয়া দরকার। গমের দানার সমান চুন কে অর্ধেক কাপ ডালিমের রসের সাথে মিশিয়ে পান করা দরকার। এরফলে শিশু শক্তিশালী হয়, সহজে কোন রোগ সৃষ্টি হয়না এবং বাচ্চা প্রখর বুদ্ধিমান হয়ে থাকে।
৪। মহিলাদের মাসিক চলার স্থিতিতে ৪৫ বছরের পরে এই ক্রিয়া যখন বন্ধ হয়ে যায়, এরপরে ক্যালসিয়াম কে পাচন করার হরমোন(রস) শরীরে তৈরি হওয়া বন্ধ হয়ে যায়। এইজন্য বাইরে থেকে শরীরে ক্যালসিয়াম জোগান দেওয়ার জন্য বিকল্প হল চুন। অর্থাৎ ৪৫ বছরের পরে অথবা মাসিক ক্রিয়া বন্ধ হওয়ার পরে চুন অবশ্যই খেতে থাকুন। এরফলে শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব পূর্ণ হবে।
৫। চুন হাঁটুর ব্যথাও ভালো করে। কোমরের যন্ত্রণা, কাঁধের ব্যথা, শরীরের সমস্ত জয়েন্টের ব্যথা শুধুমাত্র চুনের সেবন করেই ভালো করা যায়। ভাঙা হাড় কে জোড়া লাগানোর সব থেকে বেশি শক্তি চুনের মধ্যেই রয়েছে। চুন সবসময় সকালে খালিপেটেই সেবন করুন।।
৬। মুখের মধ্যে ছালি এর সমস্যা হলে চুন যুক্ত পানি পান করুন কিছুক্ষণ পরেই ভালো হয়ে যাবে। শরীরে রক্ত কম থাকলে নিয়মিত চুন অবশ্যই খাওয়া দরকার। এনিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা এর সমস্যায় ডালিমের রসের সাথে চুন মিশিয়ে পান করা অবশ্যই দরকার।
৭। সাইটিকা বাতের রোগে চুন খুবই কার্যকারী হয়ে থাকে। চুল শক্তিশালী রাখার জন্য চুন নিয়মিত খান। চোখের যতি বাড়ানোর জন্য চুন খাওয়া দরকার। চুন শরীরের রেজিস্টেন্স বৃদ্ধি করে। চুন হাড়কে মজবুত রাখে এবং রক্ত বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
৮। তামাকের সাথে চুন খাওয়া উচিত নয়। পানের সাথে চুন খেতে পারেন কিন্তু খয়ের মেশাবেন না। পানের সাথে চুন, মৌরি, এলাচ, লবঙ্গ এবং কেশর মিশিয়ে খেতে পারেন। খাবার খাওয়ার পরেই পানের খান।
৯। চুন সবথেকে ভালো বাতনাশক ঔষধ। ক্যালসিয়ামের অভাবে শরীরে প্রায় ৫০ প্রকারের রোগ হতে পারে, হাড়ের সাথে যুক্ত সমস্ত রোগ হতে পারে, মাংসপেশির সাথে যুক্ত রোগও হতে পারে। সব থেকে বেশি ক্যালসিয়াম দুধের মধ্যে থাকে, এরপরে দই এর মধ্যে থাকে। মাখন এবং ঘি এর মধ্যেও ক্যালসিয়াম ভরপুর মাত্রায় থাকে। সব ধরনের টক জাতীয় ফলের মধ্যে ক্যালসিয়াম থাকে। ফলের মধ্যে কলাতে সবথেকে বেশি ক্যালসিয়াম থাকে। এই সমস্ত জিনিস থেকে পাওয়া ক্যালসিয়াম ৪০ থেকে ৪৫ বছর পর্যন্ত শরীরকে বায়োকেমিস্ট্রি হিসাবে প্রাপ্ত হয়। অর্থাৎ যতক্ষণ শরীরের সমস্ত অঙ্গ সঠিক ভাবে কাজ করতে থাকে।
১০। চুন সবসময় গমের দানা (১ গ্রাম) বরাবরই খাওয়া দরকার। চুন দই, পানি এবং ডালের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে কিন্তু দুধের সাথে নয়। পুরুষদের জন্যও ৪৫ বছরের পরে ক্যালসিয়ামের অভাব দূর করার জন্য চুন অবশ্যই খাওয়া দরকার নিয়মিত ১ গ্রাম করে।