কিছু কিছু প্রাণী আছে বিশেষ করে গৃহপালিত প্রাণীগুলোকে লক্ষ করলে দেখা যায় বিশ্রামের সময় এরা খাবার চিবুতে থাকে (যা তারা আগে খেয়েছে)। প্রথমে এরা খাবারগুলো না চিবিয়ে গিলে ফেলে পরে বিশ্রামের সময় সে খাবার পেট থেকে মুখে এনে চিবিয়ে চিবিয়ে খায়। এই প্রাণীগুলোকে জাবরকাটা প্রাণী বা রোমন্থক প্রাণী বলে। এই রোমন্থক প্রাণী হলো গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, উট ইত্যাদি।
খাবারগুলি পেট থেকে মুখের মধ্যে এনে চিবিয়ে খাওয়ার জন্য এদের একধরনের পাচনতন্ত্র আছে। এগুলোর পাকস্থলীর চারটি কক্ষ আছে। এগুলো হলো:
- উদর
- জালবৎ থলি
- ওমাসাম বা বহুভাঁজ থলি
- অ্যাবোমাসাম বা সত্যিকারের পাকস্থলী
প্রাণীরা যখন তাদের খাবার গিলে ফেলে তখন তা পাকস্খলীর প্রথম কক্ষে যায়। এটা সব থেকে বড় কক্ষ। খাদ্যদ্রব্য এই স্তরে বড় বড় দলার আকারে থাকে। এখানে খাবারগুলো ভিজে নরম হয়। তারপর চলে যায় দ্বিতীয় কক্ষে। এখানে খাবারগুলো আরো ছোট ছোট টুকরায় পরিণত হয়। জাবর কাটার সময় উদগীরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খাদ্যবস্তু মুখের মধ্যে চলে আসে। চিবানো হয়ে গেলে চর্বিত খাদ্যবস্তু চলে যায় তৃতীয় কক্ষে। তারপর সেখান থেকে আসল পাকস্খলী বা চতুর্থ কক্ষে। ওখানেই পাচন ক্রিয়া সংঘটিত হয়। গরু-ভেড়া-ছাগলের মুখের ওপরের পাটিতে দাঁত নেই। তবে পাটিটি বেশ শক্ত। এর সাহায্যে এবং নিচের পাটির দাঁতের সাহায্যে এরা মুখে খাবার ঢোকায়।
এই গেলো জাবার কাটা কি সেই ব্যাপারটা। এবার আসা যাক জাবরকাটা কেন গরুর জন্য জরুরী সেই ব্যাপারে:
আমাদের একটা কথা প্রথমেই মনে রাখতে হবে মানুষ আর তৃণভোজী গরুর খাদ্য কিন্তু এক নয়! আমরা গরুকে শস্য দানা বা শস্যদানার উপজাত গরুকে আস্ত বা ভেংগে সরাসরি দিতে পারি কিন্তু মানুষকে তা রেধে দিতে হবে। আবার গরুকে রেধে দেয়া চলবে না! গরুর খাদ্যে ড্রাইমেটার এবং আঁশ জাতীয় খাদ্য,স্লো ডাইজেস্টিভ ফিড বা ধীর গতিতে হজম হয় এমন খাদ্য বেশী থাকতে হবে যাতে সে সেই ধরনের খাদ্যগুলি হজম করার সময় বেশী করে জাবর কাটে। আপনারা হয়তো জানেন না একটি সুস্থ গরু দিনের অন্তত ৪০% সময়ই জাবর কাটে। এই জাবর কাটার ফলে গরুর মুখ থেকে লালা বা স্যালাইভা নিঃসৃত হয় যাতে সোডিয়াম বাই কার্বোনেট উপস্থিত থাকে এবং এর pH হয় ৮.২। এই লালায় উপস্থিত সোডিয়াম বাই কার্বোনেটই গরুর পাকস্থলীতে এসিডিটি নিয়ন্ত্রণ করে! ফলে গরুর এসিডোসিস, ব্লোটস বা পেট ফাঁপা এই জাতীয় সমস্য হয় না এবং তার উৎপাদন ঠিক থাকে।
এছাড়াও জাবরকাটার ফলে গরুর গ্রহনকৃত খাদ্যের সর্বাধিক পুষ্টির শোষণ ক্ষমতা বা ফিড ইন্টেইক এবিলিটি অনেক বেড়ে যায়। ফলে অধিক মাংস এবং দুধ উৎপাদনের জন্য অধিক পরিমাণ খাদ্য গরুকে দিতে হয় না,নির্দিষ্ট পরিমাণ আদর্শ রাফেজেই গরুর দুধ এবং মাংসের ভালো উৎপাদন হবে। এতে উৎপাদন খরচও কমে যাবে। গরুকে এমন খাদ্য সরবরাহ করতে হবে আমাদের যাতে পুষ্টিকর উপাদানের সাথে সাথে যথেষ্ট আঁশ এবং পর্যাপ্ত ড্রাই মেটার আছে, আব সেটা যাতে ধীরে হজম হয়। তাহলেই গরু জাবর কাটবে বেশী বা কাড চুয়িং ব্যাপারটা ঠিকঠাক মতো হবে।
মনে রাখবেন গরু যতই জাবর কাটবে ততই তার পাকস্থলীর স্বাস্থ্য বা রুমিনাল হেলথ ভালো থাকবে। আর রুমিনাল হেলথ যদি ভালো না থাকে তাহলে উৎপাদনের বারোটা বাজবে। এবার আশা করি বুঝতে পারছে জাবরকাটা বা রুমিনেটিং গরুর জন্য কতটা জরুরী।
তথ্যসূত্র : Poultry Doctors BD