ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়া ইউনিয়নের এক গ্রামে আব্দুর রহমান নামে এক ব্যক্তির লিচু গাছে আম হতে দেখতে পাওয়া গেছে। লিচু গাছে আমের ফল হওয়া বৈজ্ঞানিকভাবে একটি অবাস্তব ঘটনা।
প্রথমেই বন্ধু A.K. Ramim কে ধন্যবাদ জানাই, এতো ভীড়ের মাঝেও সে সেখানে গিয়ে ওই গাছের মালিকের সাথে আমাকে ফোনে যোগাযোগ করে কথা বলার সুযোগ করে দিয়েছিল।
এই ঘটনা নিয়ে আমার মতামতঃ
১. প্রথমে ভেবেছিলাম গ্রাফটিং বা বাডিং করা। আম পরিবারের আর লিচু পরিবারের সদস্য। তাছাড়া আমরা জানি আলাদা পরিবারের মধ্যে গ্রাফটিং খুবই র্দুলভ বলা যায় কেননা এক্ষেত্রে গ্রাফটিং এর সফলতার হার খুব কম হয়।
( বেশি)
তবে, একই পরিবারের কিছু আলাদা জাতের মধ্যে (এক্ষেত্রে সফলতার হার বেশি) কিংবা একই পরিবারের ভিন্নভিন্ন জেনাস(গন) ও স্পেসিসের(প্রজাতির) মধ্যে হতে পারে (এক্ষেত্রে সফলতার হার কম হয়)।
২. তারপর দ্বিতীয় সম্ভাবনা হিসেবে ভেবেছিলাম, -/ক্রস পলিনেশন এর কথা। তবে এখানে দুটো আলাদা পরিবারের মধ্যে ক্রস পলিনেশন কিভাবে সম্ভব হলো সেটা বুঝতেছি না আর ক্রস পলিনেশন হলেও এখানে নতুন কোন গুন, বৈশিষ্ট্য, বর্ণের কিংবা আকারের ভিন্নতা না এসে হুবহু অন্যান্য আমের মতো আকার-আকৃতি বজায় থাকলো কীভাবে সেটা আমার ধারনায় নেই।
আর জেনেটিক্যালি এতটা ভিন্নতা থাকা দুটো আলাদা পরিবারের দুটো আলাদা গাছের মধ্যে গ্রাফটিং বা ক্রস পলিনেশন আদৌও কি সম্ভব!
৩. তৃতীয় সম্ভাবনা ছিল লিচুর কোন একটা বাডে বা কুঁড়িতে ছোট গোল আকারের গর্ত করে সুপার গ্লু বা আমের বা অন্য কোন আঠা দিয়ে আটকিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সুপার গ্লু দিয়ে আটকে দিলেও আমের ভিতরের সেল স্যাপের কারনে এটা ৭ দিনের মতো টাটকা বা সতেজ রাখাও সম্ভব ছিল। ছবিটি দেখেও মনে হচ্ছে এই সম্ভাবনা এক্ষেত্রে প্রবল। হয়তো গাছ মালিক এটা জানতেন না, হয়তো অন্য কোন পক্ষ অথবা ব্যক্তি গোপনে এই কাজটা করেছিল আর এখন ভাইরাল হওয়ার পর মনেমনে হাসতেছে বা মজা নিচ্ছে। ভেবেছিলাম হয়তো ৭-১০ দিন হওয়ার আগেই যারা এই কাজটি করেছে তারা আম টি সরিয়ে ফেলবে তখন বলবে কেউ রাতের আঁধারে চুরি করেছে কিংবা করোনার কারনে লোক সমাগম কমাতে আমসহ ডালটি সমেত কেটে ফেলা হয়েছে। এভাবে সন্মান বাঁচিয়ে গুজবও ছড়ানো এবং এর উদ্দেশ্যও বজায় রাখা যাবে।
৪. আর একটা সম্ভাবনা হলো আশেপাশের কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে ইট-ভাটা, অটো রাইস মিল কিংবা রাস্তার কাজের জন্য প্লাস্টিক পুড়িয়ে পিচ তৈরি বা পিচ পোড়ানোর জন্য কোন গ্যাসের কারনে অথবা জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে কোন গ্যাসের প্রভাবে অর্থাৎ এই গ্যাস প্রভাবক হিসাবে কাজ করে এই ভিন্ন দুই পরিবারের মধ্যে ক্রস পলিনেশন সম্ভব হয়ে গেছে।
৫. অর্থাৎ ভূট্টা ও শসাতে যেমন হয় তেমন টা হয়েছিল কিনা সেটাও ভেবেছিলাম তবে এটার সম্ভবনাও আমি নাকচ করে দিচ্ছি।
৬. এর মাধ্যমেও এটা হয় নি এটা ১০০% সিওর।
৭. এটা প্রাকৃতিকভাবে হয়নি। যদি হতো তাহলে প্রতিবছর ওই লিচু গাছে আম ও লিচুর ফলন একসাথে হতো। এবার মাত্র এতগুলো লিচুর মুকুলের মধ্যে মাত্র একটি মুকুলে একটি আম হয়েছে তাই কোন একটি আর্টিফিশিয়াল মেকানিজম তো অবশ্যই হয়েছে।
▪️শেষকথাঃ
আমার কাছে ৩ নম্বর পয়েন্ট টি বেশি সম্ভবনাময় মনে হয়েছে। তবে যেহেতু আমি সেই গাছ মালিকের সাথে ফোনে কথা বলেছি এবং তিনি আমার সন্দেহ দূর করার জন্য আমাকে সেই গাছ পরিদর্শনের আমন্ত্রণও জানিয়েছেন।তবে দুঃখের বিষয় আমি লক-ডাউনের জন্য যেতে পারতেছি না সেখানে। তবে উনি উনার গাছ নিয়ে যেভাবে কনফিডেন্সের সাথে বললেন যে, এটা প্রাকৃতিকভাবে হয়েছে, উনি কিছু করেন নাই এবং সুপার গ্লুর কথাও অস্বীকার করলেন। তাছাড়া উনি একজন সহজ-সরল গ্রাম্য কৃষক। উনি গুজব ছড়ানোর উদ্দেশ্যে এমন টা করবেন না বলে আমার মনে হয়। তবে, গুজব ছড়ানোর বা মজা নেওয়ার মতো তৃতীয় কোন পক্ষেরও তো অভাব নেই আমাদের দেশে এটাও সত্য।
তবে যদি এই ঘটনা স্থানীয় কৃষি অফিসের তদন্তে সত্য এবং সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক ঘটনা হিসেবে প্রমাণিত হয় তাহলে বলবো এটা একটি বিরল ও যুগান্তকারী ঘটনা। কৃষি বিজ্ঞানী ও কৃষিবিদদের সামনে একটি নতুন গবেষণার ও উদ্ভাবনের দিক উন্মেচিত হতে যাচ্ছে। তবে অন্তত আমাদের আরও এক সপ্তাহ সময় অপেক্ষা করতে হবে এবং নিয়মিত পর্যবেক্ষনে রাখতে হবে।
বি.দ্রঃ আমি আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে লেখাটি লিখেছি। ভুল-ভ্রান্তি মার্জনীয়।
মোঃ মাহফুজুল হাসান লুকাস
বিএসসি এজি(অনার্স)
হাবিপ্রবি, দিনাজপুর।
এমএস ইন হর্টিকালচার
বর্তমান শিক্ষার্থী
বাকৃবি, ময়মনসিংহ।