বডিবিল্ডিং অনেকেরই স্বপ্ন। সুঠাম দেহ আর সুগঠিত পেশি বর্তমান সময়ের অত্যন্ত জনপ্রিয় বাসনা। কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছেন, দেহের পেশিগুলো আসলে বড় হয় কিভাবে?
মানবদেহের পেশির সংখ্যা প্রায় ছয় শতাধিক। এর মধ্যে সাধারণত ব্যায়ামের মাধ্যমে যে পেশিগুলো বড় করা সবার লক্ষ্য থাকে সেগুলো হচ্ছে কঙ্কাল পেশি (Skeletal Muscle)।
পেশি কিভাবে বড় হয় তা জানার আগে চলুন জেনে আসি পেশি কিভাবে কাজ করে।
পেশি মূলত সংকোচন-প্রসারণের মাধ্যমে চলন, হৃদস্পন্দন,রেচন প্রভৃতি শারীরবৃত্তীয় কাজ সম্পাদন করে। মানবদেহে তিন ধরনের পেশি কাজ করে। ঐচ্ছিক, অনৈচ্ছিক এবং হৃদপেশি।
পেশির কার্যপ্রণালী একটা উদাহরণের মাধ্যমে বলি। ধরুন একটি সাধারণ কাজ, একটা দরজা খুলবেন আপনি। এর জন্য প্রথমে আপনার মস্তিষ্ক হাতের মোটর নিউরনগুলোর কাছে একটা সিগনাল পাঠাবে। সিগনাল পাওয়ার সাথে সাথেই মোটর নিউরন কাজে লেগে যাবে, সংকোচন-প্রসারণের মাধ্যমে আপনার কাঙ্ক্ষিত সঞ্চালন সম্পন্ন করবে। এখন, এই কাজটা যতই কঠিন হবে, মস্তিষ্ক থেকেও তত শক্তিশালী সিগনাল যাবে।
এই কাজটি চলার সময় আপনার পেশিতন্তুর কোষগুলোর কিছু আণুবীক্ষণিক ক্ষতি হয়, যা পেশিবর্ধণের জন্য একটি সুসংবাদ। এই ক্ষয়পূরণের জন্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে দেহের প্রতিরক্ষা তন্ত্র কাজ শুরু করবে। ক্ষয় এবং ক্ষয়পূরণের এই পর্যায়ক্রমিক চক্রের ফলেই পেশি আরও শক্ত এবং সুগঠিত হয় । ক্ষয় যত বেশি হবে, পেশিও তত বেশি বাড়বে।
এখন, যেহেতু আমাদের দেহ দৈনন্দিন কাজে অভ্যস্ত হয়ে গেছে, তাই পেশি উপরন্তু বৃদ্ধি সাধনের জন্য যথাযথ ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না। তাই, পেশি আরও বড় করতে চাইলে এদের উপর আরও চাপ প্রয়োগ করতে হবে, তথা অতিরিক্ত ভার বহন করতে হবে, যা পেশি ক্ষয় ও বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে। এ প্রক্রিয়াকে বলা হয় Muscle Hypertrophy। দেহের কোনো পেশি যদি পর্যাপ্ত চাপ না পায় তবে সময়ের সাথে সাথে ওই পেশিটি সংকুচিত হতে থাকে, যাকে বলে Muscle Atrophy। ধীরে ধীরে ওই পেশিটি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পরে।
তবে শুধুমাত্র অতিরিক্ত ওজন বহন করেই পেশি বড় করা যায় না। এর সাথে সম্পূরক হিসেবে পর্যাপ্ত পুষ্টি উপাদান, হরমোন এবং বিশ্রামের প্রয়োজন।
আমিষ পেশি গঠনকারী প্রধান উপাদান। খাদ্যতালিকায় আমিষের প্রাধান্য পেশিগঠনের পূর্বশর্ত।
টেস্টোস্টেরন হরমোন সাধারণত পেশিগঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। নারীদেহের পেশি পুরুষদের মতো বড় না হওয়ার কারণও এই টেস্টোস্টেরন এর ঘাটতি।
পেশিক্ষয় আর বৃদ্ধির পুরো ঘটনাটি কিন্তু যখন ভারোত্তোলন করা হয় তখন ঘটে না, ঘটে বিশ্রাম নেয়ার সময়। তাই পর্যাপ্ত বিশ্রাম না নিলে নিয়মিত ব্যায়াম করেও কাঙ্ক্ষিত পেশিবৃদ্ধি হবে না। প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য দৈনিক অন্তত ছয় ঘন্টা ঘুম বাধ্যতামূলক।
ক্রেডিট: তৌফিক-ই-ইলাহি