গভীর রাত, ঘড়িতে তখন বাজে ৩ টা। এমন সময় ছাদের উপর থেকে ধুপ ধাপ, ধুম ধুম শব্দ। যেন কোন প্রেতাত্মা নৃত্যে মত্ত হয়েছে। কিছুক্ষণ পর শুনা গেল মারবেল পড়ার শব্দ। আবার কখনো কখনো শিল পাটায় বাটার শব্দ, ফার্নিচার টানার শব্দও শুনা যায়। ভয়ে থর থর কাঁপুনি দিয়ে উঠে শরীর, ছাদে নিশ্চিত ভূত-পেত্নী আছে! আসলেই কি তাই? অলৌকিকভাবে এসব ঘটনা নানাভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। কিন্তু বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা কি? চলুন দেখে নেওয়া যাক:
মার্বেল পড়ার শব্দঃ--
বাসা বাড়িতে পানি বা পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য ছোট-বড় নানা আকৃতির পাইপ থাকে। দিনের তুলনায় রাতে পাইপগুলো কম ব্যবহৃত হয়। রাতে বেলা যখন হঠাৎ করে পাইপগুলো ব্যবহৃত হয় তখন পাইপের ভিতর এয়ার পকেট তৈরি হয়। তারপর এই এয়ার পকেটগুলো পাইপের ভিতর বিস্ফোরণ হয়ে শব্দের প্রতিধ্বনি সৃষ্টি করে। এই শব্দের প্রতিধ্বনি অনেকটা মার্বেল পড়ার শব্দের মত।
রাতের বেলা বাহ্যিক পরিবেশে তাপমাত্রা পরিবর্তন এর সাথে ছাদ বা বিল্ডিং এর উপরের তলার মেঝের কংক্রিট অথবা পাইপের সম্প্রসারণ ও প্রসারণ ঘটে। যখন সম্প্রসারণ ও প্রসারণ ঘটে তখন এর ফলে মার্বেল পড়ার মতো শব্দ তৈরি হতে পারে। আবার বাসায় যদি এসি থাকে তবে ঘনীভবন প্রক্রিয়ার ফলে এসির পাইপের ভিতরে পানি পড়তে থাকে, তখন সেটিও মার্বেল পড়ার শব্দ তৈরি করে। (Science Bee)
ভাইব্রেশনের জন্যও রাতের বেলা মার্বেল পড়ার শব্দ হতে পারে। আপনার প্রতিবেশী কেউ যদি রাতের বেলা ফার্নিচার, চেয়ার টানেন বা কোন বস্তু দিয়ে শব্দ করেন তখন সেই শব্দ বায়ু মাধ্যমে প্রবাহিত না হয়ে দেয়ালের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। এর ফলে দেয়ালে ভাইব্রেশনের সৃষ্টি হয় এবং এই ভাইব্রেশন থেকেই মার্বেল পড়ার মত শব্দ হয়।
ফার্নিচার টানার শব্দঃ--
এর জন্য সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য ব্যাখ্যা হচ্ছে আশেপাশের প্রতিবেশীদের বাসায় কেউ হয়তো চেয়ার বা কোন ফার্নিচার টেনে রেখেছে, তখন ফার্নিচারের নিচে রাবারের ক্যাপ না থাকায় সেই শব্দ দেয়ালের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে এসেছে। ছাদের উপর থেকে শব্দ আসছে মানে এমন না যে শব্দের উৎস ছাদই হবে। এমনও হতে পারে যে আমার মাথার উপরের ছাদের সাথে উল্লম্বভাবে বা অনুভূমিকভাবে থাকা কোন দেয়াল দিয়ে শব্দ প্রবাহিত হয়ে এসেছে। গভীর রাতে নীরব পরিবেশে শব্দ দূষণ কম থাকায় তা চেয়ার টানার শব্দকে ভৌতিক করে তুলেছে।(Science Bee)
শিল পাটায় মশলা বাটার শব্দের ব্যাখ্যা হিসেবে কিছু হাইপোথিসিস দাঁড়া করানো যায়। যেমনঃ অনেক সময় এয়ার কন্ডিশনারের কম্প্রেসারে গোলযোগ থেকে পাথর ঘষাঘষির মতো শব্দ আসে যা অনেকটা শিল পাটায় বাটার শব্দের মতোই। অথবা, আশেপাশের বাসায় কেউ হয়তো দিনে সময় না পাওয়াতে রাতে বেলাই মশলা বাটায় বসে গেছেন। এছাড়া অনেক সময় ছাদের দেয়ালে আঁচড়ের শব্দও শুনা যায়। এমন শব্দগুলো সাধারণত বিভিন্ন প্রাণীরাই করে। যেমনঃ ইঁদুর, বিড়াল, কুকুর, বাদুড়, কাঠবিড়ালি, বানর ইত্যাদি।