ত্বক বা চামড়া হচ্ছে মেরুদন্ডী প্রাণীর বহিরাঙ্গিক একটি অংশ যা প্রকৃতপক্ষে একটি নরম আবরণ এবং দেহকে আবৃত করে রাখে। এটি মানবদেহের সর্বাপেক্ষা বড় ইন্দ্রিয়। অবস্থাভেদে ত্বকের পুরুত্ব পরিবর্তিত হয়। যেমন মানুষের চোখের পাতার ত্বক সবচেয়ে পাতলা আর হাত-পায়ের তালুর ত্বক সবচেয়ে পুরু। আর মুখের ত্বক মাঝামাঝি ধরনের পুরুত্ব বিশিষ্ট।

আমি মনে করি সব বয়সেরই একটা আলাদা সৌন্দর্য আছে। আমার নানীর ভাঁজ ভাঁজ গাল দেখতে কি অপূর্বই না লাগতো ! তবে আজকাল অনেক তাড়াতাড়ি ত্বক কুঁচকে গিয়ে প্রাণহীন হয়ে যাচ্ছে। এটা একটা চিন্তার বিষয়। সাধারনভাবে চামড়ার ইলাস্টিসিটি কমে গিয়েই ত্বক কুঁচকে যায়।

আসুন জানি ত্বকের ইলাস্টিসিটি কি-
ত্বকের ইলাস্টিসিটি (elasticity) মানে হল স্কিন-এর সঙ্কোচন প্রসারণ করা এবং তাৎক্ষনিক তা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার ক্ষমতা।চামড়ার ইলাস্টিসিটি কিন্তু একদিনে নষ্ট হয় না।অনেক আগে থেকেই এই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়।
ত্বকে ভাঁজ পড়া ও চামড়া ঝুলে যাওয়া থেকে স্থায়ীভাবে পরিত্রাণের উপায় নেই। কিন্তু ত্বকের নিয়মিত যত্ন নিয়ে ত্বকে ভাঁজ পড়া ও চামড়া ঝুলে যাওয়া প্রক্রিয়াটিকে একটু দেরি করানো যায়। কম বয়সী ছেলে মেয়েদের ডারমিস-এর পুরুত্বের কারণে ইলাস্টিসিটি অনেক ভালো থাকে। অপরদিকে একটু বয়স হলেই ডারমিস-এর কার্যকারিতা কমে যায়। ত্বকের ইলাস্টিসিটি লস হওয়া প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়ম। এটি এজিং-এর সাইন। একে ইলাসটোসিস বলা হয়। কিছু কারণ আছে যার ফলে বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্কিন তার ইলাস্টিসিটি লুজ করে।
ত্বকে ভাঁজ পড়া ও চামড়া ঝুলে যাওয়ার কিছু কারণ:
সূর্যের আলোতে বেশীক্ষণ থাকা
ধূমপান
অ্যালকোহল
স্থূলতা
দ্রুত ওজন কমানো
কম খাওয়া
ত্বকের অনুপযোগী স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট ব্যাবহার করা
পানিশুন্যতা
ত্বকে প্রখর মাত্রার রাসায়নিক ব্যাবহার করা
অতিরিক্ত স্ট্রেস
জিনস
কুঁচকে যাওয়া ত্বক টানটান করতে কিছু ঘরোয়া উপায় আছে। এখন সেইগুলোই লিখছি।
মুখের ব্যায়ামঃ সৌভাগ্যক্রমে মুখের কিছু ব্যায়াম আছে যেটা নিয়মিত করলে কুঁচকে যাওয়া চামড়া টানটান হয়। চিবুকের ত্বক সবার আগে ঝুলে পরে। চিবুক টানটান করতে মুখ ভর্তি করে বাতাস নিন। ৩০ সেকেন্ড অপেক্ষা করুন। তারপর ছেড়ে দিন। ৩০ গুনতে যেই সময় লাগে সেই পর্যন্ত মুখে বাতাস রাখবেন। এভাবে দিনে ৫ বার করুন। আবার চিবুক উঠিয়ে ৩০ সেকেন্ড উপরের দিকে তাকিয়ে থাকুন। চিবুক নামিয়ে নিন। এই ব্যায়ামটি নিয়মিত করলে ত্বক ঝুলে পড়ে না। ভাঁজও হয় না।

ময়েশ্চারাইজারের ব্যাবহারঃ আপনার ত্বকের সাথে মানানসই ময়েশ্চারাইজার ব্যাবহার করুন। মেইকআপের আগে ভালো করে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে ১০ মিনিট অপেক্ষা করে বাকি মেইকআপ লাগান। রাতে ঘুমের আগে ভালো করে ত্বক পরিস্কার করে সারা মুখে ময়েশ্চারাইজার অ্যাজ নাইট ক্রিম লাগাতে পারেন। আলতো হাতে নিচ থেকে উপরে মাসাজ করুন। চোখের পাশের ত্বক সবার আগে বুড়িয়ে যায়। তাই চোখের পাশে বেশী ঘষবেন না। আমি রাতে চোখের পাশের নারকেল তেল লাগিয়ে ঘুমাই। এটা বেশ কাজ করে।

হেলদি ডায়েটঃ ত্বক টানটান রাখার সবচেয়ে ভালো ও কার্যকর উপায় উপায় হচ্ছে পুষ্টিকর খাবার খাওয়া। প্রতিদিন খাবার তালিকায় ফল ও সবজি থাকলে ত্বক আদ্র ও সুস্থ থাকে এমনিতেই। খাবারের তালিকায় গাজর, বিট এসব রাখুন। ত্বকের কোলাজেন বাড়ানোর জন্য সয়া প্রোডাক্ট খান।

হাইড্রেটেড থাকুনঃ শরীরে পর্যাপ্ত তরল জাতীয় খাবার দিন। পরিমানমতো পানি পান করুন। নিয়মিত স্নান করুন। একান্ত প্রয়োজন না গলে গরম পানি ব্যাবহার করবেন না।

সানস্ক্রিনের ব্যাবহারঃ বাইরে যাওয়ার ২০ মিনিট আগে অবশ্যই সানস্ক্রিন লাগান।

পর্যাপ্ত ঘুম ভালো ত্বকের জন্য খুব জরুরী।

ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবার খান।

ত্বক টানটান করতে ফেইসমাস্কের ভূমিকা অপরিসীম। আসুন কয়েকটি ঘরোয়া ফেইসমাস্ক দেখে ফেলি-

পেঁপে ত্বককে টানটান করেতে বেশ উপকারী। পাকা পেঁপে চটকে মুখে মাখুন। কিছু সময় রেখে কুসুম গরম পানিতে মুখ ধুয়ে ফেলুন। পাকা পেঁপে ত্বক উজ্জ্বল করতেও সাহায্য করে। পাকা পেঁপে, টক দই, চালের গুড়ো একসাথে করেও ফেইসপ্যাক বানানো যায়।

ডিমের সাদা অংশ ত্বককে টানটান করতে বেশ কার্যকর। ডিমে থাকা পুষ্টিগুণ ত্বকের অতিরিক্ত তেল বের করে দেয়। ডিমের সাদা অংশটি নিয়ে মুখে মাখুন। ত্বকে টান লাগার আগেই ধুয়ে ফেলুন।

এলোভেরার জেল প্রতিদিন মুখে মাখলে চামড়া টান টান থাকবে। রাতে ঘুমানোর সময় এলোভেরা জেল মুখে লাগিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন সকালে উঠে মুখ ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন মুখের ত্বক বেশ টান টান করবে ও কালচে দাগ উঠে যাবে। যেখানে ভাঁজ বেশি পড়েছে সেখানে পুরু করে লাগান। সারামুখে না লাগালেও চোখের দুইপাশে অবশ্যই লাগাবেন।
Tania