কোড হলো গোপন বার্তা বা গোপন সংকেত। একটি বিষয় আমাদের জানা যে, উত্তরাধিকার সূত্রে আমরা যে বৈশিষ্ট্য পাই তা এক বংশধর হতে পরবর্তী বংশধরে স্থানান্তরিত হয়। এখন প্রশ্ন হলো, এই যে বৈশিষ্ট্যের স্থানান্তর ঘটে তা কীভাবে ঘটে? উত্তর হলো, গোপন সংকেত বা গোপন কোডের মাধ্যমে। জীবের বৈশিষ্ট্য স্থানান্তরকারী এই কোডকেই বলা হয় জেনেটিক কোড। এই কোডের অবস্থান হলো কোষের DNA। অন্যদিকে ৩টি করে নিউক্লিওটাইড-এর একেকটি বিশেষ ধরনের বিন্যাস বা ট্রাইনিউক্লিয়োটাইড-এর অনুক্রম বা সিকুয়েন্সকে বলা হয় কোডন।
DNA-এর নিউক্লিওটাইডে থাকে ৪ ধরনের নাইট্রোজেনাস বেস। বেসগুলো হলো অ্যাডেনিন (A), গুয়ানিন (G), সাইটোসিন (C) এবং থাইমিন (T)। DNA অণুতে তিনটি বেস পাশাপাশি অবস্থান করে মিলিতভাবে একটি জেনেটিক কোড তৈরি করে। প্রত্যেকটি কোড ২০ ধরনের অ্যামিনো অ্যাসিডের যে কোন একটিকে নির্দেশ করে। DNA অণুর কোড করা তথ্যগুলো mRNA সাইটোপ্লাজমে বহন করে নিয়ে আসে। mRNA-র তথ্য অনুযায়ী সাইটোপ্লাজমে এনজাইম ও অন্যান্য প্রোটিনসমূহ সংশ্লেষিত হয়।
জীবের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যসমূহ প্রকাশিত হয় এই যে প্রোটিন সংশ্লেষিত হলো তারই মাধ্যমে। একাধিক কোড একটি অ্যামিনো অ্যাসিডকে কোড করতে পারে। এ ধরনের ঘটনাকে বলা হয় জেনেটিক কোডের অধোগামিতা। সুতরাং বলা যায়, নিউক্লিয়োটাইডের অনুক্রম এবং অ্যামিনো অ্যাসিডের অনুক্রমের মধ্যে যোগাযোগের পদ্ধতি হলো জেনেটিক কোড। বিষয়টিকে আমরা নিম্নলিখিত উপায়ে ব্যাখ্যা করতে পারি:
DNA অণুতে পর্যায়ক্রমিকভাবে সাজানো প্রতি ৩টি নিউক্লিয়োটাইড-এর মধ্যে একটি গোপন কোড/বার্তা/সংকেত নিহিত থাকে। এই গোপন সংকেত যখন mRNA ট্রান্সক্রাইব হয় তখন DNA থেকে mRNA-তে চলে আসে। DNA এর ৩টি নিউক্লিয়োটাইডের বিপরীতে ৩টি কমপ্লিমেন্টারি নিউক্লিয়োটাইড mRNA-তে সজ্জিত হয়। এই ৩টি কমপ্লিমেন্টারি নিউক্লিয়োটাইডকে একত্রে ট্রিপলেট বলা হয়। আর mRNA অণুর এই ট্রিপলেটকে কোডন (Codon) বলে।
জেনেটিক কোড যে তিন অক্ষর বিশিষ্ট বা ট্রিপলেট কোড তা সর্বপ্রথম প্রমাণ করেছিলেন ফ্রান্সিস ক্রিক এবং তাঁর সহকর্মীবৃন্দ। ২০ ধরনের অ্যামিনো অ্যাসিডের জন্য ৬৪ ধরনের ট্রিপলেট কোড আবিষ্কার করেন নিরেনবার্গ এবং তাঁর সহকর্মীরা ১৯৬৪ সালে।
প্রতিটি ট্রিপলেট কোড দ্বারা একটি সুনির্দিষ্ট অ্যামিনো অ্যাসিড নির্দেশিত। এই অ্যামিনো অ্যাসিড tRNA এর মাধ্যমে পলিপেপটাইড চেইন এর সাথে যুক্ত হয়ে প্রোটিন তৈরিতে অংশগ্রহণ করে। tRNA তে ৩টি নিউক্লিয়োটাইডের যে ট্রিপলেট mRNA এর সম্পূরক ট্রিপলেট তথা কোডনের সাথে যুক্ত হতে পারে তাকে অ্যান্টিকোডন (anticodon) বলা হয়।
কোডনগুলোকে RNA গঠনকারী চারটি নাইট্রোজেনঘটিত বেস অ্যাডেনিন, গুয়ানিন, সাইটোসিন ও ইউরাসিল-এর প্রতিনিধিত্বকারী অক্ষর A, G, C ও U এর মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। এই চারটি বেস লেটার বিভিন্ন কম্বিনেশনের মাধ্যমে ৬৪টি কোডন তৈরি করে। এদের মধ্যে ৩টি কোডন UAA, UAG, UGA কে বলা হয় সমাপ্তি কোড কারণ এরা কোন অ্যামিনো অ্যাসিডকে নির্দেশ করে না, এরা ট্রান্সলেশন বন্ধের নির্দেশ দান করে। বাকি ৬১টি কোডন-এর প্রত্যেকটি কোনো না কোনো অ্যামিনো অ্যাসিডকে নির্দেশ করে। এর মধ্যে আবার AUG একই সাথে মেথিওনিন অ্যামিনো অ্যাসিডকে নির্দেশ করে এবং ট্রান্সলেশন শুরুর নির্দেশ প্রদান করে। কোড এর ভাষা একমুখী, নিউক্লিক অ্যাসিড হতে প্রোটিনের দিকে।
যদিও কোনো কোনো অ্যামিনো অ্যাসিডের জন্য একটি মাত্র সুনির্দিষ্ট কোড থাকে, অনেক অ্যামিনো অ্যাসিড ২টি, ৩টি, ৪টি এমনকি ৬টি পর্যন্ত কোড দিয়ে নির্ধারিত হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, লাইসিন এর জন্য ২টি, ভ্যালিন এর জন্য ৪টি এবং আরজিনিন এর জন্য ৬টি কোড থাকে। জেনেটিক কোডের সম্পূর্ণ অর্থ জানা সম্ভব হয় ১৯৬৬ সালে। জেনেটিক কোডের অর্থ উদ্ধারের স্বীকৃতি হিসেবে নিরেনবার্গ ও হরগোবিন্দ খোরানা নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন ১৯৬৯ সালে।
©️quora-Mohamed Jubaier Hasan