Sleepwalking and sleepwalkers.
ঘুমের মধ্যে হাঁটাহাঁটি করাকে বলা হয় ‘স্লিপওয়াকিং’। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে ‘সোমনামবুলিসম’ বা ‘নকচামবুলিসম’।
স্লিপওয়াকিং কিন্তু কোনো অসুখ নয়। বরং মানুষের অবচেতন মনের কাজ। অধিকাংশ স্লিপওয়াকারই কিন্তু ঘুম ভাঙার পর আর মনে করতে পারে না, ঘুমের মধ্যে সে আসলে কী কী করেছিল। যদিও-বা মনে থাকে, খুবই আবছা। তবে একে অসুখ না বললেও, সমস্যা তো বলতেই হয়। ঘুমের মধ্যে হাঁটতে হাঁটতে কে কী করে বসে, তার কি ঠিক আছে!
১.কীভাবে হয় স্লিপওয়াকিং:
-ঘুমের স্তর মূলত ৪টি। প্রথম তিনটি স্তরকে আলাদা কোনো নামে ডাকা হয় না; বলা হয় প্রথম স্তর, দ্বিতীয় স্তর ও তৃতীয় স্তর। তবে চতুর্থ স্তরটিকে আলাদা নামে ডাকা হয়-- রেপিড আই মুভমেন্ট। ঘুমের এই স্তরে আসলে ঘুমের মধ্যেই মানুষের চোখ নড়াচড়া করতে থাকে।
এই চতুর্থ স্তরের আলাদা করে নাম দেওয়ার কারণ, ঘুমের এই স্তরটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর এই স্তরে এসেই মানুষ স্বপ্ন দেখে। এই স্তরে কাউকে ঘুম থেকে জাগানোটাও খুব কঠিন। যদি কারও ঘুম ভেঙেই যায়, তাহলে সে কেমন একটা ঘোরের মধ্যে থাকে। তখন সে কী করছে, তা একদমই খেয়াল থাকে না।
স্লিপওয়াকিংয়ের ঘটনাও ঘটে এই স্তরে। ছোটদের ক্ষেত্রে সাধারণত ঘুমানোর এক থেকে দেড় ঘণ্টার মধ্যেই আরইএম বা রেপিড আই মুভমেন্ট শুরু হয়। আর তা কয়েক সেকেন্ড থেকে দু-এক মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। অবশ্য ঘুমের মধ্যে আরইএম শুধু একবারই হয় না, বেশ কয়েকবার হয়ে থাকে।
২.কাদের হয়, কেন হয়:
-বড়দের তুলনায় ঘুমের মধ্যে হাঁটাহাঁটি ছোটরাই বেশি করে। বিশেষ করে কৈশোর পেরুবার সময় অনেকেরই স্লিপওয়াকিংয়ের সমস্যা দেখা যায়। তবে বাবা-মায়ের কারও যদি কখনও স্লিপওয়াকিংয়ের সমস্যা হয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে সন্তানের স্লিপওয়াকিংয়ের সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, বাবা অথবা মা যে কোনো একজন স্লিপওয়াকার হলে, ৪৫ শতাংশ ক্ষেত্রেই তাদের বাচ্চারা স্লিপওয়াকার হয়। আর দুজনই হলে, সন্তানের স্লিপওয়াকার হওয়ার সম্ভাবনা ৬০ শতাংশ।
এছাড়াও আরও নানা কারণে স্লিপওয়াকিং হতে পারে। ঘুম কম হলে, বা অনিয়মিতভাবে ঘুমালে স্লিপওয়াকিং হতে পারে। আবার জ্বর বা অন্য কোনো শারীরিক অসুস্থতার কারণে, কিংবা মানসিক চাপের কারণেও স্লিপওয়াকিং হতে পারে।
৩.স্লিপওয়াকিং এর সময় মানুষ কী করে:
-সবচেয়ে বেশি দেখা যায় যে বিছানা থেকে উঠে হাঁটাহাঁটি করা। তবে স্লিপওয়াকিংয়ের ক্ষেত্রে আরও নানা ব্যাপার ঘটতে পারে। কেউ কেউ ঘুমের মধ্যে কথাও বলে।
বেশিরভাগ সময়ই দেখা যায়, স্লিপওয়াকিংয়ের সময় স্লিপওয়াকার একটা ঘোরের মধ্যে থাকে। চোখও তন্দ্রাচ্ছন্ন থাকে। কিছু বললে সেটা বুঝতেও পারে না, উত্তরও দিতে পারে না। কারও কারও ক্ষেত্রে দেখা যায়, তারা বারবার একই কাজ করছে; যেমন, বারবার চোখ ডলা বা পাজামা ধরে টানাটানি করা। অনেকে আবার ঘুমের মধ্যেই বাথরুম মনে করে ঘরের মধ্যেই প্রস্রাব করে দেয়। অনেকে তো আবার বিছানাতেই প্রস্রাব করে দেয়।
আর স্লিপওয়াকিংয়ের সময় চোখ খোলা থাকবে না বন্ধ থাকবে, তারও কোনো ঠিক নেই। কারও কারও চোখ খোলা থাকে, আবার কারও কারও চোখ থাকে বন্ধ।
৪.কীভাবে নিরাপদ থাকা যায়:
স্লিপওয়াকিং কোনো অসুখ নয়। ঘুমের মধ্যে হাঁটা শারীরিক বা মানসিক কোনো ক্ষতিও করে না। তারপরও এটা একটা সমস্যাই বটে। কারণ আর কিছুই নয়, ঘুমের মধ্যে হাঁটার সময় তো মানুষের চেতনা থাকে না। কাজেই তখন যে কোনো বিপদই ঘটতে পারে। কেউ হয়তো হাঁটতে গিয়ে বিছানা থেকে পড়ে গেল। কিংবা কেউ পড়ে গেল সিঁড়ি থেকেই। হাঁটতে হাঁটতে এমনকি ঘরের বাইরে বা রাস্তায়ও চলে যেতে পারে। করে বসতে পারে বিপজ্জনক কিছু। আর যেহেতু স্লিপওয়াকিং বাচ্চাদের ক্ষেত্রেই বেশি হয়, সে ক্ষেত্রে সেটা একটু বেশিই বিপজ্জনক।
তাই স্লিপওয়াকিং থেকে কীভাবে নিরাপদ থাকা যায়, সেটাও জেনে রাখা দরকার। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে জরুরি হল, ঘরের দরজা-জানালা ভালো করে বন্ধ রাখা। প্রয়োজনে অতিরিক্ত তালাও ব্যবহার করা যেতে পারে। ঘরে কাচের বা ভঙ্গুর কোনো কিছু না রাখাই ভালো। মেঝেতে উঁচু কিছু রাখাও ঠিক না, তাতে হোঁচট খাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। রাখা যাবে না আগুন জ্বালানোর কোনো সরঞ্জামও। আর বিছানাটাও হওয়া উচিত একটু নিচু, যাতে পরে গেলেও বেশি ব্যথা না লাগে।
তবে আরও ভালো হয়, যদি স্লিপওয়াকিং বন্ধ করা যায়। সে জন্য কিছু কৌশল প্রয়োগ করে দেখা যেতে পারে। যেমন, ঘুমের আগে হালকা ধাঁচের গান শোনা, নিয়ম মতো ঘুমানো ইত্যাদি। আর ঘুমানোর আগে চা, কফি বা পানি পান না করাই ভালো।
স্লিপওয়াকারদের আশপাশের মানুষদেরও কিছু করণীয় আছে। প্রথম করণীয় হল, স্লিপওয়াকার ঘুমিয়ে গেলে আশপাশে খুব বেশি শব্দ না করা। আর কেউ যদি স্লিপওয়াকিং শুরু করেই দেয়, হঠাৎ করে না জাগিয়ে আস্তে আস্তে বিছানায় নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দেওয়াই ভালো। ঘুম ভাঙাতে গেলে সে ভয়ই পেয়ে যেতে পারে।
তবে স্লিপওয়াকিং যদি একটু বেশি-ই হয়, কিংবা কৈশোর পেরিয়ে যাওয়ার পরও যদি স্লিপওয়াকিং বন্ধ না হয়, সে ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।