মানুষের চেহারা, শারীরিক গঠন ও আচরণ নির্ধারিত হয় তার জিন (DNA)-এর মাধ্যমে। প্রতিটি মানুষ তার বাবা ও মায়ের কাছ থেকে ২৩টি করে মোট ৪৬টি ক্রোমোজোম পায়, যা তার জিনগত গঠন নির্ধারণ করে। এই ক্রোমোজোমগুলোর মধ্যে থাকা নির্দিষ্ট জিনসমূহ চেহারার বৈশিষ্ট্য, যেমন: চোখ, নাক, মুখের গঠন, চুল ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করে। সন্তান জন্মের সময় শুক্রাণু ও ডিম্বাণু তৈরির সময় জেনেটিক রিকম্বিনেশন ও অন্যান্য কিছু প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রতিবারই একদম নতুন জিনগত কম্বিনেশন তৈরি হয়, যা প্রতিটি মানুষকে অনন্য করে তোলে।
এই প্রাকৃতিক জিনগত বৈচিত্র্যের কারণেই একজন পুরুষ ও একজন নারীর মাঝে প্রায় ৬৪ ট্রিলিয়ন ভিন্ন ভিন্ন জেনেটিক কম্বিনেশন সম্ভব, যার ফলে পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ দেখতে আলাদা হয়। তবে এত বিপুল সম্ভাবনার মাঝে কিছু কিছু মানুষ দেখতে কাছাকাছি হয়ে যেতে পারে, যাদের বলা হয় 'ডোপেলগ্যাঙ্গার' (Doppelganger)। এদের মধ্যে রক্তের কোনো সম্পর্ক না থাকলেও মুখাবয়বের গঠন, চোখের আকৃতি বা অন্যান্য বৈশিষ্ট্যে মিল পাওয়া যায়।
তবে হুবহু চেহারার মিল সাধারণত শুধুমাত্র একই ডিম্বাণু ও একই শুক্রাণু থেকে জন্ম নেওয়া আইডেন্টিক্যাল জমজদের (identical twins) মধ্যেই দেখা যায়, কারণ তাদের DNA একদম একরকম হয়। অন্য সব ক্ষেত্রে চেহারার মিল ঘটলেও সেটা নিছক জেনেটিক কাকতালীয়তা (genetic coincidence) মাত্র। পরিবেশ, খাদ্যাভ্যাস ও এপিজেনেটিক পরিবর্তনের কারণে দেহের বাহিরের অংশে ভিন্নতা আসে। তাই পৃথিবীতে হুবহু একই চেহারার মানুষ পাওয়া অত্যন্ত বিরল, কিন্তু মিল থাকাটা বৈজ্ঞানিকভাবে পুরোপুরি সম্ভব।