## **রক্তের সম্পর্ক না থাকা সত্ত্বেও মানুষের চেহারা মিলের বৈজ্ঞানিক কারণ**
আমরা প্রায়ই দেখি, সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিবার বা অঞ্চলের দুই ব্যক্তি দেখতে আশ্চর্যজনকভাবে একরকম। বিজ্ঞান এ ঘটনাকে ব্যাখ্যা করে কয়েকটি কারণে—যা জিনগত, পরিবেশগত, বিকাশজনিত ও মানসিক প্রক্রিয়ার মিলিত প্রভাব।
### ১) **বহুজিনগত প্রভাব**
মানুষের মুখের গঠন এক বা দুটি নয়, শতাধিক জিনের সম্মিলিত প্রভাবে নির্ধারিত হয়। আলাদা আলাদা জিনের সংমিশ্রণ থেকেও একই ধরনের মুখের বৈশিষ্ট্য গড়ে উঠতে পারে। অর্থাৎ ভিন্ন জিনগত বিন্যাস থেকেও প্রায় একই ফেনোটাইপ (বাহ্যিক রূপ) পাওয়া সম্ভব।
### ২) **বিকাশজনিত সীমাবদ্ধতা**
শিশু অবস্থায় মুখমণ্ডলের হাড়, চোখ, নাক ও চোয়ালের গঠন একটি নির্দিষ্ট ধারা অনুসরণ করে। প্রকৃতির এই নির্দিষ্ট “পথ” বা ধারা মুখের সম্ভাব্য আকৃতির পরিসরকে সীমিত করে দেয়। ফলে পৃথিবীতে এত মানুষের মাঝেও অনেকের মুখের বৈশিষ্ট্য কাছাকাছি হতে পারে।
### ৩) **দূরবর্তী বংশগত মিল**
মানুষের মধ্যে হাজার বছরের পুরোনো বংশগত সংযোগ বিদ্যমান। একই ভৌগোলিক অঞ্চলে জন্ম নেওয়া মানুষের জিনগত বৈশিষ্ট্যের মিল থাকার সম্ভাবনা বেশি। তাই রক্তের সরাসরি সম্পর্ক না থাকলেও মুখাবয়বে সাদৃশ্য দেখা দিতে পারে।
### ৪) **পরিবেশ ও জীবনধারা**
খাদ্যাভ্যাস, পুষ্টি, জলবায়ু, রোগ-ব্যাধি, এমনকি হরমোনের প্রভাবও মুখের গঠন ও ত্বকের বৈশিষ্ট্যে প্রভাব ফেলে। একই ধরনের পরিবেশে বেড়ে ওঠা দুই ব্যক্তি অনেক সময় একই ধরনের শারীরিক বৈশিষ্ট্য অর্জন করে।
### ৫) **বাহ্যিক উপাদান**
চুলের স্টাইল, দাড়ি-গোঁফ, মেকআপ, চশমা বা পোশাকও মুখের মিল বাড়িয়ে তোলে। একই ধরনের সাজসজ্জা বা অভিব্যক্তি থাকলে দুইজনকে দেখতে আরও বেশি একরকম মনে হয়।
### ৬) **সম্ভাবনার নিয়ম**
পৃথিবীতে প্রায় ৮০০ কোটি মানুষ রয়েছে। এত বড় সংখ্যার মধ্যে কিছু মানুষের মুখের গঠন প্রায় অভিন্ন হওয়া সম্ভাবনার নিয়মেই ঘটে—এটা বিরল কোনো ঘটনা নয়।
### ৭) **মানুষের মস্তিষ্কের মুখ চেনার ধরন**
আমাদের মস্তিষ্ক মুখ চিনতে গিয়ে কয়েকটি মূল বৈশিষ্ট্য—যেমন চোখ, নাক ও মুখের অনুপাত—একসাথে মিলিয়ে দেখে। এই প্রক্রিয়ায় সামান্য মিলও অনেক সময় আমাদের কাছে “হুবহু একই” মনে হয়।