উত্তরঃনা।(কোন রকম জন্মনিরোধক ব্যবস্থা ছাড়াও)।
তবে এই বিষয়টি বুঝতে হলে আমাদের রজঃচক্র বিষয়টা সম্পর্কে একটু জানতে হবে।এই গ্রুপেই এ সম্পর্কে বিস্তারিত পোস্ট রয়েছে,তবুও কিছুটা summarized version দেখে নেয়া যাক।
নারীদের জরায়ুর তিনটি স্তর রয়েছে পেরিমেট্রিয়াম(পেরি মানে প্রান্ত,মেট্রিয়াম মানে জরায়ু,সুতরাং জরায়ুর প্রান্তের স্তর),মায়োমেট্রিয়াম(মায়ো মানে পেশী,অর্থাৎ জরায়ুর এই স্তরে পেশী থাকবে এবং মাঝে থাকবে),এন্ডোমেট্রিয়াম(এন্ডো মানে ভিতরে,সুতরাং জরায়ু ভিতরের স্তর)।
ধরা যাক,কোন নারীর পিরিয়ড সবেমাত্র শেষ হল,এখন তার এন্ডোমেট্রিয়াম কম পুরু হয়ে থাকবে।
কিন্তু সে কম পুরু থাকতে চায় না,সে মোটা হতে চায়।এই কাজটি তাই শুরু হতে থাকে, ইস্ট্রোজেন হরমোন প্রাথমিকভাবে এন্ডোমেট্রিয়ামের স্তর বাড়াতে থাকে। অন্যদিকে ফলিকল স্টিমুলেটিং হরমোন(FSH),ডিম্বাশয়ের ভিতরে তার কাজ চালাবেন,ডিম্বাশয়ের ভিতরে এই হরমোনটি ফলিকলকে পরিণত করতে থাকবে,উদ্দেশ্য ফলিকল হতে ডিম্বাণু তৈরি করা।আর এই কার্যক্রম চলবে প্রায় ৬ষ্ঠ দিন পর্যন্ত।তারপর থেকে এন্ডোমেট্রিয়াম আরও বাড়তে থাকবে,পাশাপাশি এন্ড্রোমেট্রিয়ামের কৈশিক জালিকাগুলোও বৃদ্ধি হতে থাকবে।এভাবে চলতে থাকবে। FSH এর প্রভাবে ফলিকল থেকে প্রথমে প্রাইমারি ফলিকল,তারপর সেকেন্ডারি ফলিকল এবং পরিশেষে গ্রাফিয়ান ফলিকল তৈরি হবে।১৪ তম দিনে পরিণত গ্রাফিয়ান ফলিকল হতে সেকেন্ডারি উওসাইট(বা ডিম্বাণু) পড়ে যাবে,আর এই ঘটনাটিকে ডিম্বপাত,তখন সেই ডিম্বাণুকে ডিম্বাশয় বের করে দেয়,কিন্তু ফিমব্রি তাকে কাছে টেনে নেয়।ফ্রিমবিতে প্রবেশ করে ইনফান্ডিবুলাম হয়ে অ্যাম্পুলাতে ডিম্বাণু অবস্থান নেয়।ডিম্বাণুকে হারিয়ে গ্রাফিয়ান ফলিকল একা হয়ে যায়।তাই তাকে আবার আপন করে লুটিনাইজিং হরমোন(LH),লুটিনাইজিং হরমোন তাকে কর্পাস লুটিয়ামে পরিণত করে।এটি আবার প্রোজেস্টেরণ হরমোন নিঃসৃত করে,ফলে এন্ডোমেট্রিয়াম আরও বাড়তে থাকে।এখন একটা ব্যস্তানুপাতিক সম্পর্ক লক্ষ্য করা যাবে।প্রোজেস্টেরণ বাড়লে LH ক্ষরণ করবে,LH দূরে চলে যেতে থাকলে কর্পাসলুটিয়াম জীবনের আগ্রহ হারয়ে ফলবে,ফলে ধীরে ধীরে সেও নিজের অস্তিত্ব বিলীন করতে থাকবে।প্রোজেস্টেরণ ক্ষরিত হবে কর্পাস লুটিয়াম থেকে যদি কর্পাস লুটিয়াসই বিলীন হতে থাকে,তাহলে প্রোজোস্টেরেণ নিঃসরণ কমে যাবে। ইস্ট্রোজেনও কমে যাবে।একদম ২৮ তম দিন পর্যন্ত এই কার্যকলাপ গুলো চলবে। হরমোনগুলো না পেলে এন্ডোমেট্রিয়ামের স্তর আর মোটা হতে পারবে না,সে ব্রোকেন() হবে তখন তার স্তর ভাঙতে শুরু করবে,এবং শেষের ৪-৫ দিন এন্ডোমেট্রিয়ামের পুরু স্তর ভেঙে যাবার ফলে ধমনীর কৈশিক জালিকাগুলোও ভাঙতে থাকবে যার জন্য ব্লিডিং হতে থাকে(যাকে পিরিয়ড বলি)।পিরিয়ডের সাথে অনিষিক্ত ডিম্বাণু ও পড়ে যাবে।
গেল এই ঘটনা।এখন খেয়াল কর,শুক্রাণু ডিম্বাণুর সাথে মিলিত হলেই কেবল নিষেক ঘটতো,অন্যথায় তা হবেনা,কিন্তু শুক্রাণু ডিম্বাণুর কাছে পৌঁছাবে কীভাবে?সে তো আর ডিম্বাশয়ে যেয়ে মিলিত হতে পারবে না।তো কোথা দিয়ে যাবে?
চিত্রটি একটু দেখো।মিলনের সময় শুক্রাণু নারী জননাঙ্গের Vagina পথ আরও সহজ করে বলতে গেলে Lebia Minora দিয়ে প্রবেশ করে জরায়ুতে যাবে। কিরে ভাই,Lebia Minora কী??
Lebia Minora শব্দটার Lebia অর্থ Lip বা ঠোট,নারী Vagina পথের সম্মুখটা ঠোঁট আকৃতির,আর Minora মানে ছোট,অর্থাৎ ঠোঁটের মতো থাকবে, বোঝা যাচ্ছে। এখন শুক্রাণু Vagina দিয়ে জরায়ুতে যাবে।এখনই বোঝার বিষয়,শুক্রাণু থেমে থাকবে না, সে ফেলোপিয়ান নালীর(ফিমব্রি থেকে শুরু করে ইসথমাস পর্যন্ত এই নালী) দিকে অগ্রসর হবে।আর এই নালীর ঐ অম্পুলাতে ডিম্বাণু পেলে শুক্রাণু, তার এনজাইমের(হায়ালিউরোনিডেজ এনজাইম) সাহায্যে,জোনা পেলুসিডা,করোনা রেডিয়াটা(এগুলো ডিম্বাণুতে প্রটেকশন দেয়)ভেদ করে ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করে,যা প্রাণের সৃষ্টি করে।
এখন অ্যাম্পুলাতে যদি ডিম্বাণুই না থাকে তবে কী নিষেক ঘটবে?না।
আগেই বলেছি,ডিম্বাণু যে ডিম্বাশয় ভেদ করবে এমনও না।আর ডিম্বাণু রেডিমেড অবস্থায় থাকবে অ্যাম্পুলাতেই।এখন অ্যাম্পুলাতে কখন ডিম্বাণু থাকবে বা থাকবেনা?একটু ভাবো।
এখন আবার একটু রজঃচক্রে ফিরি, পিরিয়ডের পর ১-৬ বা ৭(অনেকের ক্ষেত্রে সেম নাও হতে পারে,টাইম রেঞ্জ কারো কম বেশীও হতে পারে) দিন পর্যন্ত কিন্তু ডিম্বাণু তৈরি হবার প্রসেস চলতে থাকে,সে অবস্থায় অ্যাম্পুলাতে ডিম্বাণু থাকার সম্ভবনা থাকে কি?উঃনা।
কারণ পিরিয়ড হলে অনিষিক্ত ডিম্বাণু রক্তের সাথে বেরিয়ে যায়।
আবার ৭-২১ দিন এসময়টাতে ডিম্বাণুর রেডিমেড হবার কাজ শেষ হতে থাকে,কেননা ১৪ তম দিনে ডিম্বপাত হয এবং ডিম্বাণু অ্যাম্পুলাতে যায় ফিমব্রি হয়ে।এখন এই সময়টাতে মিলনের ফলে গর্ভধারণের সম্ভাবনাটা থেকে যায়।তবে আবার ২১-২৮ দিন এই সময়টাতে অ্যাম্পুলাতে ডিম্বাণু থাকবে না।কেন থাকবে না?কারণ সে নিষিক্ত হতে পারে নি, ফলে সে জরায়ুতে চলে যাবে এবং মাসিকের রক্তের সাথে পিরিযড পর্ব চলাকালীন সময়ে বেরিয়ে যাবে।সুতরাং এ সময়টাতে যেহেতু অ্যাম্পুলাতে ডিম্বাণু থাকবে না,সেহেতু শুক্রাণু নিষিক্তকরণের বিষয়টা ঘটার সম্ভবনা প্রায় নেই বললেই চলে।
সুতরাং,পিরিয়ড শেষ হবার পর প্রথম সপ্তাহ অর্থাৎ ১-৬ বা ৭ দিন এবং শেষের ২১-২৮ দিন(ঠিক পিরিয়ড পর্বের আগের সময়টা)মিলনের ফলে Pregnancy হবার সম্ভাবনা খুব কমই বলা চলে।
[তবে ব্যাপারগুলো সব মেয়ের ক্ষেত্রে যে হবে এমনটাও কিন্তু নয়।]
Rajib Saha