দয়া করে আপনার মোবাইল ফোনসহ অন্যান্য বহনযোগ্য ইলেকট্রনিক্স পণ্য ফ্লাইট মোডে রাখুন। বিমানে এ ঘোষণা গোটা বিশ্বে হাজার হাজার ফ্লাইটে ঘোষিত হতে থাকে। আকাশে উড়াল দেওয়ার আগে যাত্রীরা প্রতিদিনই এই অজুহাত শুনে থাকেন। কিন্তু অনেকেই শতভাগ নিশ্চিত না, এই ঘোষণা কেন দেওয়া হয়?
সাধারণভাবে সবাই ধরে নেন, বিমান আকাশে ওড়ার আগে মোবাইল ফোন অবশ্যই বন্ধ করতে হয়। কারণ, এর সিগনাল বিমান চালনার সময় নেভিগেশন সিস্টেমে সমস্যা সৃষ্টি করবে। এতে ফ্লাইট ক্র্যাশও করতে পারে। কিন্তু আসলে কি এ ঘটনা সত্য?
বিমানচালক এবং ককপিট কনফিডেনশিয়াল বইয়ের লেখক প্যাট্রিক স্মিথ জানান, কৌশলগতভাবে এ ঘটনা সত্য। তবে আরো কারণ রয়েছে। এটা নির্ভর করে গ্যাজেটের ধরন এবং কিভাবে ও কখন ব্যবহার করা হচ্ছে। যেমন- ল্যাপটপ। এমনকি পুরনো একটি কম্পিউটার থেকেও ক্ষতিকর শক্তি নিঃসৃত হয়।
আর প্রতিনিয়ত প্রয়োজনীয় স্মার্টফোনের ব্যবহারও ককপিটের প্রযুক্তিতে ঝামেলা সৃষ্টি করতে পারে। আবার সার্বিক অর্থে বিষয়টি এতটা ঝামেলাপূর্ণ নয়।
প্যাট্রিক জানান, বিমানের যন্ত্রপাতি এমনভাবে তৈরি হয় যেন তার কাজে মোবাইল ফোন বা অন্য কোনো প্রযুক্তিপণ্যের ফ্রিকোয়েন্সি সমস্যা সৃষ্টি করতে না পারে। এখন পর্যন্ত আসলে কোনো ঘটনা ঘটে যে মোবাইলের কারণে ককপিটের যন্ত্রপাতি সমস্যা করেছে। মোবাইল ব্যবহার না করা অবস্থাতেও এমন সমস্যা হতে পারে। তাই একে অবশ্যই ফ্লাইট মোডে নিতে বলা হয়। এ ঘোষণা দেওয়ার পরও প্রায় অর্ধেক যাত্রীর ফোন ফ্লাইট মোডে নেওয়া হয় না। আসলে মোবাইলকে তেমন ভয়ংকর বলে মনে করা হলে এগুলো ফ্লাইট মোডে নিতে আরো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতো।
তবে দুটো বিমান দুর্ঘটনার পেছনে মোবাইল ফোন রয়েছে। ২০০০ সালে সুইজারল্যান্ডে ক্রোসাইর প্লেন ক্র্যাশের ঘটনা একটি। মোবাইলের ট্রান্সমিশন বিমানের অটোপাইলটকে এলোমেলো করে দেয়। আরেকটি ২০০৩ সালে নিউ জিল্যান্ডের ক্রাইস্টক্রাঞ্চের বিমান দুর্ঘটনা।
একটি ব্লগে এক পাইলট লিখেছেন, একবার তার হেডসেটে একটি সিগনাল বার বার আসছিল। এটা হচ্ছিল কারো মোবাইল ফোনের কারণে। এটা দুর্ঘটনা ঘটার মতো নয়। তবে যথেষ্ট বিরক্তিকর। যদি ৫০ জন যাত্রীর মোবাইল এভাবে সমস্যার সৃষ্টি করে, তবে সত্যিকার অর্থে বিমানের রেডিও দূষণ দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে।
তাই প্রযুক্তিগত ধারণা অনুযায়ী, ফোন বিমানের যন্ত্রপাতির কাজকে কিছুটা বিঘ্নিত করতে পারে। তবে তার মাত্রা খুবই কম। তা ছাড়া যদি মোবাইল ফ্লাইট মোডে নেওয়ার ঘোষণা না দেওয়া হয়, তবে যাত্রীরা মোবাইল ব্যবহাররে অধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন। কিছু যাত্রী ব্যবহারে জোরজবরদস্তি করবেন, আবার কিছু যাত্রী এর বিরোধিতা করতে থাকবেন। এতে আকাশে যাত্রীদের মাঝেই দেখা দেবে গোলযোগ। সূত্র : টেলিগ্রাফ