আচ্ছা কখনো কি ভেবে দেখেছেন কেন আপনার চুল কোঁকড়া, আর ঠিক পাশের মানুষটির চুল সোজা? অথবা কেন একটি পরিবারের সবগুলো মানুষের চুল সোজা, আবার অন্য একটি পরিবারের মানুষগুলোর সবার চুল একই রকম কোঁকড়া? ঠিক কি কারণে মানুষের চুলের কাঠামো ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতে বিজ্ঞানীদের নিজেদের চুল ছিঁড়ে ফেলার সময় বুঝি শেষ হয়ে এলো। কারণ এই প্রথম একটি কোঁকড়া চুলের ত্রিমাত্রিক মডেল তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। চলচ্চিত্র, বিশেষ করে অ্যানিমেশনের ক্ষেত্রে এই আবিষ্কার অন্য রকম পরিবর্তন আনতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এর আগে বিজ্ঞানীরা গাণিতিকভাবে কখনো ব্যাখ্যা করতে পারেননি ঠিক কিভাবে কোঁকড়া চুল নড়াচড়া করে, কেনই বা মানুষের চলাফেরার সাথে লাফিয়ে ওঠে কোঁকড়া চুলের গোছা। এ কারণে আগে যখনই অ্যানিমেটেড চরিত্র তৈরি করা হয়েছে, তাদের চুল হয় ছিলো একেবারে সোজা অথবা সেই চুল কেবল একপাশ থেকে আরেক পাশে নড়াচড়া করতে পারতো। এখন কোঁকড়া চুলের পেছনে লুকিয়ে থাকা পদার্থবিদ্যা নিয়ে নাড়াচাড়া করছেন MIT,Cambridge, Mass., এবং প্যারিসের Université Pierre-et-Marie-Curie (UPMC) এর গবেষকেরা। কি করে তৈরি করা হলো কোঁকড়া চুলের এই মডেল? বিভিন্ন মাত্রায় বাঁকানো স্থিতিস্থাপক রড দিয়ে কোঁকড়া চুলের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হয়। এই গবেষণায় শুধুমাত্র একটি কোঁকড়া চুল কিভাবে কাজ করে, তা দেখা হয়। কিন্তু একমাথা ঝাঁকড়া, কোঁকড়া চুল কিভাবে নড়াচড়া করবে, তার কোনো “ফর্মুলা” এখনো বলা যাচ্ছে না। তবে এই গবেষণার সাথে জড়িত পেদ্রো রেইস বলেন, বিভিন্ন মাত্রায় কোঁকড়ানো চুলের বৈশিষ্ট্য এবং চুলের দৈর্ঘ্য বাড়ার সাথে সাথে তার কোঁকড়া হবার পরিমাণ কিভাবে পরিবর্তিত হয় তা জানা গেছে এই গবেষণায়। রেইস তার গবেষণা আসলে কোঁকড়া চুলের ব্যাপারে শুরু করেননি। ল্যাবরেটরিতে বাঁকানো নমনীয় রড পর্যবেক্ষণ করতে করতেই তিনি ভাবেন, তার সাথে রয়েছে মাথা থেকে ঝুলতে থাকা কোঁকড়া চুলের অনেক বৈশিষ্ট্যের মিল! নিজেদের ল্যাব ডেমনস্ট্রেশনের পাশাপাশি কম্পিউটার সিমুলেশন মিলিয়ে তারা কোঁকড়া চুলের বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য ধরে ফেলতে সক্ষম হন যেমন বাঁকানোর মাত্রা, ওজন, দৃঢ়তা ইত্যাদি। এসব তথ্য যদি কম্পিউটারে দিয়ে দেওয়া হয়, তবে সেই ফর্মুলা অনুযায়ী একটা কোঁকড়া চুলের মডেল তৈরি করে ফেলা যাবে নিখুঁতভাবে। এমনকি এই ফর্মুলার যে কোনো একটি তথ্যে যদি পরিবর্তন আনা হয়, তবে চুলের কাঠামো পরিবর্তিত হয়ে যাবে। একটি চুলের যে কোনো একটি অংশ কোঁকড়ানো থাকলে তাকে নাম দেওয়া হয় “লোকালাইজড হেলিক্স। পুরো চুলটি যদি কোঁকড়ানো থাকে তবে তাকে বলা হয় “গ্লোবাল হেলিক্স”।
চুলের এসব তথ্যে পরিবর্তন আসলে সাধারণ একটি দ্বিমাত্রিক বাঁকানো অংশ থেকে শুরু করে একটি চুল হয়ে উঠতে পারে ত্রিমাত্রিক লোকাল হেলিক্স এবং তা থেকে ত্রিমাত্রিক গ্লোবাল হেলিক্স। এ পরিবর্তন আসতে পারে তখন যখন চুল নড়াচড়া করানো হয়। এছাড়াও জানা যায়, চুলের দৈর্ঘ্য এবং দৃঢ়তার তুলনায় যদি তার ওজন বেশি হয়, তবে মাধ্যাকর্ষণের টানেই সেই চুল আর কোঁকড়া থাকতে পারবে না, নিজের ওজনেই তা সোজা হয় যাবে। বাস্তবের মতো করে কোঁকড়া চুল অ্যানিমেশন করার ক্ষেত্রে এসব তথ্য অনেক কাজে লাগতে পারে। শুধু কোঁকড়া চুলই নয় বরং বিভিন্ন তার, টিউব, পাইপ ইত্যাদি কতটা বাঁকা হবে তা নির্ণয়ের জন্যেও ব্যবহার করা হতে পারে এই গবেষণার তথ্য