ব্রন খুঁটিনাটি!
অনেকেই দেখলাম ব্রন এর বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধান নিয়ে পোস্ট দিচ্ছিলেন। তাই তাদের জন্য বিভিন্ন সোর্স লব্ধ জ্ঞান ও আমার ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে কিছু লাইন লিখি।
➤ব্রন সমীকরণঃ
☞২০১০ সালে সারা বিশ্বব্যাপী ৬৫০ মিলিয়ন মানুষের ব্রণ হয়েছিল, যা মোট জনসংখ্যার ৯.৪% পাশ্চাত্যে প্রায় ৯০% মানুষের কৈশোরকালে ব্রণ হয়ে প্রাপ্তবয়স পর্যন্ত বিরাজ করে।বয়ঃসন্ধির পর থেকে শুরু করে ২৫ বছরের মধ্যে ৫৪% নারীর এবং ৪০% পুরুষের ব্রণ হয়। ৮৫% ব্যক্তির জীবনব্যাপী ব্রণ রয়েছে,যেখানে ২০% মানুষের মারাত্মক অবস্থায় বিদ্যমান। গ্রাম্য সমাজে এর মাত্রা কম। পাপুয়া নিউ গিনি ও প্যারাগুয়েতে ব্রণ প্রায় হয় না বললেই চলে। ছেলেদের থেকে মেয়েদের ব্রণ বেশি হয় (মেয়ে = ৯.৮% বনাম ছেলে = ৯.0%)।৪০ বছরের বেশি মানুষের মধ্যে ১% পুরুষ ও ৫% নারীর সমস্যা থেকে যেতে পারে।সকল বয়সের মানুষই আক্রান্ত হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রে ৪০-৫০ মিলিওন মানুষের ব্রণ হয় (১৬%) এবং অস্ট্রেলিয়াতে এ সংখ্যা ৩-৫ মিলিওন।
➤ব্রন কি?
☞Acne vulgaris বাংলায় বলা যায় ব্রন।এটি মুলত একটি দীর্ঘ মেয়াদি রোগ যার বৈশিষ্ট্য, লালচে ত্বক,পিম্পল,তৈলাক্ত ত্বক, ক্ষত দাগ ইত্যাদির মাধ্যমে প্রকাশ পায়।
➤ব্রন কেন হয়?
☞ বয়ঃসন্ধিকালে লিঙ্গ নির্বিশেষে টেস্টোস্টেরন এর মত অ্যান্ড্রোজেন বৃদ্ধির ফলে ব্রণ হতে পারে।ত্বকের উপর তৈলাক্ত গ্রন্থির মাত্রার উপর ব্রণ হওয়া নির্ভর করে। এমন সব স্থান হল-মুখ, বুকের উপর অংশ ও পিঠ।অনেকসময় ব্রণ অনাক্রম্যতা(asymptomatic) প্রদর্শন করে।ত্বকে উপস্থিত লোম রন্ধ্র (hair follicle) এবং সিবেসিয়াস গ্রন্থির (sebaceous gland) সংখ্যা অ্যান্ড্রোজেন সংবেদনশীলতার হার নির্ধারণ করে।
ছোট করে বলতে গেলে এটি মুলত একটি প্রদাহ জনিত সমস্যা যা ত্বকের তেল গ্রন্থী বন্ধ হয়ে গেলে দেখা যায়।এটাই মুলত বিশেষ কারন হিসাবে বলা যেতে পারে।
এছাড়াও কিছু কারন উল্লেখ করা যেতে পারেঃ
১।হরমোনাঃ
মাসিক চক্র এবং বয়ঃসন্ধিকালে হরমোনের মাত্রাধিক্যের কারণে ব্রণ হয়। বয়ঃসন্ধিকালে, অ্যান্ড্রোজেন বৃদ্ধির কারণে অতিরিক্ত সিবাম তৈরি হয়।গর্ভকালীন সময়েও অ্যান্ড্রোজেন বৃদ্ধির কারণে অতিরিক্ত সিবাম তৈরি হয়।এছাড়াও কিছু হরমোন ব্রণের সাথে সম্পর্কযুক্ত,যেমনঃ টেস্টোস্টেরন, ডিহাইড্রোএপিএন্ডোস্টেরন।
পরবর্তী জীবনে ব্রণ হওয়া অস্বাভাবিক, যদিও ব্রণের মতই আরেক ধরনের উপস্থিতি থাকতে পারে।প্রাপ্ত বয়স্ক নারীর ব্রণের পেছনে কারণ হিসেবে গর্ভধারণের মত স্বাভাবিক বিষয় থেকে শুরু করে পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম বা কুশিং সিনড্রোম থাকতে পারে।
২।জেনেটিকঃ
কিছু ব্যক্তির ব্রণের পেছনে জেনেটিক উপাদান যেমন TNF-আলফা, IL-1 আলফা ইত্যাদি দায়ী বলে মনে করা হয়,যা যমজ গবেষণা দ্বারা সমর্থিত।এসব প্রচলিত মেন্ডেলের বংশগতির পোষকের প্যাটার্নকে অনুসরণ করে না।
৩।মানুসিকঃ
অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করলে ব্রণ বাড়ে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব হেলথ দুশ্চিন্তাকে ব্রণ বৃদ্ধিকারক একটি এজেন্ট বলে উল্লেখ করেছে।
৪।সংক্রমনঃ
Propionibacterium acnes একটি অবায়বিয় (Anerobic) ব্যাক্টেরিয়ার প্রজাতি যা ব্রণের পেছনে অনেকাংশে দায়ী,যদিও শুধুমাত্র P. acnes দ্বারা কলোনী সৃষ্টির পর Staphylococcus aureus কেও দায়ী করা হয়। তারপরেও, P. acnes এর বিশেষ কিছু জাত দীর্ঘমেয়াদি ব্রণের সমস্যার সাথে সম্পর্কযুক্ত। P. acnes এর অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ দিন দিন বাড়ছে। Demodex নামক পরজীবির দ্বারা সংক্রমণের ফলেও ব্রণ হতে পারে।
➤কোথায় কোথায় ব্রন দেখা যায়?
☞মুলত যে স্থান গুলো তুলনামুলক তৈলাক্ত, মুখ,ঘার,বুকের উপরের অংশ এবং পিঠ।তবে এটা ব্যক্তি বিশেষ এ ভিন্ন হতে পারে।
➤রোগ নির্ণয় ও এর নিম্ন উচ্চমাত্রাঃ
ব্রণের মাত্রা নিরূপণের কিছু পন্থা আছে, যা নিম্নোক্ত:☞লিডস গ্রীডিং : সংক্রামতা এবং অসংক্রামতা নির্ধারণ করে (বিস্তার ০–১০)।
☞কুকস গ্রেডিং স্কেল: ছবি ব্যবহার করে মাত্রা নির্ধারণ করে (সবচেয়ে কম ০,সবচেয়ে বেশি ৮)
☞পিলসবারি স্কেল: মাত্রা নির্ধারণ করে ১ (সবচেয়ে কম) - ৪ (সবচেয়ে বেশি)।
➤ব্রন এর প্রভাবঃ
☞এর মুল প্রভাব পরে মুলত মানুসিক ভাবে। ব্রন মুলত বিশ বছরের আশেপাশেই শেষ হয়ে যায়, তবে প্রাপ্তবয়স্কদেরও থাকতে পারে। স্থায়ী দাগও থেকে যেতে পারে।
ভীতি, দুশ্চিন্তা ও বিষণ্ণতা উদ্রেকের পাশাপাশি, এটির প্রধান পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হচ্ছে আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়া।অতিরিক্ত পর্যায়ে মানসিক অবসাদ এবং আত্মহত্যার মত অবস্থার উদ্ভব হতে পারে।একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ব্রণের রোগীদের আত্মহত্যার পরিমাণ ৭.১%।
➤ব্রন এর প্রতিকার / চিকিৎসাঃ
সাধারনত ব্রন যেহেতু তেল গ্রন্থি জনিত সমস্যা সেহেতু এর প্রতিকার বাড়িতেই পাওয়া সম্ভব।
শুরুতেই বলি ব্রন এ আক্রান্ত হইলে আমরা যে যে ভুল গুলো করিঃ
১।নিজের ইচ্ছামতো ও জাকজমক বিজ্ঞাপন দেখে ফেসওয়াস ব্যবহার করি। মনের তৃপ্তি পাবার জন্যই একের পর এক ফেসওয়াস পরিবর্তন করি।
২। অযথা হাত বা অন্য কিছুর সাহায্যে ব্রন এ খোঁচাতে থাকি।
৩। নিজ ইচ্ছা মতো বিভিন্ন হাতুড়ে ডাক্তার বা ফার্মেসিতে গিয়ে নিম্নমানের কিছু ক্রিম ব্যাবহার করি।
৪।অতিরিক্ত দুঃশ্চিতা করি।
৫। চিন্তায় অতিরিক্ত রাত জাগি
এবার আসি প্রতিকার এঃ
☞প্রথম কথা হলো,উপরের সব কাজ থেকে বিরত থাকুন।
☞ব্রন হয়েছে এই ভেবে অতিরিক্ত দুঃশ্চিন্তা করবেন না।নিজেকে লুকিয়ে রাখার চেস্টা করবেন না।
☞স্বাভাবিক প্রকৃয়া ভেবে সর্বদা প্রফুল্ল থাকুন।
☞ডাক্তার এর পরামর্শ নিয়ে একটা ফেসওয়াস ব্যবহার করতে পারেন।
☞সব সময় নিজের মুখ সহ সর্ব শরীর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন।
☞পর্যাপ্ত পরিমান পানি পানের কোন বিকল্প নেই,পানি পান করুন।
☞সুযোগ পেলেই ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
☞চুল নিয়মিত স্যাম্পু করুন।
☞মৌসুমী ফল,শাকসবজি বেশি বেশি খান। খাবারে সেই সব খাদ্যকেই প্রাধান্য দিন যেগূতে প্রচুর পরিমান ফাইবার পাওয়া যায়।
☞অতিরিক্ত মশলা যুক্ত খাবার পরিহার করুন।
☞বেশি রাত করে ঘুমাবেন না,বেশি বেলা করে উঠবেন না।
☞নিজেকে সর্বদা হাসিখুশি রাখুন।প্রয়োজনে মাঝে মাঝে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিতে পারেন।
আমার কথা বলি এখনঃ
আমার ও ব্রন হয়েছিলো,সেটা প্রায় ২ থেকে আড়াই বছর এর মত স্থায়ী ছিলো। শুরুর দিকে অনেক দুঃশ্চিন্তা করতাম।
পরে বুঝতে পেরে ডাক্তারের পরামর্শে একটা ফেসওয়াশ ব্যাবহার করেছি আর উপরের নিয়ম গুলো পালন করেছি। এখন মুখে দাগ পর্যন্ত নেই। না কোন মলম ব্যবহার করেছি,না কোন ঔষধ নিয়েছি।