সাধারণত একটি ডিম্বাণু এবং একটি শুক্রাণু নিষিক্ত হয়ে ভ্রূণ এর জন্ম হয়। কোটি কোটি শুক্রাণু থেকে শুধু মাত্র একটি শুক্রাণুই ডিম্বানুর সাথে নিষেকের সুযোগ পায়, তাই যদি একই সাথে কয়েকজন পুরুষের শুক্রাণু প্রবেশ করে এর থেকেও যেকোন একটা শুক্রাণুই ডিম্বানুর সাথে নিষিক্ত হবে,এটাই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।
তবে এর ব্যাতিক্রম ও হয়। প্রতি মাসে সাধারণত ডিম্বাশয়য় থেকে একটি ডিম্বানুই মুক্ত হয়, পরের বার আবার একটি মুক্ত হয় এবং আগের ডিম্বানুটি নস্ট হয় যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে একবারে একটির বদলে ২ টি এমনকি আরো বেশি ডিম্বাণু উৎপন্ন হয়ে যায়(ডিম্বাশয় থেকে মুক্ত হয়ে জরায়ুতে আসে), আবার অনেক সময় আগের ডিম্বনুটি নস্ট হয়না তাই পরে মোট দুইটি হয়ে যায়।
মূলত এরকম হলে দুই বা তিনটি ডিম্বাণু যেহেতু জরায়ুতে থাকে তাই সেক্ষেত্রে প্রতিটি ডিম্বণুর সাথেই একটি করে শুক্রাণু নিষিক্ত হবে।
এবং এটাও জমজ বাচ্চা হবার একটা কারণ।
সুতরাং একাধিক পুরূষের শুক্রাণু প্রবেশ করলে এবং তখন যদি সেই ফিমেল এর জরায়ুতে দুইটি ডিম্বাণু থাকে তাহলে সম্ভাবনা থাকবে দুইজন আলাদা পুরূষের শুক্রাণু দ্বারা দুইটি ডিম্বাণু নিষিক্ত হবে, ফলে জমজ বাচ্চা হলেও তাদের বাবা হবে আলাদা দুইজন।
ঠিক এরকম ই একটা ঘটনা সম্পর্কে বলি যা কিছুদিন আগে আমেরিকা তে ঘটেছিল, এক মহিলা তার বাচ্চাদের অধিকারের জন্য আদালতে যান, সেখানে শিশুদের বাবাকে আনা হয় কিন্তু ডিএনএ টেস্টে এ দেখা যায় জমজ দুই বাচ্চার মধ্যে একজনের বাবা সেই লোক, অন্য বাচ্চাটির বাবা অন্য কোন পুরূষ, যদিও তারা জমজ ছিল। এর কারণ ওই মহিলা প্রায় এক সপ্তাহের মধ্যেই আলাদা ব্যাক্তির সাথে শারীরিক সম্পর্ক করেছিল এবং তখন তার জরায়ুতেদুইটি ডিম্বাণু ছিল যা পরে আলাদা দুই ব্যাক্তির শুক্রাণু দ্বারা নিষিক্ত হয়, এবং একসাথে দুইটি ভ্রূণ গর্ভে বড় হতে থাকে মানে জমজ শিশু কিন্তু তাদের দুইজনের বাবা দুইজন আলাদা ব্যাক্তি।
এই ঘটনা হবার সম্ভাবনা প্রায় ২% যদি অল্প দিনের ব্যাবধানে আলাদা পুরূষের শুক্রাণু প্রবেশ করে, দুই এর অধিক পুরূষের শুক্রাণু প্রবেশ করলে দুই এর অধিক বাচ্চাও এক মায়ের গর্ভে হবার সম্ভাবনা থাকে কারণ অনেক সময় ডিম্বাশয়ে দুই এর অধিক ও ডিম্বাণু উৎপন্ন হয়, তবে এর সম্ভাবনা খুবই কম। আবার এক্ষেত্রে দুইটা বাচ্চাই এক বাবার ও হতে পারে যদি বাকি পুরুষদের শুক্রাণু সংখ্যায় কম বা দূর্বল হয়, তাহলে যার শুক্রাণু বেশি তার একাধিক শুক্রাণু একাধিক ডিম্বাণুর সাথে নিষিক্ত হবে।
এই ত গেল যদি একাধিক ডিম্বাণু থাকে কারোর জরায়ুতে সেটা নিয়ে, এছাড়া কি হবে, আসলে সাধারণত একটা ডিম্বাণুর সাথে একটাই শুক্রাণু নিষিক্ত হয়, নিষেকের পর অনেকসময় তা দ্বিবিভাজিত হয়ে যায় ফলে আবার দুইটি জাইগোট তৈরি হয়ে যায়, যার মাতৃ এবং পিতৃ ডিএনএ সেইম, কারণ একই ডিম্বাণু এবং একই শুক্রাণু থেকে জাইগোট হয়ে সেটাই আবার দুইটায় বিভাজিত হয়েছে, ফলে যে দুইটি বাচ্চা হবে তারা আইডেন্টিক্যাল টুইনস মানে দেখতে প্রায় হুবহু হয়। দুটি আলাদা ডিম্বাণু থেকে যে টুইন হয় তারা সবসময় সেইম নাও হতে পারে কারণ সেক্ষেত্রে দুটি ডিম্বাণু দুটি আলাদা শুক্রাণু দিয়ে নিষিক্ত হয়( আগেই লিখেছি), আর প্রতিটি শুক্রাণু পিতৃ ডিএনএ এর অর্ধেক সেট বহন করে তাই একই পুরুষের দুইটি শুক্রাণু সেইম ডিএনএ বহন করেনা তাই বাচ্চা দুজন ও সেইম নাই হতে পারে।
এখন এগুলা কেন বললাম, আরেকটা ঘটনা যা অস্ট্রেলিয়ায় ধরা পরেছে এবং যা থেকে ধারণা করা হচ্ছে একই ডিম্বাণু দুইটা শুক্রাণু দ্বারা নিষিক্ত হয়েছে।
এক মহিলার প্রেগনেন্সি টেস্টে জেনেছিল তার টুইন বেবি হবে, আইডেন্টিক্যাল টুইনস মানে একই ডিম্বাণু নিষিক্ত হয়ে তারপর আবার তা দুইটায় বিভাজিত হয়েছে ফলে সেম ডিএনএ যুক্ত দুই বাচ্চা, কিন্তু ৮ সপ্তাহ পরের আল্ট্রাসনোগ্রাফে দেখা যায় বাচ্চা একজন ছেলে অন্যজন মেয়ে, চিকিৎসকরা ঘাবড়ে যান, কারণ এক ডিম্বাণু এক শুক্রাণু দ্বারা নিষেক ঘটে পরে সেটাই দুই ভাগ হলে দুই শিশুর লিঙ্গ আলাদা কিভাবে হলো, একটি শুক্রাণু তে লিঙ্গ নির্ধারণ কারী ক্রোমোজম বা সেক্স ক্রোমোজম একটাই থাকে তাহলে দুজন বাচ্চাই একই লিঙ্গের হবার কথা এক্ষেত্রে, পরে চিকিৎসকরা বুঝেন আসলে এক্ষেত্রে একদম রেয়ার কেস ঘটেছে মানে একই ডিম্বাণু দুইটা শুক্রাণু দ্বারা নিষিক্ত হয়েছে যার একটা মেইল অন্যটা ফিমেল সেক্স ক্রোমোজম যুক্ত ছিল।
এক্ষেত্রে এই মহিলার দেহে যদি একাধিক পুরূষের শুক্রাণু প্রবেশ করানো হতো তাহলে একই ডিম্বাণু থেকে হওয়া বাচ্চা দুইজন এর বাবা দুইজন হবার সম্ভাবনা থাকত।
সবশেষে, একাধিক পুরুষের শুক্রাণু প্রবেশ করলে উপরুক্ত কন্ডিশন গুলার উপর ডিপেন্ড করে বিভিন্নকিছু ঘটতে পারে, তবে এক্ষেত্রে অধিকাংশ সময় একাধিক পুরুষের মধ্যে যেকোন একজন ই সেই বাচ্চার বাবা হবে, কারণ মাতৃদেহের প্রজননাঙ্গে একটা ডিম্বাণু থাকাই কমন।
Warman Hasbi | Science Bee-বিজ্ঞান পোকাদের গ্রুপ