জরায়ুতে সিস্ট কেন হয়, প্রতিকার কী?
ডা. শাহরিন ইসলাম

মেয়েদের বড় শারীরিক সমস্যা ওভারিয়ান সিস্ট। ওভারি বা ডিম্বাশয় হচ্ছে জরায়ুর দুই পাশে অবস্থিত দুটি ছোট গ্রন্থি, যা থেকে মহিলাদের হরমোন নিঃসরণ হয় এবং ডিম্বাণু পরিস্ফুটন হয়। ওভারিয়ান সিস্ট হলো ওভারিতে পানিপূর্ণ থলে। ঋতুবতী মেয়েদের ক্ষেত্রে প্রায়ই এই সিস্ট দেখা যায়। ওভারিয়ান সিস্ট অনেক রকম হয়ে থাকে, সবচেয়ে বেশি হয় সিম্পল বা ফাংশনাল সিস্ট। ওভারি থেকে কোনো কারণে ডিম্বস্ফুটন না হলে অথবা ডিম্বস্ফুটন হওয়ার পরও ফলিকলগুলো চুপসে না গেলে সিস্ট তৈরি হতে পারে। ফাংশনাল সিস্ট ছাড়াও ওভারিতে আরও অনেক রকম সিস্ট হতে পারে, যেমন;
পলিসিস্টিক ওভারি : অনেক দিন ধরে ক্রমাগত ডিম্বস্ফুটন না হলে ওভারিতে ফলিকলগুলো জমতে থাকে। এর সংখ্যা ১০ বা এর অধিক হলে পলিসিস্টিক ওভারি বলা হয়।
এন্ডমেট্রিওটিক সিস্ট : এই সিস্ট থাকলে মাসিকের সময় অনেক পেইন হয় এবং রোগী বন্ধ্যত্ব সমস্যায় ভুগে থাকে।
ডারময়েড সিস্ট : এটি এক ধরনের ওভারিয়ান টিউমার, যাতে শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রতঙ্গের মতো টিস্যু থাকে। শুনতে অবাক লাগবে, কিন্তু এ ধরনের সিস্টে থাকতে পারে দাঁত, চুল ইত্যাদিও।
লক্ষণ : ফাংশনাল সিস্টের কোনো লক্ষণ থাকে না, এটি সাধারণত রুটিন আলট্রাসাউন্ড পরীক্ষায় ধরা পড়ে। তবে মাঝেমধ্যে পেটে ব্যথা, মাসিকের অনিয়ম নিয়েও কেউ কেউ আসতে পারে।
পরীক্ষা : পেটের আলট্রাসাউন্ড পরীক্ষায় ওভারিয়ান সিস্ট দেখা গেলে এটি আসলেই ফাংশনাল সিস্ট কি না তা অনেক সময় বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হতে হবে। এসব পরীক্ষার মধ্যে আছে ট্রান্স-ভেজাইনাল আলট্রাসাউন্ড, ল্যাপারস্কপি ও বায়োপসি এবং ক্যানসার অ্যান্টিজেন টেস্ট।
চিকিৎসা : কোনো লক্ষণ না থাকলে এবং এর সাইজ ৫ সেমি’র নিচে থাকলে রোগীকে দুই থেকে তিন মাস পর্যন্ত অবজারভেশনে রাখা হয়। সাধারণত এ সময়ের মধ্যে ফাংশনাল সিস্ট অপসারিত হয়।
সিস্ট প্রতিকারের উপায়
ইস্ট্রজেন নিয়ন্ত্রণ : ওভারিতে সিস্ট হওয়ার অন্যতম কারণ ইস্ট্রজেন হরমোনের সাম্য নষ্ট হওয়া। ইস্ট্রজেনের পরিমাণ বেড়ে গেলে ওভিউলেশন অনিয়মিত হয়। যার ফলে ওভারিতে সিস্ট তৈরি হয়। তাই সিস্ট রুখতে শরীরে ইস্ট্রজেন ব্যালান্সের দিকে খেয়াল রাখুন। সয়া প্রোটিন, প্রসেসড মিট শরীরে ইস্ট্রজেনের পরিমাণ বাড়ায়। প্লাস্টিকের বোতল থেকে জল খেলেও শরীরে রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে ইস্ট্রজেনের পরিমাণ বাড়তে পারে।
তাই ডায়েটে যতটা সম্ভব অরগ্যানিক মিট ও ডেয়ারি প্রডাক্ট রাখুন। এতে ইস্ট্রজেনের সঠিক মাত্রা বজায় থাকবে।
হার্বাল উপায় : বেশ কিছু হার্বাল জিনিস এন্ডোক্রিন সিস্টেম সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। হরমোনের সঠিক মাত্রা বজায় রাখা, ওভিউলেশন নিয়মিত করতে ও জননতন্ত্রে রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে সাহায্য করে এ সব প্রাকৃতিক মূল। ড্যান্ডেলিয়ন, মিল্ক থিসল ইস্ট্রজেনের সঠিক মাত্রা বজায় রাখে।
ডায়েট : চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, অস্বাস্থ্যকর ডায়েট ও অনিয়মিত লাইফস্টাইল ওভারিয়ান সিস্টের অন্যতম কারণ। ডায়েটে ফল, সবুজ শাক-সবজি, গোটা শস্যের পরিমাণ বেশি থাকলে সিস্টের মোকাবিলা করা সহজ হবে।
ওজন নিয়ন্ত্রণ : অতিরিক্ত ওজন ও বিএমআই বেশি হওয়ার কারণেও ওভারিয়ান সিস্টে আক্রান্ত হচ্ছেন মহিলারা। মেদ ঝরিয়ে বিএমআফ ২৫-এর নিচে নিয়ে আসতে পারলে ওভারিয়ান সিস্টের সমস্যা অনেকটাই কাটানো যেতে পারে।