প্রায় প্রত্যেক মানুষের মুখের নিজস্ব গন্ধ থাকে। তবে অনেক সময় খাবার খেয়ে বা ঘুম থেকে উঠে ব্রাশ না করলে মুখে দুর্গন্ধ হয়। সেটা অন্য সমস্যা। কিন্তু আপনি কি মাঝে মধ্যে নিজের নিঃশ্বাসের গন্ধ পরীক্ষা করেন? বিশেষজ্ঞরা বলছেন নিঃশ্বাসের কিছু নির্দিষ্ট গন্ধ আপনার শরীরিক সমস্যা বা রোগের ইঙ্গিত দেয়। আমাদের জিহ্বার পেছনের অংশ, গলা ও টনসিলে থাকা অ্যানারোবিক ব্যাকটেরিয়া মুখের বেশিরভাগ দুর্গন্ধের জন্য দায়ী।
আমরা যে খাবার খাই, তার প্রোটিন ভেঙ্গে নিজের খাবারে পরিণত করে এই ব্যাকটেরিয়া। কিন্তু কোনো মানুষ যদি রোগাক্রান্ত হন, তাহলে ঐ ব্যাকটেরিয়া তার কাজ ঠিকভাবে করতে পারে না। ফলে ওই ব্যক্তির মুখে নির্দিষ্ট রাসায়নিকের গন্ধ তৈরি হয়। আপনার কোনো রোগ হলো কি না, প্রাথমিকভাবে বুঝতে নিঃশ্বাসে কোন ধরনের গন্ধ আছে তা বোঝার চেষ্টা করুন।
নিঃশ্বাসে ঝাঁঝালো গন্ধ হলে: আপনার মুখ থেকে যদি পিয়ার ড্রপ (এক ধরনের মিষ্টান্ন) বা অ্যামোনিয়ার গন্ধ বের হয়, তাহলে ধরে নিতে পারেন টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিসে ভুগছেন আপনি। ইনসুলিনের অভাবে, শরীর চিনিকে শক্তিতে রূপান্তর করতে না পেরে চর্বি ভেঙ্গে ফেলে। ফলে কিটোন নামের রাসায়নিক উপাদান তৈরি হয়, যা মুখে ও ইউরিনে ঝাঁঝালো গন্ধ তৈরি করে। যদি প্রচুর তৃষ্ণাবোধ থাকে, খুব ক্লান্তবোধ করেন, কোনো কারণ ছাড়া ওজন কমতে থাকে, ঘন ঘন প্রস্রাব হয়, তাহলে ইউরিন পরীক্ষা করিয়ে ডায়াবেটিস আছে কিনা নিশ্চিত হোন।
নিঃশ্বাসে কর্পুরের মতো গন্ধ হলে: ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের কারণে যাদের সাইনাসের মতো মাথা ব্যথা হয়, তাদের নিঃশ্বাসে প্রায় সময় কর্পুরের মতো গন্ধ থাকে। এর কারণ হলো নাক বা গলায় যে শ্লেষ্মা জড়ো হয়, তাতে ঘন প্রোটিন থাকে। সেসব প্রোটিনকে শরীর ভাঙ্গতে পারে না, এই প্রোটিনই নির্দিষ্ট ঐ গন্ধ তৈরি করে। এমন হলে ঠান্ডা যেন না লাগে সেদিকে সতর্ক থাকুন। এ অবস্থায় ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত।
নিঃশ্বাসে টক দুধের গন্ধ হলে: আপনি যদি হাই প্রোটিন খাবার বেশি খান, কার্বোহাইড্রেট খাদ্য তালিকায় না থাকে, তাহলে মুখে টক দুধের মতো অস্বস্তিকর গন্ধ দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে দাঁত বেশি ব্রাশ করা বা মাউথওয়াশ ব্যবহার করলে সমস্যা দূর হবে না। আপনাকে বেশি কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার খেতে হবে।
নিঃশ্বাসে পঁচা মাংসের গন্ধ হলে: যখন টনসিল সংক্রমিত হয়, তখন জিহ্বার পেছনে থাকা অ্যানারোবিক ব্যাকটেরিয়া খাবারের ক্যামিকেল সহজে ভাঙ্গতে পারে না। টনসিলের মধ্যে সালফার তৈরিকারী ব্যাকটেরিয়া থাকে, যা টনসিল সংক্রমিত হলে খাবারের ক্যামিকেল ভাঙতে পারে না। সে সময় সালফারের গন্ধ মুখ থেকে নির্গত হয়। অনেকটা বিরল হলেও এই গন্ধ কিছু ক্ষেত্রে লিভার সিরোসিসেরও ইঙ্গিত দেয়। বেশিরভাগ সময় চিকিৎসা ছাড়াই এক সপ্তাহের মধ্যে টনসিলের সমস্যা দূর হয়। তবে এ সময় প্রচুর পানি পান করলে ও লবণ-গরম পানি বা মৃদু অ্যান্টিসেপটিক সলিউশন দিয়ে গার্গল করলে উপকার পাবেন।
নিঃশ্বাসে সকালবেলা ঘুম থেকে ওঠার পর হওয়া গন্ধ: সকালবেলা ঘুম থেকে উঠলে সবার মুখেই এক ধরনের কটূ গন্ধ থাকে। তবে যদি ব্রাশ করার পরও ঐ গন্ধ থাকে, তাহলে বুঝতে হবে সমস্যা আছে। অনেকেই জেরোস্টোমিয়া বা গলা শুকিয়ে যাওয়ার মতো এক ধরনের রোগে ভোগেন। এ সময় মুখে পর্যাপ্ত লালা উৎপন্ন হয় না। আর মুখে পর্যাপ্ত লালা না থাকলে ব্যাকটেরিয়া জন্ম নেয় ও মুখে কটূ গন্ধ তৈরি করে। যদি মুখে লালা সরবরাহ স্বাভাবিক করা না যায়, তাহলে জেরোস্টোমিয়া বড় ধরনের সমস্যা তৈরি করতে পারে। এ কারণে দাঁত ক্ষয় ও মাড়ির অনেক অসুখ হতে পারে। যারা গলা শুকিয়ে যাওয়ার সমস্যায় ভোগে, তাদের সব সময় পানি পিপাসা পায়। ফলে ঠোঁট ফাটা, গলা ব্যথা, জিহ্বার পাশে ঘা হওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দেয়। গলা শুকিয়ে যাওয়ার সমস্যায় ভুগলে বেশি করে পানি পান করা জরুরি ও প্রয়োজনে ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত।
নিঃশ্বাসে মাছের গন্ধ হলে: মুখে মাছের আঁশটে গন্ধের জন্য নাইট্রোজেন দায়ী। যদি আপনার মুখে এমন গন্ধ হয়, তাহলে কিডনির সমস্যা হচ্ছে ধারণা করতে পারেন। কারণ কিডনি সঠিকভাবে কাজ করতে না পারলে তাতে নাইট্রোজেন উৎপন্ন হয়। এ অবস্থায় ডাক্তারের কাছে যান, তিনি প্রয়োজনে কিডনি পরীক্ষার পরামর্শ দেবেন।
নিঃশ্বাসে বিষ্ঠার গন্ধ হলে: নষ্ট হওয়া দেহকোষ অনেক সময় মল বা বিষ্ঠার মতো গন্ধ ছড়ায়। অ্যানারোবিক ব্যাকটেরিয়া এজন্য দায়ী। আর এই গন্ধ মাড়ির সংক্রমণের জন্য হয় বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। বর্তমান বিশ্বে মানুষের মাঝে সবচেয়ে বেশি মাড়ির সংক্রমণ হয় বলে তারা জানান। দিনে দুই বার সতর্কতার সাথে দাঁত ব্রাশ করা উচিত। নিয়মিত ডেন্টিস্টের কাছে যাওয়া উচিত প্রত্যেকের।