HM Jubayer Ahmed-
গণিতবিদদের মতে শুধু পৃথিবী নয়, গোটা মহাবিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে রহস্যময় ও সুন্দর সংখ্যা হল 1.61803399।এ সংখ্যাটি ফাই (ɸ) বা সোনালী অনুপাত(গোল্ডেন রেশিও) নামেও পরিচিত।
প্রাচীনকালের মানুষ মনে করত, এ সংখ্যাটির রয়েছে জাদুকরী ক্ষমতা। ফাই-এর ক্ষেত্রে অবাক ব্যাপারটি হলো, প্রকৃতি অনেক ক্ষেত্রেই এ অনুপাতটি অনুসরণ করে। যেমন মানুষের শরীর, মুখমণ্ডল, হাত ও পা, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য, ডিএনএ, গাছপালা, জীবজন্তু ইত্যাদি আরও হাজারো ক্ষেত্রে। একটি মৌচাকে স্ত্রী মৌমাছির সংখ্যাকে পুরুষ মৌমাছির সংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে কোন সংখ্যাটি আসবে জানেন? অবশ্যই 1.618। শামুকের প্রতিটি স্পাইরালের ব্যাস পরেরটির সঙ্গে 1.618 অনুপাতে রয়েছে।
সূর্যমুখী ফুলের বীজ বিপরীত চক্রাকারে বেড়ে ওঠে। প্রতিটি চক্রাকারের ব্যাস পরেরটির সঙ্গে 1.618 অনুপাতে আছে। শুধু তা-ই নয়, পদ্মফু্‌ল, গাছপালার পাতার বিন্যাস, পোকামাকড়ের বিভাজন সবগুলোই বিস্ময়করভাবে এই অনুপাত মেনে চলে।
মানুষের শরীরের গড়নও এ অনুপাত মেনে চলে। যেমন আপনার মাথা থেকে পা পর্যন্ত মাপুন, তারপর মাটি থেকে আপনার নাভি পর্যন্ত মাপুন। প্রথম পরিমাপটির সঙ্গে দ্বিতীয় মাপটি ভাগ দিন। ফল পাওয়া যাবে ১.৬১৮। আপনার কাঁধ থেকে হাতের আঙ্গুল পর্যন্ত মাপ নিয়ে তাকে আপনার বাহু থেকে আঙ্গুল পর্যন্ত দূরত্বের সঙ্গে ভাগ দিন, সোনালি অনুপাত পেয়ে যাবেন। পা থেকে কোমরের মাপকে পা থেকে হাঁটু দিয়ে ভাগ করুন। পাওয়া যাবে ১.৬১৮। আঙ্গুলের গিঁট, পায়ের পাতা, মেরুদণ্ডের বিভাজন সবকিছুই এ অনুপাতটি মানে। বিজ্ঞানী ও চিত্রশিল্পী লিওনাওর্দো দ্য ভিঞ্চি দেখিয়েছিলেন, মানুষের শরীরের গঠনে সব সময়ই সোনালি অনুপাতের হিসাবে থাকে।
এমনকি শিল্পকলা এবং সংগীতেও আছে সোনালি অনুপাতের ছড়াছড়ি। মাইকেল এঞ্জেলো, দ্য ভিঞ্চি, আলব্রেখট দ্যুরার এবং আরও অনেক চিত্রশিল্পী ইচ্ছাকৃতভাবে তাঁদের কম্পোজিশনে সোনালি অনুপাত ব্যবহার করেছেন। গ্রিসের পার্থেনন মন্দির, মিসরের পিরামিড, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত জাতিসংঘের ভবনের স্থাপত্যেও সোনালি অনুপাত ব্যবহার করা হয়েছে।
ফাই আছে মোজার্টের সোনাটার স্ট্র্যাকচারে, বেথোফেনের পঞ্চম সিম্ফোনি এবং বার্তোক, ডেবুস আর শুবার্টের কর্মে।আমাদের পৃথিবীতে বিভিন্ন স্থানে রয়েছে ফাই বা স্বর্গীয় অনুপাতের ছড়াছড়ি।
আমাদের প্রকৃতিতে ফাই খুবই সুন্দরভাবে বিরাজ করে।তাই একে সুন্দর সংখ্যা বলা যেতেই পারে।