==== অ হং কা র====
সংকলনঃ Br Rahul Hossain (Rohol Amin)
আপনার ইগো আপনার সফলতার জন্য সবচেয়ে বড়ো শত্রু !
“ইগো” শব্দটির সাথে আমরা কমবেশি সবাই পরিচিত। শব্দটি মূলত ইংরেজী হলেও বাংলায় মোটামুটি প্রচলিত হয়ে গেছে। কেউ যদি জীবনের যে কোন কাজে কারও তুলনায় এগিয়ে যায়, সেটা হতে পারে ক্লাসে প্রথম হওয়া; হতে পারে ব্যবসায় বা চাকরীতে তুলনামূলক বেশি সফলতা পাওয়া। এসব ব্যাপারে যদি কারও মনে বিন্দুমাত্র হিংসা জন্ম নেয় তাহলে সাধারন ভাবে ধরে নেয়া হয় তার “ইগো প্রবলেম আছে।”
তবে এই সমস্যাকে ইগো’র চেয়ে ঈর্ষা বা হিংসা বলা ভাল। ঈর্ষা ইগোর ফলাফলের একটি অংশ হলেও ইগোর ব্যপ্তি আরও বড়। "এটা আপনার সম্ভাবনাময় জীবন ও ক্যারিয়ারকে পুরোপুরি শেষ করে দিতে পারে"।
তাই ইগো কি, তা ভাল করে জানা, আর তা থেকে বের হয়ে আসাটা ব্যক্তিগত এবং পেশাগ এবং পরকালীন জীবনের জন্য খুবই জরুরী।
ইগোর সংজ্ঞা :-
"ইগোর"অনেকগুলো প্রচলিত সংজ্ঞা আছে, বিশেষজ্ঞ রায়ান হলিডের মতে:- ইগো হচ্ছে “নিজের বড়ত্বের প্রতি একটি অস্বাভাবিক বিশ্বাস। যার সাথে মিশে থাকে অতি অহঙ্কার এবং আত্মকেন্দ্রিক ও স্বার্থপর উচ্চাকাঙ্খা।”
আমরা সবাই জানি ইগো একটি খারাপ জিনিস, এবং এটা আমাদের সবার মাঝেই কিছু না কিছু মাত্রায় আছে। আর সেজন্যই এটা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বও আমাদের। ইগো কিভাবে আপনার সফলতায় বাধা দিতে পারে তার কিছু নমুনা।
ইগো আপনার বড়ো শত্রু !!
১) নিজের প্রতি অস্বাভাবিক ও অবাস্তব উঁচু ধারনা একজন মানুষের সাফল্যের যাত্রাকে পুরোপুরি থামিয়ে দিতে পারে। ইগো আসলে মানুষের মাঝে বাস করা ছোট্ট শয়তানের মত যে একজন মানুষ আসলে যতটা বড়, তাকে তারচেয়েও অনেক বড় হিসেবে ভাবতে শেখায়। তার ফলস্রুতিতে মানুষ তার শ্রম কমিয়ে দেয়।
২) যার মাঝে ইগো আছে, সে সত্যিকার বড় হওয়ার আগেই নিজেকে বড় ভাবতে শুরু করে। তার এই ভাবনা তাকে সত্যিকার বড় হওয়ার পথে এগুতে বাধা দেয়।
কারনটা খুব স্বাভাবিক, আপনি যদি আগেই ভেবে বসে থাকেন আপনি ইতোমধ্যেই অনেক বড় কিছু করে ফেলেছেন, তবে আর সত্যিকার বড় কিছু করার জন্য কষ্ট করার দরকার মনে করবেন না।
৩) ইগো আমাদের সাথে এই খেলাটাই খেলে। ইগো সম্পন্ন মানুষ তার মিথ্যা অহঙ্কার নিয়ে বসে থাকে, আর অন্যরা তাকে টপকে সত্যিকারের বড় হয়ে ওঠে।
৪) আবার অনেক মানুষ কিছুটা সফলতা পেয়েই নিজেকে অনেক বড় ভাবতে শুরু করে। তারা মনে করে তাদের আর প্রমান করার কিছু নেই।
এই কারনে তারা সামনে চলা আর পরিশ্রম করা বন্ধ করে দেয়। কিন্তু তারা বুঝতেও পারে না যে এই ভুল ধারনাটি না থাকলে তারা আরও অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারত ইনশাআল্লাহ । অথবা বুঝলেও সেই সর্বনাশা ইগোর কারনে স্বীকার করতে চায় না।
৫) একজন মানুষের মধ্যে যে প্রবল ইগো সমস্যা আছে তার একটি প্রধান লক্ষণ তারা ভুল করেও ভুল স্বীকার করতে চায় না। অনেক সময়ে ভুল বুঝতে পারলেও তারা তা স্বীকার করে না। সেই অস্বীকার যেমন অন্যদের কাছে করে, তেমনি তাদের নিজেদের কাছেও করে। আর ভুল স্বীকার না করলে সেই ভুল শোধরানোও অসম্ভব। একজন ইগো সম্পন্ন মানুষের যদি ইংরেজী গ্রামারে সমস্যা থাকে, এবং আপনি যদি তাকে সেটা ধরিয়ে দিতে যান, তাহলে সে আপনারই ওপর রাগ করবে। পরীক্ষায় নম্বর কম পেলে সেটা হবে শিক্ষকের দোষ, কিন্তু নিজে নিজের জ্ঞান বাড়ানোর কোনও চেষ্টা সে করবে না।
মনে রাখবেন :-
“পৃথিবীর যাবতীয় বিবাদ, যুদ্ধ আর ব্যর্থতার জন্য যদি মাত্র একটি জিনিসকে দায়ী করা হয় – তা হবে মানুষের ইগো”
আপনার কি ইগো আছে বুঝবেন কিভাবে?
“কেউ আপনার ভুল ধরিয়ে দিলে যদি আপনি অপমান বোধ কর, তবে মনে রেখে আপনার মাঝে ইগো ভাইরাস আক্রমণ করেছে ”
হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, أصُوْلُ الْخَطَايَا كُلِّهَا ثَلاَثَةٌ: الْكِبْرُ وَهُوَ الَّذِيْ أصَارَ إِبْلِيسَ إِلَى مَا أصاره، والْحِرْصُ وَهُوَ الَّذِي أخرج آدم من الْجنَّة، والْحَسَدُ وَهُوَ الَّذِي جرأ أحد بني آدم على أَخِيه، فَمن وقِي شَرَّ هَذِه الثَّلاَثَة فقد وقى الشَّرَّ كله- فالكفر من الْكبر والمعاصي من الْحِرْص وَالْبَغي وَالظُّلم من الْحَسَد- সমস্ত পাপের উৎস হ’ল তিনটি : (১) অহংকার/ ইগো যা ইবলীসের পতন ঘটিয়েছিল। (২) লোভ, যা জান্নাত থেকে আদম-কে বের করে দিয়েছিল। (৩) হিংসা, যা আদম (আঃ)-এর এক সন্তানের বিরুদ্ধে অপর সন্তানকে প্রতিশোধপরায়ণ করে তুলেছিল। যে ব্যক্তি উক্ত তিনটি বস্ত্তর অনিষ্ট থেকে বেঁচে থাকতে পারবে সে যাবতীয় অনিষ্ট থেকে বেঁচে থাকতে পারবে। কেননা কুফরীর মূল উৎস হ’ল ‘ইগো অহংকার’। পাপকর্মের উৎস হ’ল ‘লোভ’। আর বিদ্রোহ ও সীমালংঘনের উৎস হ’ল ‘হিংসা’। (. ইবনুল ক্বাইয়িম, আল-ফাওয়ায়েদ ৫৮ পৃঃ।)
অহংকার ও ইগো দু’টিই বড়াই ও বড়ত্বের একক উৎস থেকে উৎসারিত। বস্ত্ততঃ এই রোগে যে আক্রান্ত হয়, সে নিজেকে নিজে ধ্বংস করে। তার দ্বারা সমাজ, সংগঠন, রাষ্ট্র এমনকি নিজ পরিবারও ধ্বংস হয়।
অহংকারের নিদর্শন সমূহ
(১) দম্ভভরে সত্যকে প্রত্যাখ্যান করা : এটাই হ’ল প্রধান নিদর্শন। যা উপরের হাদীছে বর্ণিত হয়েছে।
(২) নিজেকে সর্বদা অন্যের চাইতে বড় মনে করা : যেমন ইবলীস আদমের চাইতে নিজেকে বড় মনে করেছিল এবং আল্লাহর অবাধ্য হয়েছিল। সে যুক্তি দিয়েছিল, خَلَقْتَنِي مِنْ نَارٍ وَخَلَقْتَهُ مِنْ طِينٍ ‘আপনি আমাকে আগুন থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং আদমকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে (আ‘রাফ ৭/১২)।
অতএব أَأَسْجُدُ لِمَنْ خَلَقْتَ طِينًا ‘আমি কি তাকে সিজদা করব, যাকে আপনি মাটি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন? (ইসরা ১৭/৬১)
এই যুক্তি ও অবাধ্যতার শাস্তিস্বরূপ আল্লাহ তাকে বলেন, فَاخْرُجْ مِنْهَا فَإِنَّكَ رَجِيمٌ ‘বের হয়ে যাও এখান থেকে। কেননা তুমি অভিশপ্ত’ (ছোয়াদ ৩৮/৭৬)।
ইগো থেকে বাচার উপায় :-
পরের পোষ্টে লিখবো ইনশাআল্লাহ
সংকলন :- ব্রাদার রাহুল হোসেন (রুহুল আমিন)