শীতকাল এলেই আমরা দেখি গাছের পাতাগুলো বিবর্ণ হতে শুরু হয়েছে। একটা সময়ে পাতাগুলো সব ঝরে পড়ে আর শূন্য ডালপালা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে গাছের গুঁড়িটি। পাশ্চাত্যে এই মৌসুমকে বলা হয় "Fall" কারণ এ সময়ে একটু বাতাস পেলেই গাছের এই মুচমুচে শুকনো পাতাগুলো ঝরে পড়ে। এই ঘটনাটি আমরা প্রতি শীতকাল এলেই দেখতে পাই। কিন্তু আমরা কি কখনো ভেবেছি কেন শীতকালে পাতা শুকিয়ে যায়, আর কেনই বা ঝরে পড়ে? এটা জানার জন্য প্রথমে আমাদের জানতে হবে পাতার কাজ নিয়ে। গাছে পাতা থাকার উপকারিতা কি ? সবুজ পাতায় রয়েছে ক্লোরোফিল। এই কারণে পাতায় গাছের খাবার তৈরি হয় এবং এই খাবার গাছের সারা শরীরে ছড়িয়ে গিয়ে তাকে বাঁচিয়ে রাখে।
এ ছাড়াও গাছের নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস নিতে সাহায্য করে এই পাতা। কিভাবে ? বেঁচে থাকার জন্য আমাদের মতো গাছেরও অক্সিজেন গ্রহণ এবং কার্বন ডাই অক্সাইড বর্জন করতে হয় এবং এই কাজটা হয় পাতার মাধ্যমে। আরও একটি কাজ করে এই পাতার গুচ্ছ, আর তা হল গাছকে ঘামতে সাহায্য করা !
গাছ মাটি থেকে যতখানি জল উত্তোলন করে ততখানি জল তার শারীরবৃত্তীয় কাজে ব্যবহৃত হয় না। অতিরিক্ত জলটুকু বাষ্পাকারে ছেড়ে দেওয়া হয় পাতা থেকে। এখানেই আসে শীতকালে পাতা ঝরে যাওয়ার প্রসঙ্গ। শীতকাল এলেও পাতা থেকে এই জল ছেড়ে দেওয়ার প্রক্রিয়াটি বন্ধ হয় না।
গাছে যত বেশি পাতা থাকবে তত বেশি জল হারিয়ে যাবে গাছের শরীর থেকে। ফলে গাছে জলের ঘাটতি দেখা দেবার সম্ভাবনা থাকে। এ কারণে নিজের স্বার্থেই পাতাগুলোকে ঝরিয়ে ফেলে গাছ এবং শীতকালের স্বল্প পরিমাণ জলটুকু নিজের মাঝে বাঁচিয়ে রাখে। এ তো গেলো কারণ।
এবার দেখা যাক কি প্রক্রিয়ায় গাছ নিজের পাতা নিজেই ঝরিয়ে ফেলে। বলা যেতে পারে গাছ নিজেই কাঁচি দিয়ে কেটে ফেলে পাতাগুলোকে। শীতকালের শুরুতে যখন দিনের দৈর্ঘ্য ছোট হতে শুরু করে, বাতাসের তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা দুটোই কমতে থাকে তখন গাছের শরীরে তৈরি হয় একটি হরমোন যাতে পাতাগুলো নির্দেশ পায় ঝরে পড়ার। পাতা যেখানে গাছের সাথে সংযুক্ত থাকে, সেখানে তৈরি হয় ছোট ছোট কিছু কোষের।
এ কোষগুলাের নাম "Abscission cell" বা "কর্তন কোষ"। কিছুদিনের মাঝেই এই কোষগুলাে আকারে এবং সংখ্যায় বৃদ্ধি পেয়ে একটা গাছ এবং পাতার মাঝে একটি চিকন অঞ্চল তৈরি করে। এই অঞ্চলটি পাতাকে ক্রমশ গাছ থেকে আলাদা করে ফেলে এবং একটু বাতাস পেলেই সেই পাতাটিকে একেবারেই গাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। গাছের সব পাতার গােড়াতেই এই অঞ্চল তৈরি হয় ফলে পাতা ঝরে যায়।
ক্রেডিট: ডেইলি হান্ট