কখনো কেউ হয়তো কোনো কথাই বলছে না, একেবারে চুপ, কিন্তু দাঁড়ানোর ভঙ্গি, মুখ আর হাত-পায়ের নড়াচড়া বলে দিচ্ছে তিনি এই জায়গায় মোটেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন না, তাড়াতাড়ি বিদায় নিতে পারলেই খুশি। এভাবে প্রত্যেক মানুষ তার উচ্চারিত শব্দের বাইরেও দেহভঙ্গি, মুখমণ্ডল আর শারীরিক নড়াচড়ার মধ্য দিয়ে তার মনোভাব জানান দেয়। অভিব্যক্তি দিয়ে বুঝিয়ে দেয় তার মনে প্রকৃতপক্ষে কী আছে, অনেক সময় চেষ্টা করেও মনের ভাব আড়াল করতে পারে না। হয়তো মুখে বলছে একটা, কিন্তু মনে বলছে তার ঠিক উল্টোটা। তার দেহের প্রতিটি নড়াচড়া, মুখের ভাব মনের কথাটি ফুটিয়ে তুলতে পারে। একেই বলে শরীরী ভাষা বা বডি ল্যাংগুয়েজ। দেহের ভাষা দিয়ে যে যোগাযোগ করা হয় সেটিকে বলা হয় নন-ভার্বাল কমিউনিকেশন বা অনুচ্চারিত যোগাযোগ।
গবেষণা বলে, মানুষের মনের ভাব প্রকাশ করার ক্ষেত্রে উচ্চারিত শব্দ আর বাক্যের ভূমিকা মাত্র ৭ শতাংশ। বাকি ৯৩ শতাংশই হচ্ছে নন-ভার্বাল কমিউনিকেশন; যার মধ্যে ৫৫ শতাংশ হচ্ছে তার দেহের ভাষা বা বডি ল্যাংগুয়েজ আর ৩৮ শতাংশ হচ্ছে স্বরভঙ্গি। শব্দের ওঠানামা, স্বর প্রক্ষেপণ আর কখন থামতে হবে আর কখন দ্রুত বলতে হবে, কখন আস্তে বলবে কখন জোরে বলবে সেগুলো! এর মানে দাঁড়ায় আমাদের মনের ভাবের বেশির ভাগ অংশই দেহের ভাষায় প্রকাশিত হয়। আমাদের আবেগ আর চিন্তা প্রকাশ পায় দেহের ভাষার মধ্য দিয়ে। প্রকাশ পায় আমাদের ব্যক্তিত্বও।
একজন মানুষ মুখে যা-ই বলুক না কেন, সে কখন মিথ্যা বলছে, কখন বিরক্ত হচ্ছে, কখন খুশি হচ্ছে, কখন ভয় পাচ্ছে, কখন সত্য গোপন করছে, কখন কিছু আড়াল করতে চাইছে, তা কিন্তু তার দেহের ভাষায় প্রকাশ পেতে পারে। বিষয়গুলো বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। একটু চর্চা করলে অপরের দেহের ভাষা বোঝার মতো সক্ষমতা অর্জন করা যায়। আবার পেশাগত জীবনে সফল হতে, সামাজিক আদবকেতাগুলো রপ্ত করতে দেহের ভাষা জানা এবং সে অনুযায়ী নিজের বডি ল্যাংগুয়েজে পরিবর্তন আনারও প্রয়োজন হতে পারে। করপোরেট জীবনে, সামাজিক দক্ষতা অর্জনে, অভিনয়ে, অপরাধ তদন্তে বডি ল্যাংগুয়েজ বোঝার গুরুত্ব অনেক। পাশ্চাত্যের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে বডি ল্যাংগুয়েজের ওপর উচ্চতর কোর্স রয়েছে আর সেসব দেশে রয়েছে পেশাদার বডি ল্যাংগুয়েজ বিশেষজ্ঞ।
দেহের কিছু বিষয় বিশ্লেষণ করলে বডি ল্যাংগুয়েজের কিছু ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। যদিও সংস্কৃতিভেদে এই দেহভাষার আলাদা অর্থ হতে পারে।
©প্রথম আলো