ধরেন আপনেরঃ
মনে করেন আপনের মত এটাও সমান পাওয়ারফুল ক্যাচাল তৈরি করতে পারে। উদাহরণ দিব ? ১০ নাম্বার ফল মার্কেটে অফিস ফেরত এক লোক বলতেসিল "১৬০ টাকা দিয়া এক তরমুজ নিসি, ছোট্টো। বাসায় নেওয়ার পর আপ্নের ভাবী একাই খেয়ে ফেলল ধরেন আপনার বিচি শুদ্ধা।"
আপনারঃ
আগের দুইটার মতন এইটাও ফানি মুদ্রাদোষ। কথা বেশি বলতে হয় এমন পেশার লোকজন এই মুদ্রাদোষ মাখায়ে কথার একদম ছাতু বের করে ফেলে। "আপনার ছেলে পেলে নিয়া আছি টেনশানে। কথা শুনে না, বুঝলেন? এদের পীছনে আপনার কম টাকা ঢালছি ? তারপরেও দেখেন আপনার অবস্থা। রেজাল্ট তো খারাপ করেই, বড় ছেলেটার আবার আপনার মেয়ে নিয়া বদনাম আছে। আপনার বউ রে বল্লাম তুমি তো বাসায় থাকো তুমি নজর দাও, সে বলে আপনার ছেলের বাবাই যদি নজরে না রাখে কেমন হবে। কি বলবো আপনার ..."
বুঝছোঃ
বহুল প্রচলিত আরেকটা মুদ্রাদোষ। শুনতে খারাপ লাগে না, তেমন প্যাচঘোচও লাগায় না। কিছুটা উপকারী বরং। সাধারনত যারা মাস্টারী করে তাদের মধ্যে বেশি ঢুকে যায় এইটা। লম্বা লম্বা বাক্যের মাঝখানে "বুঝছো?" না ঢুকালে মনে হয় লেকচার দিয়া আরাম নাই। আমার কলেজের কেমিস্ট্রি সারের মুখে কয়েক কোটি বার "বুঝছো?" শুনে পার করেও আমি কেমিস্ট্রিটা ঠিক বুঝিনাই। এখন এক কোচিং এর মাস্টার এর মুখে বার বার "বুঝছো" শুনি। বুঝছো'র আঞ্চলিক রূপ গুলাও কিউট। আমাদের নোয়াখালীর অনেকে বলে "বুইজ্ঝোনি?" চিটাগাং এ বলে "ন বুঝদ্দে?" যশোরের এক পাগলা ছেলে খুব মিষ্টি করে বলতো "বুঝিছো?" আর আমার বন্ধু গালিব এর এক চাচা ছিল তার ছিল "বোজো নাই??"
ইয়ে, ইশেঃ
ঘরে ঘরেই পাওয়া যাবে এই দোষে দুষ্টলোক। হাহাহা এর ব্যাপারে বিতং করে বলার কিছু কি আছে ? আমরা অনেক নিজেই হয়ত বলে ফেলি "ইয়ের উপর থেকে ইশে টা দাও তো" যাকে বলা হয় তার মাথায় হালকা আঁচ হয়, ঝাড়ি মারে। এই ইয়ে ইশে এতই কমন যে একে দোষ হিসেবে ধরাও অনেকে বাদ দিসে।
ধুরোঃ
সম্ভবত এককালে এই শব্দটা ছিল "দুর হ" কেমনে জানি মাঝখানে একফোঁটা সুপারগ্লু পড়ে জোড়া লেগে হার্ড হয়ে ধুরো হয়ে গেসে। বিরক্তি প্রকাশের এই শব্দ অনেকেই বেশি বেশি ছাড়েন। অল্প বিস্তর মনে হয় আমি নিজেই করি।
যা তাঃ
এক সময় যা তা বলতে ফালতু বুঝানো হত। কোনো এক সিস্টেমে মনে হয় টেকাটুকা খরচ করে এই শব্দ এখন অনেক পাওয়ারফুল হয়ে গেসে। এটা হাল জামানার দোষ। ইদানিং কালের তরুনদের বিষ্ময়, বিরক্তি, পুলক, ভয় সব ধরনের আবেগ প্রকাশের মত স্থিতিস্থাপকতা আছে এই দুই শব্দের। এইটা আলু তরকারীর মতন। সব কিছুতেই যায়। তাই বেশি বেশি ঘষলেও ফেনা কমেনা। ধুত্তরী, কি থেকে কি বলতে শুরু করলাম। যা তা'র কথায় আসি, "যা তা" যারা ব্যাবহার করেন, তারা যা তা লেভেলে, যা তা জায়গায় যা তা বলতে থাকেন
- দোস্ত মালটা যা তা (মাল বলতে যে যার রুচি ও বয়স অনুযায়ী বুঝিয়া লইবেন, কর্তৃপক্ষের দায় নাই)
- পরীক্ষার প্রশ্ন যা তা লেভেলে হার্ড হইসে
- গানটা / মুভিটা যা তা (খারাপ না কিন্তু, জোশ বুঝানো হইসে)
- যা তা পিনিক
- যা তা লেভেলের কুল
এই রকম বহু বহু বহু আছে। বলতে থাকলে শেষ হবে না।
আরেঃ
খুবই নির্দোষ এই শব্দটা খুব খারাপ কমন না কিন্তু। অনেকেই আছে আরে ছাড়া বাক্য শেষ করতে পারে না।
- আরে খাবার কই ?
- আরে লাইট জ্বালানো কেন ?
- আরে আসতেসি
- আরে যাব না বলি নাই তো
একটা সুক্ষ চাপা বিষ্ময় বা প্রশ্নবোধক জোর আছে মনে হয় এই শব্দে।
হচ্ছে, হলোঃ
এই দুই শব্দের একটাকে, অনেকেই কথায় বাড়তি প্রয়োগ করেন। "আমি হচ্ছি গিয়ে জব করি" "তুমি হলো তাকে বইল, ফোন করতে" এমন কথা শোনা যায় প্রায়ই। আর খুব রেয়ার একজন হলেন আমার চারুকলার বাগেরহাটের বড়ভাই, তিনি এই দুইটাকেই টেপ মেরে এক সঙ্গে চালান, উনার কথা অনেক টা এরকম, " তুই হচ্ছে হলো কুবরিকের ছবিগুলা দেখিস" " তারাশংকর হচ্ছে হলোগে আসলে বস একটা"
খাঁটি বাংলায় এমন হাজার হাজার শব্দকে মুদ্রাদোষে দুষিত করা হয়েছে- "আসলে", "সেটা বিষয় না, বিষয়টা হল", "ঘটনা হচ্ছে", "ব্যাপারটা হল", "তারপরে"
আরো বলতে হবে ????
বাংগালীরা ইংলিশ ভাষাকেও মাফ দেয় নাই। দোষের কিল তারাও খাইসে। কম না একদম।
ওকেঃ
সম্ভবত সবচেয়ে বেশি যেই ইংরেজী মুদ্রাদোষটা পাওয়া যাবে তা হচ্ছে "ওকে"।
- বলসি তো, ভালোবাসি ওকে ?
- কাকে ?
- তুমি বুঝোনাই ওকে ?
- কাকে বুঝতে হবে ?
- আমাকেই বুঝো নাই ওকে ?
- তোমাকে বুঝবো ঠিকাসে, ওকেটা কে ?
- কেউ না ওকে ?
- ধুর
এমন হয় বলব না, কিন্তু হতেও তো পারে, ওকে ? হিহিহি
সাপোজঃ
এই ইংরেজী শব্দটা অনেকের জিব্বায় আটকে গেসে। কিন্তু যারা এটা ব্যবহার করেন অবচেতনেই তাদের অনেকে এর বাংলা অর্থটাকে পাশে বসিয়েই করেন। যেমন " সাপোজ 'ধরেন' আপনে গেলেন, তারে পাইলেন না, কি করবেন ?"
লিসেনঃ
এটাও মাস্টারী বা বসিং টার্মে ফিট খায় বলে, এই লাইনের পাবলিকের মুখে আটকে থাকে বেশি। কথা মন দিয়ে শুনতে বলার জন্য কিন্তু না, অভ্যাস বসতঃ সাধারন কথায় ও এই গুরুত্বারোপ মূলক শব্দ ঢুকায়ে দেন অনেকে "লিসেন তুমি যাও গা" "লিসেন আমি খাব না"
বেসিক্যালীঃ
এক পরিচালক বড় ভাইয়ের আছে এই রেয়ার শব্দের অভ্যাস, উনি যখন খুব সিনসিয়ারলী কিছু বলেন সেটা এমন শোনায় - "বেসিক্যালী শটটা আমরা দেখি মিড লং এ, সেখানে বেসিক্যালী ছেলেটা বসে আছে এদিক ফিরে, বেসিক্যালী সে তেমন কিছুই করছে না, হয়ত। তারপর বেসিক্যালী আমারা তাকে ক্রস করে সামনে দেখি..."
ইউ নোঃ
এটি একটি কচি বয়সের দোষ। নিজেকে কুল দাবী করা জেনারেশানের নিজস্ব বাচনরীতিতে এই শব্দ ঢুকে গেঁড়ে বসছে। আধা বাংলা আর আধা ইংলিশ কথা জোড়া দিতে এই শব্দের বেশ ভালো দখল আছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে "ইউনো" কাজ করে স্কিপ ওয়ার্ড হিসাবে। " গেসিলাম ইউনো, খেলাম, মুভি দেখলাম ইউনো, বোরিং ইউনো যা হয় আরকি এইসব পার্টিতে"
লাইকঃ
এটা নতুন কানে আসা দোষ। কথার মাঝে হুদাই জায়গা নিয়ে বসে থাকে, কোনো কাজ নাই, হয়ত এর ব্যবহারে বক্তার কুলনেস বাড়ে, বেশি ব্যবহার করতে দেখি, থুক্কু, শুনি -মেয়েদের। স্পেশালী কথায় রং ঢং চাপানো মেয়েদের এই শব্দ বেশি ব্যবহার করতে শোনা যায় এভাবে - "ওর কথা শুনে আই ওয়াজ লাইক টাশকী খেলাম। হি ওয়াজ লাইক কিচ্ছু হয় নাই এমন ভাবে তাকায় ছিল"
Writer : Mukul Chowdhury