এ প্রশ্নের উত্তর পাবার জন্য প্রথমে আমাদের ফটোট্যাক্সিস (Phototaxis) শব্দটার সাথে পরিচিত হওয়া দরকার। কোন জীবের স্বতঃস্ফূর্তভাবে আলোর দিকে বা আলো থেকে দূরে সরে যাবার প্রবণতাকে ফটোট্যাক্সিস বলে । এটা আবার দু রকমের- আলোর দিকে সরে যাওয়া হলো ধনাত্মক ফটোট্যক্সিস।আর আলো থেকে দূরে সরে যাওয়া হলো ঋণাত্মক ফটোট্যাক্সিস। মথ, মাছি, মে ফ্লাই, ক্রেন ফ্লাই, গুবরে পোকা এসব পতঙ্গ ধনাত্মক ফটোট্যাকটিক ( Positively Phototactic ) । আপনারা হয়ত এতক্ষণে বুঝে গিয়েছেন যে আরশোলা আসলে ঋণাত্মক ফটোট্যাকটিক
এখন এই আকর্ষণের কারণ অনুসন্ধান করা যাক। যেসব পতঙ্গ রাতে উড়ে বেড়ায় তারা সাধারণত চাঁদের আলো ব্যবহার করে দিক নির্ণয় করে থাকে। তারা চাঁদের প্রতিফলিত আলোর সাথে সবসময় একটা ধ্রুবকোণ বজায় রেখে চলাচল করে। বৈদ্যুতিক বাতির কৃত্রিম আলো পতঙ্গের এই ক্ষমতা প্রয়োগে বাধা দান করে। এই কৃত্রিম আলো চাঁদের আলোর চেয়ে বেশি তীব্র এবং এটা বিভিন্ন দিকে প্রতিফলিত হয়। যখন কোন পতঙ্গ কোন কৃত্রিম আলোর কাছাকাছি আসে তখন সে সেটাকে চাঁদের আলো ভেবে নিয়ে দিক নির্ণয় করার চেষ্টা করে। কিন্তু কৃত্রিম আলো বিভিন্ন দিকে প্রতিফলিত হয় এ কারণে পতঙ্গের পক্ষে আলোক উৎসের সাথে সবসময় একটা স্থিরকোণ বজায় রেখে চলা সম্ভব হয় না। তাই সে বিভ্রান্ত হয়ে একটা অসীম সর্পিলাকার পথে আলোক উৎসের চারিদিকে উড়তে থাকে। লক্ষ্য করে দেখবেন পোকামাকড়েরা হলুদ বা অন্য কোন রঙের আলোর চেয়ে সাদা আলোর প্রতি বেশী আকৃষ্ট হয় কারণ চাঁদের আলোর রঙও সাদা।
অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন অত্যাধিক আলোক দূষণ ( Light Pollution ) এর কারণে অনেক প্রজাতির পোকার সংখ্যা বেশ কমে গেছে। যেমন কৃত্রিম আলোর কারণে জোনাকি পোকাদের নিজেদের মধ্যে আলোক সংকেত আদান প্রদানে সমস্যা হয়। ফলে তাদের প্রজনন বাধাগ্রস্থ হয়। এ কারণে শহরাঞ্চলে জোনাকি পোকা তেমন দেখা যায় না।