শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা— তৈলাক্ত ত্বকের সমস্যা সারা বছরই থাকে। তবে গরমে আর বর্ষায় তৈলাক্ত ত্বকের সমস্যা আরও বেশ কয়েকগুণ বেড়ে যায়। সারাক্ষণ তেল চিটচিটে ত্বকে ধুলোবালি জমে ব্রণ, ফুসকুড়ির সমস্যা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। এ ছাড়াও তৈলাক্ত ত্বকে কালচে ছোপ পড়ে যাওয়া তো একটা সাধারণ সমস্যা। ত্বক যত তৈলাক্ত হবে, ততই বাড়বে তার কালচে ভাব।
তৈলাক্ত ত্বকের সমস্যা থেকে রেহাই পেতে অনেকেই দিনের মধ্যে অন্তত তিন-চারবার ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে থাকেন। বাজার চলতি নানা প্রসাধনী ব্যবহার করে মুখের তৈলাক্ত ভাব কাটানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তাতেও সমস্যা থেকেই যায়! তা ছাড়া, বাজার চলতি বেশির ভাগ প্রসাধনী পন্যে ব্যবহৃত রাসায়নিক ত্বকের ক্ষতি করতে পারে। তবে একেবারে ঘরোয়া ভেষজ পদ্ধতিতেও তৈলাক্ত ত্বকের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। আসুন জেনে নেওয়া যাক তৈলাক্ত ত্বক আর মুখের কালচে ভাব দূর করার সহজ ঘরোয়া উপায়...
উপকরণ:
১টি পাকা কলা, ২ চামচ পাতি লেবুর রস, ১ চামচ মধু।
পদ্ধতি ও ব্যবহারবিধি:
প্রথমে কলার খোসা ছাড়িয়ে সেটিকে ভাল করে চটকে নিন।
এর পর এর সঙ্গে মধু আর পাতি লেবুর রস ভাল করে মিশিয়ে ঘন পেস্টের মতো তৈরি করুন। পাকা কলা, পাতি লেবুর রস আর মধু দিয়ে তৈরি এই পেস্ট হাতে, মুখে ও গলার ত্বকে ভাল করে মেখে নিয়ে মিনিট পনেরো এ ভাবেই রেখে দিন।
মিনিট পনেরো পর মুখ ভাল করে ধুয়ে একটি নরম তোয়ালে দিয়ে চেপে চেপে মুছে নিন। তবে জোরে চাপ দিয়ে বা ঘষে ঘষে মুখ মুছবেন না। সপ্তাহে অন্তত ২-৩ বার এই প্যাক ব্যবহার করতে পারলে খুব ভাল ফল পাওয়া যাবে।
১. তৈলাক্ত ত্বকে লোমকূপ বড় হয়ে যায়। তেল জমে সেসব বন্ধ হয়ে ব্রণও ওঠে। তাই গরমে প্রতিকূল আবহাওয়া থেকে তৈলাক্ত ত্বক রক্ষা করতে হলে প্রতিদিন ভালোভাবে ত্বক পরিষ্কার করতে হবে। বাড়িতে বসেই ত্বকের যত্ন নিতে পারেন।
২. শশার রস তৈলাক্ততা দূর করতে খুবই কার্যকর। প্রতিদিন বাইরে থেকে এসে শশার রস দিয়ে মুখ পরিষ্কার করতে পারেন।
গরমে তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে শসার রস - shajgoj.com
৩. এ ছাড়া স্ক্রাব হিসেবে ব্যবহার করতে চাইলে এর সঙ্গে চালের গুঁড়া মিশিয়ে নিলেই হবে। যাদের মধুতে অ্যালার্জি নেই, তারা সামান্য মধুও মিশিয়ে নিতে পারেন এই মিশ্রণে। সপ্তাহে দুই দিন এই প্যাক ব্যবহার করলে ত্বক পরিষ্কার হবে। ব্ল্যাকহেডস ও হোয়াইটহেডস দূর হয়ে যাবে। খেয়াল রাখতে হবে, ব্রণ থাকলে স্ক্রাব করা যাবে না।
৪. গোলাপ জল, লেবুর রস সমান পরিমাণে নিয়ে একটি প্যাক বানিয়ে আধ ঘণ্টা মুখে লাগিয়ে রাখুন। আলতো ভাবে তুলো দিয়ে মুখ পরিষ্কার করুন ধীরে ধীরে। এতে ব্রণ এবং ফুসকুড়ির দাগ উধাও হয়ে যাবে।
৫. এক চা চামচ বেসন, অল্প হলুদ গুঁড়ো, টক দই একসঙ্গে মিশিয়ে লাগাতে হবে এবং আধঘণ্টা পর ধুয়ে ফেলতে হবে।
মাথার ত্বকের যত্ন
তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারীদের মাথার ত্বকও তেলতেলে হয়। ময়লা জমে বেশি আর চুলের ময়লা থেকে খুশকির প্রবণতা বেড়ে যায়। গ্রীষ্মকালে তেলের তীব্রতা যেন সব বাঁধ ভেঙ্গে দেয়। নিয়মিত যাদের বাইরে বের হতে হয়, তারা প্রতিদিন মৃদু ধরনের শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন। তা না হলে সপ্তাহে অন্তত তিন দিন শ্যাম্পু করা উচিত। অনেক সময় তৈলাক্ত ত্বকের চুলেও রুক্ষতা দেখা দেয়। তখন কন্ডিশনার দিতে পারেন। অন্য সময় এটি ব্যবহার করার দরকার নেই। এ সময়ে যাদের চুল তৈলাক্ত ধরনের তাদের চুল খুব দ্রুতই ময়লা হয়ে যায়।
৬. খুশকির সমস্যার সমাধানের জন্য ঘরেই বসেই একটি প্যাক তৈরি করতে পারেন। সারা রাত মেথি ভিজিয়ে রেখে পরে তা টক দইয়ের সাথে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে মাথায় লাগান। কিছুক্ষণ পর চুল ধুয়ে ফেলুন। মাসে একবার এ প্যাকটি ব্যবহার করতে পারেন।
৭. সপ্তাহে এক দিন নারিকেল তেলের সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে ভালোভাবে চুলে মালিশ করুন। এরপর তোয়ালে গরম পানিতে ভিজিয়ে চেপে নিয়ে সেটি মাথায় ১০ মিনিট পেঁচিয়ে রাখুন। এতে চুলের গোড়া মজবুত হবে। এরপর শ্যাম্পু করে ফেলুন।
গরমে তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন নিতে লেবুর রস ও নারকেল তেল।
৮. চা এর মধ্যে ট্যানিক যুক্ত এক ধরনের কষ জাতীয় পদার্থ আছে যা চুল থেকে অতিরিক্ত তেল দূর করতে সাহায্য করে। একটা টি-ব্যাগ কে কিছুক্ষন কুসুম গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখুন অথবা চা চুলায় জ্বাল দিয়েও নিতে পারেন। এবার এটাকে মাথার তালুতে লাগিয়ে কিছুক্ষন অপেক্ষা করুন। কিছুক্ষন পর মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে শ্যাম্পু করে ফেলুন।
৯. বেকিং সোডা চুলের তৈলাক্ত ভাব দূর করতে সাহায্য করে। দুই টেবিল চামচ বেকিং সোডা হালকা গরম পানিতে মিশিয়ে চুলে লাগিয়ে নিন। কিছুক্ষণ রেখে চুল ধুয়ে শ্যাম্পু করে ফেলুন।
১০. ভিনেগার ব্যবহারেও চুলের তৈলাক্ততা কমে যায়। ৩ টেবিল চামুচ ভিনেগার এক কাপ পানিতে মিশিয়ে স্প্রে বোতলে ভরে সম্পূর্ন চুলে স্প্রে করুন। ২০ মিনিট পর কুসুম গরম পানি দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। এতে চুলের তৈলাক্ত ভাব কমার সাথে সাথে চুল উজ্জ্বল হবে।
হাত-পায়ের যত্ন
১১. শশার রস, গাজরের রস, চালের গুঁড়া, দুধ ও এক চা-চামচ নারকেল তেল মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করুন। সপ্তাহে অন্তত দুইবার হাত-পায়ে ব্যবহার করা যেতে পারে এই প্যাক।
গরমকালে তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারীদের আরো কিছু প্যাক
১২. শশার রসের সঙ্গে কর্নফ্লাওয়ার বা লাল আটা মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে প্যাক হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। এটি মুখে ও গলায় ব্যবহার করলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে।
১৩. লোমকূপ বড় দেখানোর সমস্যা হলে একটু বাড়তি যত্ন নিতে হবে। এ জন্য ডিমের সাদা অংশ মুখে লাগিয়ে এরপর টিস্যু পেপার চেপে ১০ মিনিট অপেক্ষা করুন। শুকিয়ে গেলে ধীরে ধীরে টিস্যু পেপার তুলে পানি দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করে ফেলুন। ত্বকে টানটান ভাব চলে আসবে।
১৪. নিয়মিত ঘৃতকুমারী (অ্যালোভেরা জেল) দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করা যেতে পারে। ত্বকের জন্য এটি অনেক উপকারী।
১৫. রসুনে প্রচুর পরিমাণে এন্টি-বায়োটিক থাকায় ত্বকের তৈলাক্তভাব দূর করতে রসুনের পেস্ট ব্যবহারও ভালো।
১৬. দুই চামচ মুলতানি মাটির সঙ্গে পরিমাণমতো গোলাপজল মিশিয়ে পেস্ট করে সারা মুখে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
১৭. এক চামচ চন্দন গুঁড়োর সঙ্গে এক চামচ মুলতানি মাটি এবং পানি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। মুখে ১০-১৫ মিনিট রেখে শুকিয়ে এলে ধুয়ে ফেলুন।
১৮. আপেলের রস ও লেবুর রস একসাথে মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
১৯. একটি পাত্রে পানি গরম করে তাতে চা পাতা দিয়ে ফুটিয়ে নিন এরপর মুখ গামছা দিয়ে ঢেকে গরম ভাব নিন মুখে ৩ মিনিট।