অতিরিক্ত ঘুম থেকে বাঁচার উপায়ঃ
১· অ্যালার্মঃ
আপনার কখন ঘুম থেকে ওঠা জরুরি তার উপর ভিত্তি করে ১-২টি অ্যালার্ম ঠিক করে রাখুন। প্রতিদিন একই সময় ঘুম থেকে ওঠার চেষ্টা করুন।অ্যালার্ম ঘড়িটি হাতের থেকে দূরে রাখুন। এতে অ্যালার্ম বন্ধ করার জন্য হলেও আপনাকে বিছানা ছেড়ে ওঠা লাগবে।যখন অ্যালার্ম বাজবে তখনই উঠে পড়বেন। ৫ মিনিট বেশি ঘুমানোর জন্য আপনার ১ ঘন্টার দেরি হয়ে যেতেই পারে!
২.খাওয়া দাওয়াঃ
ক) খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে আমরা অনেকেই নাস্তা করতে চাই না। কিন্তু বলা হয়, যদি আপনি ঘুম থেকে ওঠার ৩০ মিনিটের মধ্যে সকালের নাস্তা সেরে ফেলেন, তাহলে আপনি সারাদিনের জন্য কিছু বাড়তি শক্তি পাবেন এবং এটি আপনাকে রাতে ভালো মতো ঘুমাতেও সাহায্য করবে।
খ)পানি খান
ঘুম থেকে উঠেই এক থেকে দু’গ্লাস জল খান। জল শরীরকে সতেজ করে তোলে। মস্তিষ্কও উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। ঘুম ঘুম ভাব অনেকটাই কেটে যায়। এছাড়াও বেশী ঘুম পেলে, চোখে ঠাণ্ডা জলের ঝাপটা দিন। ঘুম থেকে উঠেই চোখে মুখে ঠাণ্ডা জলের ঝাপটা দিন। এতে ঘুম একদম কেটে যায় এবং হালকা গরমজলে ভালো করে স্নান করুন। ভালো করে স্নান করলে, শরীর অনেকটা ফ্রেশ লাগে।
গ) চা, কফি
চা, কফি তো এমনিতেই সকালে খান। কিন্তু ঘুম পেলে একটু বেশীই খান। মানে সকালের পর দুপুরের দিকে আরেকবার খান। এতে অতিরিক্ত ঘুমের সমস্যা কমবে। তবে সন্ধ্যাবেলা খাবেন না। তাহলে আবার রাতে সহজে ঘুম আসবে না। রাতে শোবার ৬ ঘণ্টা আগে পর্যন্ত চা, কফি খাবেন না। এই চা, কফির সাথে একটা হেলদি ব্রেকফাস্ট মেনে চলুন।
এমন কিছু খাবার খান, যেটা শরীরে এনার্জি বাড়াতে সাহায্য করবে। যেমন রুটি, সাথে কলা বা অন্য ফল, টকদই এসব খান। বিটের রস খান মাঝে মাঝে। এটা এনার্জি বাড়াতে অসাধারণ কাজ করে। এছাড়াও বেশী করে প্রোটিন জাতীয় খাবার খান। এবং গরমকাল আসছে তাই প্রচুর পরিমাণে জল খান যেটা শরীরে এনার্জি ধরে রাখতে সাহায্য করবে।
এছাড়াও রাতে হালকা খাবার খান। কারণ গরমে প্রায়ই রাতে বদহজম হবার সম্ভবনা থাকে। তাই রাতে ভালো করে রিলাক্সে ঘুমোতে হালকা খাবার খান। যেটা সহজে হজম হয়ে যাবে।
ঘ)জাঙ্ক ফুড এড়িয়ে চলুন।
৩.ঘুমানোর সময়ঃ
রাতে ১-২ ঘন্টা সময়ের ব্যবধানে একটি নির্দিষ্ট সময়ে প্রতিদিন শুয়ে পড়বার চেষ্টা করবেন।11 টা হলো ঘুমিয়ে পড়ার ভালো সময়।সাধারণত সপ্তাহের বন্ধের দিন আমরা একটু বেশি ঘুমাই। এই অভ্যাসটি না করাই ভালো। এটি আপনার নিয়মিত ঘুমের ধারায় ব্যাঘাত আনতে পারে।
৪.এক্সারসাইজ বা ব্যায়ামঃ
নিয়মিত ব্যায়াম করুন, স্বাস্থ্যকর খাবার খান। এটি আপনার শরীর ও মন ভালো রাখতে সাহায্য করবে।
শরীরের ফিটনেস বাড়াতে ব্যায়ামের থেকে ভালো কিছু হয় না। ব্যায়াম করুন, দৌড়ান। বাড়িতেই শরীরচর্চার কিছু যন্ত্রপাতি কিনে রাখুন। সেগুলো দিয়ে ব্যায়াম করুন যদি জিমে যাবার সময় না পান। এর সাথে মেডিটেশনও করুন।
সকালে বেশীক্ষণ না, ১০ মিনিটের জন্য মেডিটেশন করুন। প্রথমে চোখ বন্ধ রেখে, লম্বা শ্বাস নিন। এবার মনে মনে ৫ অবধি গুনুন। শ্বাস ধরে রেখে। এবার ৫ বলা হয়ে গেলে, ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন।
৫.সকালের সূর্য দেখার অভ্যাস গড়ে তুলুন।ভোর 5 টার দিকে উঠে যাতে প্রকৃতির তাজা বাতাস নিতে পারেন সেই উদ্দেশ্য ঘুমাতে যাবেন।
৬. কোনো প্রকার দুশ্চিন্তা বা হীনম্মন্যতার মধ্যে থাকলে তার আসল কারণ খুঁজে বের করুন। এটি কীভাবে সমাধান করা যায় তা আগে ঠিক করুন। কারণ দুশ্চিন্ত আর হীনম্মন্যতা আপনাকে ঠিকমতো ঘুমাতে দেবে না।
এগুলো ছিলো অতিরিক্ত ঘুমানোর অভ্যাস থেকে নিজেকে রক্ষা করার কিছু উপায়। তবে বড় ব্যাপার হলো, এখানে নিজের ইচ্ছাশক্তি সবথেকে বেশি কাজ করে। আপনি যদি এই বদভ্যাস ত্যাগে নিজে উদ্যোগী না হয়ে থাকেন, তবে কেউ আপনাকে সাহায্য করতে পারবে না।
৭. রাতে ভালো করে ঘুম দকার
রাতে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুম দরকার। তাই রাতে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ুন যাতে এই সময়টা ঘুমটা হয়। রাতে ঠিকমত ঘুম না হাওয়া, বা যথেষ্ট ঘুম না হলেও দিনে ঘুম পায়। মনে রাখবেন সারাদিন কাজের পর রাতে শরীরের দরকার উপযুক্ত রেস্ট। সেটা পাওয়ার আগেই যদি আপনি আবার কাজ করতে শুরু করে দেন, তাহলে সারাদিন ক্লান্ত, লাগবেই।
শরীর পরিমিত রেস্ট পেলে, তবেই আপনাকে পরের দিনের কাজের জন্য রেডি করতে পারবে। এনার্জি দিতে পারবে। তাই রাত অবধি জেগে থাকার অভ্যাস বন্ধ করুন।
ভালো ঘুম আনার জন্য নিচের লিংকটা দেখতে পারেন-
https://www.sciencebee.com.bd/qna/10699/%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%81%E0%A6%A4-%E0%A6%98%E0%A7%81%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%8B%E0%A6%B0
৮. ফোন বন্ধ রাখুন
রাতে ফোন নিয়ে শোয়াটাও আপনার সারাদিন ঘুম পাওয়ার একটা অন্যতম কারণ। কারণ রাতে ফোন নিয়েই অনেকটা সময় কেটে যায়। রাতে আপনি ঘুমোন কত দেরীতে সেটা খেয়াল আছে? তাই রাতে তো পর্যাপ্ত বিশ্রাম হয় না। সেই জন্যই সকালে ঘুম ভাঙতেই চায় না। আর সারাদিন ঘুম পায়।
এছাড়াও আমাদের ঘুম গাঢ় হবার জন্য মেলাটোনিন নামক হরমোনের ক্ষরণ হয়। ঘুম যত গাঢ় হয়, তত এই হরমোনটির ক্ষরণ হয়। ফোন থেকে একধরণের রে বেরোয়, যেটা এই হরমোনের ক্ষরণে বাধা দেয়। ফলে রাতের অনিদ্রা সমস্যা আরও বাড়িয়ে দেয়। ব্রেন ক্যান্সার পর্যন্ত ঘটাতে পারে। তাই ঘুমোবার আগে ফোন বন্ধ করে দিন বা দূরে রাখুন। মাথার পাশে ফোন নিয়ে একদম নয়।
৯.যেসব এড়িয়ে চলবেনঃ
মদ্যপান,ধুমপান এড়িয়ে চলুন।জাঙ্ক ফুড পরিহার কিরার চেষ্টা করুন।রাত জাগা ত্যাগ করেন।ক্লান্ত না হলেই ঘুমাতে যাবেন না।
১০.এতেও যদি না কমে, তা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।