পার্থক্যটা চোখে পড়ার মতো। শুধু মোমবাতির শিখা নয়− কেরোসিনের কুপি, হারিকেনের বাতি, কাঠ-খড় বা কাগজপোড়া আগুনের রং হলুদ; কিন্তু গ্যাসের চুলার আগুন সব সময় নীলাভ। রঙের এই পার্থক্যের কারণ হলো, বাতাসের অক্সিজেনের সঙ্গে দাহ্যপদার্থগুলোর মিলিত হওয়ার গতি ও প্রক্রিয়ার ভিন্নতা। জ্বলার সময় বেশি অক্সিজেন যুক্ত হলে শিখার রং নীল হয়, কম অক্সিজেন মিশলে হলদে রঙের হয়। মোমবাতি জ্বলার প্রক্রিয়াটি বেশ জটিল। প্রথমে তাপে মোম গলে সলতে বেয়ে ওপরে ওঠে। তারপর সেটা বাষ্কপীভুত হয়ে অক্সিজেনের সঙ্গে মিশে জ্বলতে থাকে এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড ও পানির বাষ্কপ তৈরি করে। এই প্রক্রিয়ায় সলতের গোড়ায় জমে থাকা তরল মোম ও রৃপান্তরিত গ্যাসের সবটুকু একই সঙ্গে প্রজ্বলিত করার মতো যথেষ্ট অক্সিজেন চারপাশের বাতাসে পাওয়া যায় না। ফলে তরল মোমের কিছু অংশ তপ্ত হয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কার্বন-কণায় পরিণত হয় এবং এগুলোই আগুনের তাপে হলুদ রং ধারণ করে। এ জন্যই মোমবাতির শিখা দেখতে হলুদ। এই কার্বন-কণাগুলো শিখার শেষ প্রান্তে আসতে আসতে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন পেয়ে যায় এবং শেষ পর্যন্ত জ্বলে নিঃশেষ হয়। কেরোসিনের কুপি, হারিকেনের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার ঘটে। অন্যদিকে গ্যাসের চুলায় এতসব ঝামেলা নেই। কারণ, এখানে সরাসরি গ্যাস বাতাসের অক্সিজেনের সঙ্গে মিশে পুরোটাই জ্বলে নিঃশেষ হওয়ার সুযোগ পায়। ফলে অপ্রজ্বলিত কোনো বস্তুকণা সৃষ্টির সুযোগ থাকে না। তাই গ্যাসের চুলার আগুনের রং নীল।