গত কয়েক বছর থেকে গরমের মৌসুমে বিচিত্র এক সমস্যা শুরু হয়ে গেছে, সেটা হচ্ছে ঠোঁট ফাটার সমস্যা। সাধারণত এমন ঠোঁট ফাটা, চামড়া খসখসে হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা গুলো শীতকালে দেখা যায়। কিন্তু এবার যেনো গরমেও সমস্যাগুলো দেখা যাচ্ছে! এর কারণটা কি?
এর এককথায় উত্তর হচ্ছে গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা বৈশ্বিক উষ্ণায়ন। গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর সাইড ইফেক্ট হিসেবে বর্তমানে দ্রুত আবহাওয়ার বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন হচ্ছে। যার মধ্যে বর্তমানে উল্লেখযোগ্য একটি হচ্ছে এই গরমেও শুষ্ক আবহাওয়া। সাধারণত শীতকালে বাতাসে আদ্রতার পরিমাণ কম থাকে, যার কারণে আমাদের ত্বকের বহি:স্তর তার জমা করা পানি বা ময়শ্চার হারায়। ফলস্বরূপ, খসখসে চামড়া, ঠোঁট ফাটার মতো লক্ষণ দেখা যায়। আর শরীরের চামড়ার তুলনায় ঠোঁট বেশি ফাটে, কারণ এটি মূলত চামড়ার উপরিভাগের খুব পাতলা স্তর। তাই শীতকালে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ কম হলে শরীর থেকে জলীয় অংশ কমে যায় এবং তখন চামড়ার এই স্তরটি দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত অর্থাৎ শুকিয়ে ফেটে যায়।
এবার আসি গরম কালে কেনো এমন হচ্ছে, সাধারনত গরমে বাতাসে জলীয়বাষ্পের মাত্রা তুলনামুলক বেশি থাকে, অর্থাৎ প্রকৃতিতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি আছে এবং এর ঘাটতি পূরণ করার জন্য আমাদের বহি:ত্বক থেকে কোন পানি বা ময়শ্চার নেয়ার প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে এই গরমে জলীয়বাষ্পের মাত্রা বা আপেক্ষিক আদ্রতা ব্যাপক ভাবে কমে গেছে! যার কারণে বাতাস তুলনামূলক শুষ্ক হয়ে যাচ্ছে! ফলাফল আমার আপনার শরীরের পানি দ্রুত বাষ্প হচ্ছে, ঠোঁট শুকিয়ে ফেটে যাচ্ছে, ঘাম হচ্ছে না। বাতাসে জলীয় বাষ্প এর পরিমাণ যদি আগের মতো স্বাভাবিক থাকতো তাহলে তাহলে আগের মতো আমাদের ত্বকের পানি আর টানতে পারতো না। এখনকার মতো শুষ্কতা সাধারণত মরুভূমিতে দেখা যায়! যেমন, ৯ এপ্রিল রাজশাহীতে তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং আদ্রতা ২৯% অর্থাৎ বাতাস ৭১% শুষ্ক! সেই সাথে ঢাকায় আজকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস (৩৭ এভারেজ) আর আদ্রতার হার ৪৪! যেখানে এপ্রিল মাসে গড়ে আদ্রতা থাকার কথা ৬৫% (বিগত বছরের তথ্য অনুযায়ী)। সুতরাং বুঝাই যাচ্ছে কিভাবে দ্রুত আবহাওয়ার পরিবর্তন আমাদের জীবন যাত্রায় প্রভাব ফেলছে। তবে এর কিছু সাময়িক প্রতিকার হিসেবে চিকিৎসকরা এ সকল পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এগুলো হলো:
•প্রচুর পানি পান করা
•ঠোঁটের যত্ন নেয়া
•তীব্র সূর্যালোক ও ধুলোবালি এড়ানো
•সুষম ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া
•প্রয়োজনে ভ্যাসলিন ব্যবহার করা (তবে রাসায়নিক মিশ্রিত কোন কিছু ব্যবহার থেকে সাবধান থাকার কথা বলেন চিকিৎসকরা)।
নাদিয়া ইসলাম
Team Science Bee