বিড়াল কীভাবে ভূমিকম্পের পূর্বাভাস জানতে পারে? - ScienceBee প্রশ্নোত্তর

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রশ্নোত্তর দুনিয়ায় আপনাকে স্বাগতম! প্রশ্ন-উত্তর দিয়ে জিতে নিন পুরস্কার, বিস্তারিত এখানে দেখুন।

0 টি ভোট
130 বার দেখা হয়েছে
"জীববিজ্ঞান" বিভাগে করেছেন (5,340 পয়েন্ট)

1 উত্তর

0 টি ভোট
করেছেন (480 পয়েন্ট)
প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন বর্ণনায় ও লোককথায় ভূমিকম্প বা বড় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগে জীবজন্তুর অদ্ভুত আচরণের কথা জানা যায়। প্রাচীনকালে জাপানি জেলেরা বিশ্বাস করতো, সমুদ্রের মাঝে একসঙ্গে অনেকগুলো উড়–ক্কু মাছ দেখা গেলে কয়েকদিনের মধ্যেই কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দেবে।

গ্রীক সাহিত্যে রয়েছে, তিনশ তিয়াত্তুর খ্রিষ্ট পূর্বাব্দে গ্রিসের হেলিস শহরে ভূমিকম্পের আগে সাপ ও অন্যান্য পোকা-মাকড় গর্ত থেকে বেরিয়ে এসে শহর ত্যাগ করে। বার্লিনের ফ্রি ইউনিভারসিটির ভৌত রসায়নের প্রফেসর হেলমুট ট্রাইবাচ এর মতানুসারে, জীবজন্তু বিশেষ করে মাটির নিচে বসবাসকারী জীবজন্তু বুঝতে পারে যে ভূমিকম্প আসছে। চীন ও জাপানে শত শত বছর ধরে এ রকম পর্যবেক্ষণ ভূমিকম্প সতর্কীকরণ সিস্টেমের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে ব্যবহার করে কৃতকার্য হয়েছে।

১৮৯৬ সালে চীনের তিয়েনসিনে এক বিধ্বংসী ভূমিকম্প হয়। তার মাত্র চারদিন আগে সেখানকার চিড়িয়াখানায় থাকা বড় জীবজন্তুগুলো প্রচন্ড চিৎকার আর দাপাদাপি করতে থাকে। পাখিরাও অস্থির হয়ে ওঠে। ১৯২০ সালে চীনের হাইয়ানে সবচাইতে বড় ভূমিকম্প হয়। যার মাত্রা ছিলো ৮.৫। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, ওই সময় এলাকার কুকুরগুলো অদ্ভূতভাবে জোরে জোরে ডাকাডাকি শুরু করে। এ ভূমিকম্পের পূর্বে নেকড়ে বাঘ দলবেধে দৌঁড়ায় এবং চড়ুইপাখি এলোমেলো ভাবে উড়ে।

বিজ্ঞাপন

১৯৬৬ সালে উত্তর চীনের সিংতাইয়ে ৬.৮ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিলো। ভূমিকম্পের আগে সে এলাকার কুকুরগুলোও দলে দলে ডাকাডাকি ও ছোটাছুটি শুরু করে। ইঁদুর, বিড়াল সব ঘর ছেড়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসে। সবচেয়ে বেশি অস্বাভাবিক আচরণ পরিলক্ষিত হয়েছিলো সাপের ক্ষেত্রে। এরা শীতনিদ্রা থেকে বের হয়। হাইচেং শহরের রাস্তায় হঠাৎ অসংখ্য সাপ ও ইঁদুর দেখে চীনারা বেশ গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নেয়। এ ছাড়াও স্থানীয় মানুষের কাছ থেকে জানা যায়, ঘোড়া, গরু, মহিষ, ছাগল সব লাফালাফি করতে থাকে। এর প্রায় ত্রিশ ঘণ্টা পর সেখানে একটি বড় মাত্রার ভূমিকম্প সংঘঠিত হয়।

আমেরিকাতেও এরকম ঘটনা লক্ষ্য করা যায়। ক্যালিফোর্নিয়ার ভূমিকম্প প্রবণ অঞ্চলে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে প্রাণীদের অনুরূপ আচরণ লক্ষ্য করেন। মাটির মধ্যে গর্ত করে থাকা ইঁদুরও ভূমিকম্পের খবর আগে থেকে টের পায় বলে জানান, যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাঙ্গিলা রাসকিন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও জীববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. রাচেল গ্রান্ট।

তিনি বলেন, ‘অবাক করার মতো ব্যাপার হলো, ভূমিকম্পের আগে ইঁদুর সবার আগে পালিয়ে যায়। ভূমিকম্পের আটদিন আগে থেকে কোনো ইঁদুর দেখতে পাওয়া যায় না। অথচ বনজঙ্গলে তাদের প্রায় সব জায়গাতেই দেখতে পাওয়া যায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভূমিকম্প আঘাত হানার পাঁচ দিন আগেই সেখানকার প্রায় ৯৬ শতাংশ ব্যাঙ তাদের প্রজননক্ষেত্র ছেড়ে অন্যত্র নিরাপদ স্থানে চলে যায়। ভূমিকম্পের পর ব্যাঙগুলো পুনরায় তাদের আবাসস্থলে ফিরে আসে।

২০০৬ সালে সাগরের তলায় ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্ট সুনামির আগে সমুদ্রের গভীর থেকে প্রচুর মাছ ইন্দোনেশিয়া ও ভারতের উপকূলে এসে জেলেদের জালে ধরা পড়ে। উপকূলে কয়েক মিনিট আগে অভাবনীয় দৃশ্য চোখে পড়ে। হরিণ জাতীয় প্রাণীর একটি বড় দল নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য খুব দ্রুত নিকটবর্তী পাহাড়ের চূড়ায় চলে যায়।

শ্রীংলকার দক্ষিণ পূর্ব উপকূলে সমুদ্র থেকে তিন কিলোমিটার ভেতরে অবস্থিত শ্রীলংকার সবচেয়ে বড় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ এলাকা হিসেবে পরিচিত ইয়ালা ন্যাশনাল পার্কে প্রলয়ঙ্কারি সুনামির ঢেউ বন্যার সৃষ্টি করে। কিন্তু সবগুলো হাতি, লেপার্ড, হরিণ এবং অন্যান্য বন্যপ্রাণী বেঁচে যায়। ভূমিকম্পের এপিসেন্টার থেকে প্রায় একশ’ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মালয়েশিয়ার তাইপিং চিড়িয়াখানার প্রাণীরা হঠাৎ করে অস্বাভাবিক আচরণ করতে শুরু করে। হিপোটমাসসহ কিছু জীবজন্তু তাদের আশ্রয়ে ঢুকে যায় এবং বের হতে চায় না।

একইভাবে পোহাই সাগরে ১৯১৮ সালের ১৮ জুলাই সংঘটিত ভূমিকম্পের আগে গাংচিল, হাঙ্গর ও মাছের অস্বাভাবিক আচরণ দেখা গেছে। এছাড়াও পান্ডা, হরিণ, মাছ এবং অন্যান্য জীবজন্তুর অস্বাভাবিক আচরণের ওপর ভিত্তি করে ভূমিকম্পের কয়েক ঘন্টা পূর্বে স্থানীয় জনগণের উদ্দেশ্যে সতর্কতা জারী করা হয়। বিজ্ঞানীদের মতে প্রশ্ন উঠে, আসন্ন ভূমিকম্পের আগাম সতর্কতা হিসেবে এদের কি কোনো প্রকার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় কাজ করেছিলো?

ভূমিকম্পের পূর্বাভাস জানাতে জীবজন্তুর ব্যবহার চীনে নতুন নয়। চীনের রাষ্ট্রীয় পত্রিকা- চায়না ডেইলির প্রতিবেদন মতে, নানচ্যাংয়ের একটি শহরে ভূমিকম্পের পূর্বাভাস জানতে কুকুরকে ব্যবহার করা হয়েছিল বলেই জিনজিয়াংয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্পে মাত্র তিনজন নিহত হয়। অতীতে এসব ভূমিকম্পেই হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটতো। ভূমিকম্পের আগাম সংকেত পেতে বিভিন্ন জীবজন্তু নিয়ে গবেষণা করছেন চীনের গবেষকরা। চেষ্টা চলছে মুরগি, মাছ ও ব্যাঙের মতো প্রাণীর মাধ্যমে ভূকম্পনের সংকেত পাওয়ার।

চীনা বিজ্ঞানীরা জীবজন্তুর অস্বাভাবিক আচরণ পদ্ধতিগতভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেছে। যদি মুরগি গাছের ওপর উঠে ওড়াউড়ি করে, জলাশয়ের মাছ লাফালাফি করে এবং ব্যাঙ দলবেঁধে ঘুরতে থাকে। তাহলে বুঝে নিতে হবে যে শিগগিরই ভূমিকম্প ঘটতে যাচ্ছে। এসব জীবজন্তুর অস্বাভাবিক আচরণ থেকে ভূমিকম্পের পূর্বাভাস জানা যাবে বলে গবেষকরা দাবি করেন।

জীবজন্তুর আচরণ দিয়ে কি সত্যিই ভূমিকম্প বা অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস পাওয়া সম্ভব? নাকি এটি শুধু একটা ধারণা মাত্র? এ ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা জানান, ‘ভূমিকম্পের আগে ছোট ছোট কম্পন পশুপাখিরা টের পায়।’ নাসার ভূপদার্থবিদ ফ্রেডম্যান ফ্রেউন্ড জানান, ‘ভূমিকম্পের সময় ভূগর্ভস্থ পাথরগুলোর সংঘর্ষের কারণে মাটি বা জলাশয়ে কিছু রাসায়নিক পরিবর্তন হয়। মাটির নিচে ধনাত্মক আয়নের সৃষ্টি হয়। আয়নগুলো উঠে আসে ভূপৃষ্ঠে। আয়নগুলো ভূপৃষ্ঠের বাতাস ও পানির সঙ্গে বিক্রিয়া করে সেখানকার স্বাভাবিক প্রাকৃতিক ভারসাম্যও নষ্ট করে।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই ধনাত্মক আয়নের সংস্পর্শে মানুষের মাথাব্যথা ও বমি বমি ভাব হয়। বন্য জীবজন্তু এই রাসায়নিক পরিবর্তনগুলো টের পায় এবং এর সংস্পর্শ এড়াতে চায়। সেজন্য তারা চলে যায় অন্য কোনো স্থানে। এমনকি অনেক গভীর পানির মাছকেও ভূমিকম্পের আগে পানি থেকে উঠে আসতে দেখা যায়।

ওয়াং জিয়াত্তকিং নামক এক চীনা গবেষকের মতে- ভূ নিম্নস্থ পানির প্রবাহ, পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র, তাপমাত্রা ও শব্দ তরঙ্গকে ভূমিকম্প প্রভাবিত করে। যেহেতু মানুষের তুলনায় জীবজন্তু বেশি সংবেদনশীল, তাই তারা আলট্রাসাউন্ড প্রক্রিয়ায় মানুষের আগে এই পরিবর্তনগুলো বুঝতে পারে। বড় আকারে ভূমিকম্পের পূর্বে যে ইলেক্ট্রো মেকানিক্যাল অথবা ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক পরিবর্তন হয়। তা জীবজন্তু বুঝতে পারে এবং সেভাবে আচরণ করে।

উদাহরণ স্বরূপ, ক্যাটফিসের সম্পূর্ণ ত্বকে চমৎকার সেনসরি অঙ্গ রয়েছে। যা সাধারণত শিকার ধরার জন্য ব্যবহৃত হয়। ভূমিকম্পের কারণে পানির সামান্য ইলেক্ট্রোকেমিক্যাল পরিবর্তনও এই স্নায়ুগুলো বুঝতে পারে। একইভাবে, কবুতরের পায়ের টিবিয়া ও ফিবুলার মধ্যে অতিরিক্ত সংবেদনশীল স্নায়ু রয়েছে। তাই আসন্ন ভূমিকম্পের সংকেত পৃথক করার ব্যবস্থা ও সংবেদনশীলতা জীবজন্তুর রয়েছে।

আগামীতে ভূমিকম্পের পূর্বাভাসে জীবজন্তুর আচরণ পর্যালোচনা ও ভূতাত্তি¡ক উপাদানগুলো পরিমাপের জন্য জীববিজ্ঞানী ও ভূতাত্ত্বিকরা একসঙ্গে কাজ করবেন। ভূমিকম্পের সময় জীবজন্তু কেমন আচরণ করে তা নিয়ে আরও ব্যাপক গবেষণা হওয়া প্রয়োজন বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন।

সম্পর্কিত প্রশ্নগুচ্ছ

+7 টি ভোট
1 উত্তর 259 বার দেখা হয়েছে
+3 টি ভোট
1 উত্তর 331 বার দেখা হয়েছে
0 টি ভোট
1 উত্তর 62 বার দেখা হয়েছে
+2 টি ভোট
2 টি উত্তর 122 বার দেখা হয়েছে

10,729 টি প্রশ্ন

18,374 টি উত্তর

4,730 টি মন্তব্য

242,681 জন সদস্য

48 জন অনলাইনে রয়েছে
0 জন সদস্য এবং 48 জন গেস্ট অনলাইনে
  1. akramul5556

    110 পয়েন্ট

  2. amir

    110 পয়েন্ট

  3. EpifaniaWhit

    100 পয়েন্ট

  4. DelKilvingto

    100 পয়েন্ট

  5. CelindaArtea

    100 পয়েন্ট

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত বিজ্ঞান প্রশ্নোত্তর সাইট সায়েন্স বী QnA তে আপনাকে স্বাগতম। এখানে যে কেউ প্রশ্ন, উত্তর দিতে পারে। উত্তর গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই একাধিক সোর্স যাচাই করে নিবেন। অনেকগুলো, প্রায় ২০০+ এর উপর অনুত্তরিত প্রশ্ন থাকায় নতুন প্রশ্ন না করার এবং অনুত্তরিত প্রশ্ন গুলোর উত্তর দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রতিটি উত্তরের জন্য ৪০ পয়েন্ট, যে সবচেয়ে বেশি উত্তর দিবে সে ২০০ পয়েন্ট বোনাস পাবে।


Science-bee-qna

সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ট্যাগসমূহ

মানুষ পানি ঘুম পদার্থ - জীববিজ্ঞান এইচএসসি-উদ্ভিদবিজ্ঞান এইচএসসি-প্রাণীবিজ্ঞান পৃথিবী চোখ রোগ রাসায়নিক শরীর রক্ত আলো মোবাইল ক্ষতি চুল কী #ask চিকিৎসা পদার্থবিজ্ঞান সূর্য প্রযুক্তি স্বাস্থ্য প্রাণী বৈজ্ঞানিক মাথা গণিত মহাকাশ পার্থক্য এইচএসসি-আইসিটি #science বিজ্ঞান #biology খাওয়া গরম শীতকাল কেন #জানতে ডিম চাঁদ বৃষ্টি কারণ কাজ বিদ্যুৎ রাত রং উপকারিতা শক্তি লাল আগুন সাপ মনোবিজ্ঞান গাছ খাবার সাদা আবিষ্কার দুধ উপায় হাত মশা মাছ ঠাণ্ডা মস্তিষ্ক শব্দ ব্যাথা ভয় বাতাস স্বপ্ন তাপমাত্রা গ্রহ রসায়ন উদ্ভিদ কালো কি বিস্তারিত রঙ পা মন পাখি গ্যাস সমস্যা মেয়ে বৈশিষ্ট্য হলুদ বাচ্চা সময় ব্যথা মৃত্যু চার্জ অক্সিজেন ভাইরাস আকাশ গতি দাঁত আম হরমোন বিড়াল কান্না
...