সিলেটের ওসমানী বিমানবন্দরে সিলেট থেকে লন্ডনগামী বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটের ইঞ্জিন বিকল হয়ে যাওয়ায় তা উড্ডয়ন করতে পারেনি। বিমানে পাখির সংঘর্ষ কি আদৌ সম্ভব ? হ্যাঁ সম্ভব ৷
বিমানে পাখির সংঘর্ষ কতটা বিপজ্জনক ?
এর ফলে বিমান বিধ্বস্ত হতে পারে ৷ শুধু পাখি নয় রাতে উড়তে থাকা বাদুড়ও রাত্রিকালিন যাত্রায় থাকা বিমানের সাথে সংঘর্ষ বাঁধাতে পারে ৷ শুধু তাই নয় ৷ রানওয়েতে উড্ডয়নের আগে বিমানকে কিছু দূর যেতে হয় ৷ এ সময় রানওয়েতে আকস্মিকভাবে চলে আসা হরিণ বা কুকুরের সাথেও সংঘর্ষ হতে পারে ৷ এগুলোর মধ্যে ৯৮% সংঘর্ষ পাখির মাধ্যমেই ঘটে ৷
বিমানে পাখির সংঘর্ষ কতটা সাধারণ ঘটনা ?
গত দুই দশকে বিমানে পাখির সংঘর্ষজনিত কারণে ১০৬ জনের মৃত্যু ঘটেছে বলে ব্রিটিশ ও কানাডীয় গবেষকগণ বলেছেন ৷ এই সংখ্যাটা বিমানযাত্রার সংখ্যা বৃদ্ধি; পাখিদের পরিযায়ী যাত্রার পরিবর্তন এবং বড়, দ্রুততর ও অধিক শান্ত টার্বোফ্যান চালিত বিমানের সাথে সম্পর্কিত যার ফলে পাখিরা পালানোর জন্য খুব বেশি সময় পায় না ৷ বিশেষজ্ঞগণ অনুমান করেছেন বিমানে পাখির সংঘর্ষে প্রতি বছর ১২০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের ক্ষতি সাধিত হয় ৷ ১৯৯০ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত শুধু আমেরিকাতেই ১,৯৪,০০০ বিমান-প্রাণীর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে ৷ ১৯৮৮ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ২৬৩ টি যাত্রীবাহী বিমান পাখির আঘাতে ধ্বংস হয়েছে বা পাখির আঘাতের পর মেরামতের অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৷
সাধারণত কোন জাতের পাখি সংঘর্ষের জন্য দায়ী ?
বেশিরভাগ পাখির আঘাত কোন জাতের পাখির দ্বারা হয়েছে তা জানা সম্ভব হয় না ৷ তবে পার্চিং পাখি, চড়ুই, শালিক ও স্টার্লিং ২২% সংঘর্ষের জন্য দায়ী ৷ সামুদ্রিক পাখি যেমন সিগাল ১১% এবং শিকারী পাখি যেমন বাজ, ইগল ও শকুন ৯% সংঘর্ষের জন্য দায়ী ৷
বিমানের আকারের উপর সংঘর্ষের মাত্রা নির্ভরশীল ৷
কোনো ছোট পাখি বিমানে আঘাত করলে যাত্রীগণ জোরালো শব্দ শুনতে পাবেন ৷ যদি ছোট একটা পাখি বিমানের ইঞ্জিনে ধোঁয়া নির্গমনের জায়গা দিয়ে ঢুকে পড়ে তবে সে সাধারণত ইঞ্জিনের কেন্দ্রস্থলের শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের জায়গায় চলে যাবে ৷ তখন যাত্রীগণ পোড়া মুরগির মতো দুর্গন্ধ পাবেন ৷
ছোট বিমান বা প্রোপেলার যুক্ত বিমান পাখির আঘাতের ফলে সৃষ্ট গঠনগত ক্ষতি যেমন সামনের কাচ, নিয়ন্ত্রণ এলাকা বা বিমানের লেজ ইত্যাদির ক্ষতি সামলে নিতে পারে ৷ তবে সামনের কাচ ভেঙে গেলে সেই টুকরা যাত্রীদের আহত করতে পারে ৷ পাখির আঘাতে ইঞ্জিন বিকল হলে এইসব বিমান বিধ্বস্ত হতে পারে ৷
বড় আকারের বিমান পাখির আঘাতের ফলে ইঞ্জিন সম্পূর্ণ বিকল হলেও সামলে নেবে ৷ তাছাড়া প্রচণ্ড গতিতে ধাবমান বিমানের সাথে ছোট একটা পাখির আঘাতে আক্রান্ত স্থান দুমড়ে মুচড়ে যেতে পারে ৷ এটাও জরুরি যে কতগুলো পাখির সাথে সংঘর্ষ ঘটছে ৷ অনেক পাখি ঝাঁক বেঁধে ওড়ে ৷ তাদের সংঘর্ষ আরও বিপজ্জনক ৷
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ এর সমাধান কীভাবে করে ?
১. বিমানবন্দরের আশেপাশে পাখির বাসস্থান কমিয়ে ফেলা হয় ৷ খোলা জায়গায় গুল্ম, বৃক্ষ জাতীয় গাছ কেটে ফেলে সেখানে ফসলী জমি বা গবাদিপশুর চারণক্ষেত্র তৈরি করা হয় ৷
২. পরিযায়ী পাখিদের নির্দিষ্ট পথ থাকে যেটা ধরে তারা যাতায়াত করে ৷ যদি এই পথ বিমানবন্দরের পাশে হয় তবে সমস্যা হতে পারে ৷ বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ এক্ষেত্রে বিমানে পাখি সম্পর্কিত সতর্কবার্তা পাঠায় বা ভয় দেখিয়ে সরিয়ে দেয় ৷
৩. বড় বড় বিমানবন্দরে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দ্রুতগতির শ্যেন পাখি (Peregrine Falcon) ব্যবহার করে সিগাল ও উড়নক্ষম রাজহাঁসদের সরানো হয় ৷
৪. তাছাড়া যাত্রাকালে পাখি শনাক্ত করতে রাডার ব্যবহৃত হয় ৷
উক্ত পদক্ষেপগুলো পাখিদের কথা চিন্তা করে গ্রহণ করা হয় যেন পাখিরা ক্ষতিগ্রস্ত না হয় ৷
@রাশিক আজমাইন | টিম সায়েন্স বী