মোবাইলের আসক্তি থেকে কিভাবে মুক্তি পাব?
এ ব্যাপারে আমি একটু আলাদা পরামর্শ দেব |
আমার মতে মোবাইল থেকে app সরিয়ে দেওয়া বা মোবাইল দূরে রাখা এগুলো খুব কার্যকরী সমাধান নয়; এতে আপনার উস্খুসানি বরং আরো বেড়েই যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে আর ফলস্বরূপ মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটে | অর্থাৎ ঠিক যেটা আপনি চাইছিলেন না সেটাই হতে থাকবে |
আমার মতে এর প্রকৃত সমাধান রয়েছে আমাদের চিন্তাধারায় | মনে করুন, আপনি মূলতঃ সোশ্যাল মিডিয়া ঘাঁটেন আপনার বন্ধুবান্ধব কে কেমন আছে খোঁজ রাখতে | তাঁদের শেয়ার করা ছবি দেখেন, লাইক দেন | অথবা কোনো শেয়ার করা পোস্ট দেখে হেসে গড়াগড়ি যান ও মন্তব্য করেন | এতে আপনার মনে হয় আপনি তাঁদের খবরাখবর রাখছেন |
কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া আসলে বাস্তব নয় | আপনি ছবিতে একরকম দেখছেন তাঁদের, কিন্তু সেগুলো অতীত এবং একমাত্রিক | বর্তমানে কে কেমন আছে, কি করছে কিছুই জানছেন না |
যদি কেউ এরকম থেকে থাকে যে হামেশাই ‘লাইভ আপডেট’ দিতে ব্যস্ত, সে তাতেই এত ব্যস্ত যে সে সোশ্যাল মিডিয়ার ভার্চুয়াল জগতেই বাঁচছে, বাইরের আসল জগতে নয় |
যে বন্ধুর পোস্ট দেখে হেসে কুটিপাটি হয়েছেন, সে আদতে আদৌ ভালো আছে কিনা তাও আপনি জানছেন না | পুরোটাই একটা বিভ্রম |
আরো যেটা দুঃখের ব্যাপার, এই বিভ্রমের কারণেই অনেক মানুষের নিজের জীবন নিয়ে সন্তুষ্টিও কমে যাচ্ছে | ভেবে দেখুন, আপনিও তাঁদের দলে পড়েন কি?
উল্টোদিকে, সোশ্যাল মিডিয়াতে অপরিচিত কারো সাথে কোনো বিষয়ে বাগবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়া এবং সেখান থেকে কাদা ছোড়াছুড়ি অবধি ব্যাপারটা গড়িয়ে যাওয়া বাস্তব জীবনের তুলনায় অনেক বেশি মাত্রায় সহজ |
ভেবে দেখুন, এক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়া প্রতিদিন আপনার মনের শান্তি নষ্ট হওয়ার একটা সম্ভাবনা তৈরী করছে |
আবার ধরা যাক, আপনি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করছেন কারণ আপনি ডেট খুঁজছেন | ভেবে দেখুন, কাউকে সামনাসামনি হাসিমুখে ‘হাই’ বলা আর অনলাইনে কাউকে ‘হাই’ লিখে পাঠানোর মধ্যে কোনটিতে ইতিবাচক সাড়া পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি?
আপনি যদি পুরুষ হন তাহলে সোশ্যাল মিডিয়াতে আপনার প্রতিযোগিতা অনেক বেড়ে যাবে, আর যদি মহিলা হন তাহলে মেসেজ আর রিকোয়েস্টের জঞ্জালের মধ্যে ভালো কাউকে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হবে |
আর যদি মেসেজিংয়ের কথাই ধরি, তাঁর জন্য দু মিনিট পরপর নিজের ফোন চেক করাটা বাতুলতা; কেউ আপনার সঙ্গে কথা বলতে এতটা আগ্রহী নয় |
তবে হ্যাঁ, দু মিনিট অন্তর মেসেজ করে এরকম কেউ থেকে থাকলে এটাও মাথায় রাখুন যে এতে আপনি একটা আসক্তির জন্ম দিচ্ছেন, যা পরে আপনাকে কষ্ট দেবে | কারণ সেই মানুষটিরও একদিন আপনার সাথে এত কথা বলতে আর ভালো লাগবেনা |
এই ধারণাগুলোকে যেদিন আত্মস্থ করে ফেলতে পারবেন, সেদিন থেকেই আপনার মোবাইলের প্রতি আসক্তি উবে যাওয়া শুরু হবে |