আবেগ নিয়ন্ত্রণ করবেন যেভাবে :
_____________________________
পৃথিবীর সর্বত্র টিকে থাকার জন্য প্রতিযোগিতা করতে হয়। এই কম্পিটিশনে যার স্কিল যত বেশি সে তত এগিয়ে থাকে। তাই বর্তমানে সবাই নতুন নতুন স্কিল অর্জনে ব্যাস্ত! কিন্তু এসবের বাইরেও আমাদের কিছু স্কিল খুবই প্রয়োজনীয়। ইমোশন কন্ট্রোল স্কিল তাদের মধ্যে অন্যতম।
মানুষ হিসেবে আমাদের আবেগ থাকবে এটাই স্বাভাবিক। সময়ে অসময়ে ইমোশন হাই এবং ডাউন হবে এটাও স্বাভাবিক। কিন্তু যখন এই ইমোশন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় তখন তা আর স্বাভাবিক থাকে না। তা অস্বাভাবিকভাবে আমাদের জীবনকে প্রভাবিত করে। রিলেশনশিপ থেকে শুরু করে ক্যারিয়ার, সর্বত্রই।
সুতরাং ইমোশন বা আবেগ নিয়ন্ত্রণ জানতে হবে।
চলুন জেনে নেওয়া যাক, আবেগ নিয়ন্ত্রণের যত্ত উপায়!
১. হঠাৎ ভেঙে পড়বেন না।
প্রিয় মানুষটিকে কল বা টেক্সট দিয়ে যাচ্ছেন কিন্তু কোনো রেসপন্স করছে না! আপনি আপসেট হয়ে গেলেন। ভুলভাল কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন!
ভালো হবে কি?
মোটেও না। তারচেয়ে বরং একটু শান্ত হয়ে বসুন। খাতা-কলম নিন। নিম্নোক্ত প্রশ্নগুলো লিখুন। নিজেই উত্তর দিন।
▪ এখন আমার আসলে কেমন ফিল হচ্ছে?
▪ কেন হচ্ছে? ( প্রিয় মানুষ কোনো কারণ ছাড়াই ইগনোর করছে)
▪ এর কিঅন্য কোনো ব্যাখা আছে? ( আসলেই ইগনোর করছে? অন্য কোনো সমস্যাও তো থাকতে পারে।)
▪ আমি এতটা ফিল করছি কেন?
▪ আপসেট না হয়ে অন্যান্য কি উপায়ে ডিল করা যেতে পারে।
আরও প্রয়োজনীয় প্রশ্ন নিজেই করবেন, নিজেই উত্তর দিবেন।
আবেগ অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসবে।
২. যে কোনো আবেগের বাস্তবিক প্রভাব বিবেচনা করুন।
তীব্র আবেগ মানেই খারাপ না। আবেগ তীব্র না হলে জীবনে আনন্দ কিংবা উত্তেজনা থাকত না।
সুতরাং সব আবেগ নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন নাই।
আপনাকে আগে ভাবতে হবে " এই আবেগের পরিণাম কী" তা নিয়ে। অতি আবেগের ঠেলায় এরকম কিছু করা যাবে না যাতে পরে পস্তাতে হয়। অতিরিক্ত মেজাজ গরম, কারও প্রতি তীব্র ভালোবাসা, অতি দুঃখ ইত্যাদি যখন দেখা দিবে তখন মূহুর্তের জন্য নিশ্চুপ হয়ে যান। বুঝার চেষ্টা করুন এর ফল ভবিষ্যতে কি হবে।
আবেগ বেশি থাকলে বিবেক কাজ কম করে। তাই ভালো হয় বিশ্বস্ত কারও কাছে আপনার আবেগ প্রকাশ করা। সে হয়তো আপনাকে কোনো বেটার উপায় খুঁজে দিতে পারবে।
৩. লক্ষ্য থাকবে আবেগ নিয়ন্ত্রণ, চেপে রাখা নয়।
আমাদের এত এত আবেগের পেছনে দ্বায়ী হরমোন। যেহেতু আপনি চাইলে দেহ থেকে হরমোন সরিয়ে নিতে পারবেন না, সুতরাং আবেগ থাকবেই।
আপনি জোর করে আবেগ চেপে রাখলে আপনার যা ক্ষতি হতে পারে :
▪ ডিপ্রেশনে পড়ে যাবেন।
▪ anxiety তে ভুগবেন।
▪ ঠিকঠাক ঘুম হবে না। পর্যাপ্ত না ঘুমালে আপনার অনেক ক্ষতি হতে পারে।
▪ পেশিতে ব্যাথা হতে পারে!
৪. Take a deep breath.
যখনই অতিরিক্ত ইমোশনাল হয়ে পড়বেন তখনই এটা করতে হবে।
কোথাও আরাম করে বসে পড়ুন। তারপর আস্তে আস্তে বড় করে শ্বাস নিন। শ্বাস-প্রশ্বাসের রিদম লক্ষ্য করুন।
মনকে বুঝান আপনি ঠিক আছেন।
এতে আবেগ কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে আসবে।
৫. ডায়েরি লিখুন।
যদিও আমরা অধিকাংশ আমাদের আবেগের পেছনর কারণ বুঝতে পারি। কিন্তু যখন অনেক প্রেসার একত্রে আসে তখন অনেক মেন্টালি স্ট্রং ব্যাক্তিরাও হিমশিম খায় কারণ খুঁজতে।
আপনার যে কোনো সমস্যা বা আবেগ ডায়েরিতে নিজের মতো করে লিখুন। তবে যতটা সম্ভব বিস্তারিত লেখার চেষ্টা করতে হবে।
তারপর ডায়েরির লেখা নিজেই পড়ুন, খুঁজে বের করুন সমস্যা কোথায়। নিজেকে প্রশ্ন করুন।
৬. নিজেকে কিছুটা সময় দিন।
ভালো থাকার সিগমা রুল হচ্ছে নিজেকে ভালোবাসা। আর নিজেকে ভালোবাসার উপায়ই হচ্ছে নিজেকে কিছুটা সময় দেওয়া, স্পেস দেওয়া।
নিজেকে যেভাবে সময় বা স্পেস দিবেন।
▪ কিছুক্ষণ হাটাহাটি করুন। ব্যায়াম হবে।
▪ ফানি ভিডিও দেখুন।
▪ নিজের শখের কাজগুলো করুন।
▪ পোষা প্রাণী থাকলে তাদের সাথেও সময় কাটাতে পারেন।
সোজা কথা, নিজেকে কিছু সময়ের জন্য বিচ্ছিন্ন করে ফেলুন। নিজের মতো থাকুন।
৭. মেডিটেশন করতে পারেন।
মেডিটেশন আপনার এটেশন এবং ফোকাস স্কিল বৃদ্ধি করে। এতে করে আপনার সমস্যার আসল কারণ দ্রুত করতে পারবেন, মনোযোগ দিয়ে বিষয়টা ভাবতে পারবেন। ফলে ইমোশন হবে র্যাশনাল এবং নিয়ন্ত্রিত।
৮. মানসিক চাপ কমান।
প্যারা যখন আসে, দলবেঁধে আসে। এবং এই প্যারার কারণে আমরা সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছুতে পারি না। এলেমেলো চিন্তা করতে পারি। হতাশা বেড়ে গিয়ে, আবেগ হয়ে পড়ে অনিয়ন্ত্রিত।
সুতরাং মানসিক চাপকে অবহেলা করা যাবে না। যখনই কোনো প্রবলেম মানসিক চাপ দিবে, সেটাকে দ্রুত সমাধান করতে হবে।
মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করতে যা করতে পারেন :
▪ পর্যাপ্ত ঘুমানো
▪ ফ্রেন্ডস বা কাছের মানুষদের সাথে আড্ডা দেওয়া।
▪ ব্যায়াম করা।
▪ প্রকৃতির সাথে সময় কাটানো।
▪ শখের কাজ করা।
৯. থেরাপিস্টের সাথে যোগাযোগ করুন।
আপনি একেবারেই আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে এসব সাধারণ টিপসে কাজ নাও হতে পারে। তখন একজন প্রফেশনালের সাহায্য নিবেন।
অবহেলা করা চলবে না। অনেক কিছুই হারাবেন।
রেফারেন্স।
https://www.healthline.com/health/how-to-control-your-emotions
লেখা: ইমামুল হাসান