আগুন নিয়ে ভাবলেই সাধারণত একটা চিন্তা ঘুরে ফিরে অাসে তা হল এটা পদার্থ না শক্তি?
তাই প্রথমে আগুনের একট সংজ্ঞা দেওয়ার চেষ্টা করি। ব্যাখাতে পরে যাব।
#আগুন : কোনো রাসায়নিক সত্ত্বার সাথে অক্সিজেন এর দ্রুত গতির বিক্রিয়া বা দ্রুত গতির দহন বিক্রিয়ায় উৎপন্ন তাপের ফলাফল স্বরূপ আমরা অনেক সময়(সব সময় না) যা দেখি তাই আগুন।
এই সংজ্ঞার কিছু মূলশব্দ আছে,যা ধরে ধরে আমরা ব্যাখা করলে বুঝতে পারবো আগুন আসলে কি?
১ নম্বর শব্দ: (দহন বিক্রিয়ার ফলাফল) -আমরা জানি মহাবিশ্বের সব কিছু কে দুই ভাগে ভাগ করা যায় পদার্থ ও শক্তি।শক্তি আমরা দেখতে পাই না,পদার্থ কে পারি।যেমন আলোক শক্তি কে আমরা দেখতে পাই না কিন্তু আলো কোনো পদার্থের ওপর পড়লে সেটাকে দেখতে পাই। এই দেখতে পাওয়ার ব্যাপারটা আসলে কি বলুন তো?এটা তেমন কিছুই না,শুধু পদার্থের ওপর ফোটন পড়ার পর ইলেকট্রন গুলোর উত্তেজিত অবস্থার লাফালাফি এবং শেষ পর্যন্ত উত্তেজিত ইলেকট্রন এর বিকিরণ যা আমাদের চোখের রেটিনা তে পড়ে দেখার অনুভুতি জাগায়।একই ভাবে দহন বিক্রিয়ার উৎপন্ন তাপে বায়ুর কনা গুলোর ইলেকট্রন সমূহ উত্তেজিত হয়ে লাফালাফি শুরু করে ফলে আমরা বিচিত্র আলোর শিখা দেখতে পাই।যেহেতু দেখতে পাই তাহলে নিশ্চয় আগুন শক্তি নয়,পদার্থঘটিত একপ্রকার ঘটনা।আর পদার্থের উপস্থিতিতেই কোনো বিক্রিয়া ঘটে,তাই আগুনকে এক প্রকার বিক্রিয়া ও বলা যায়।
২ নম্বর শব্দ (বিক্রিয়ায় উৎপন্ন তাপের
ফলাফল): আচ্ছা একটা প্রশ্ন করি।তাপ আগে না আগুন আগে? আপনি বলবেন যেহেতু আগুন জ্বালালেই কোনো কিছু গরম হয়ে যাচ্ছে,সুতরাং আগে আগুন আর পরে তাপ।কিন্তু মজার বিষয় হল প্রকৃত ঘটনা ঠিক আমাদের ধারনার উল্টো। মানে আমাদের ধারনাতেই কিছু ভুল থাকতে পারে ।আমরা জানি দহনে তাপ উৎপন্ন হয় আর এই তাপ কিভাবে বায়ুকনা গুলোকে উত্তেজিত করে এবং ফলশ্রুতিতে এদের বিকিরণ থেকে কিভাবে আমরা আগুন জ্বলতে দেখি
সেটা আগেই বলেছি।তাহলে ব্যাপারটা কি দাঁড়ালো?
আসলে তাপ শক্তি ছাড়া আগুন জ্বলে না,যদি ইলেকট্রন গুলোকেই উত্তেজিত করতে না পারি তাহলে আগুন দেখব কিভাবে? অর্থাৎ আগে তাপ পরে আগুন।অন্য কথায় তাপ ও আগুন এই দুটিই দহন বিক্রিয়ার আলাদা দুটিই উপজাত।
৩ নম্বর শব্দ (অনেক সময় দেখি কিন্তু সবসময় আগুন দেখি না):
অক্সিজেন এর সাথে
কিছুর বিক্রিয়াই দহন।কিন্তু সব দহনেই কি আগুন জ্বলে?
না।কারণ আমরা জানি লোহার ওপর মরিচা পরা ,খাদ্যের জারণ ক্রিয়া এগুলো ও দহন বিক্রিয়া।কিন্তু কখন কি মরিচা পড়তে লোহার ওপর কিংবা খাবার খাওয়ার পর পেটের ভেতর
আগুন জ্বলতে দেখেছেন?
না।তাই বলা যায় সব দহনের ফলেই আগুন উৎপন্ন হয় না।
এখন প্রশ্ন ,কেন হয় না?
এর মুল কারণ হিসাবে বলা যায় কিছু দহন বিক্রিয়া অত্যন্ত ধীর গতির হয়।যেমন লোহার ওপর মরিচা পরতে কয়েক দিন লেগে যায়,তাই এদের দ্বারা উৎপাদিত তাপে বায়ু কনার ইলেক্ট্রনগুলো তাৎক্ষনিক ভাবে উত্তেজিত হতে পারে না এবং আগুন ও জ্বলে না।আর এজন্যই একেবারে শুরুতে আগুনের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে আমি দহন বিক্রিয়ার পূর্বে ‘দ্রুত' বিশেষণটিই ব্যবহার করেছিলাম।
এই ফাঁকে আপনাদের একটা প্রশ্ন করি,আচ্ছা বলুনতো-
খাবার এর দহন ঘটার সময় পেটে আগুন জ্বলে না কেন?
আগেই বলে রাখি এটা কিন্তু ততটা ধীর
প্রক্রিয়া নয়। উত্তর কি হতে পারে চিন্তা করতে থাকুন আমি বরং এতক্ষণ ধরে আগুন নিয়ে যা যা শিখলাম তা কয়েকটা পয়েন্ট আকারে উল্লেখ করে দিই-
(১)আগুন কখনই শক্তি বা পদার্থ নয়,পদার্থ ঘটিত একটি ঘটনা বা বিক্রিয়া বিশেষ।
(২)আগুন মুলত ইলেকট্রন বা পরমাণু সৃষ্ট বিচিত্র বর্ণালি ছাড়া আর কিছুই নয়।
(৩)আগুন বিশেষ কিছু দহন বিক্রিয়ার একটি উপজাত।
(৪)আগে তাপ পরে আগুন,বা তাপের জন্যই আগুন জ্বলে;আগুনের ফলে তাপ উৎপন্ন হয় না।
(৫)সব দহন বিক্রিয়াতেই আগুন তৈরী হয় না।
লেখায়- পঞ্চানন মণ্ডল