Wisilife - বিজ্ঞানের জাদুর দুনিয়া
হোমPhysicsআগুন পদার্থ নাকি শক্তি (What Is Fire)?
আগুন পদার্থ নাকি শক্তি (What Is Fire)?
জুন ২৭, ২০২১
আগুন পদার্থ নাকি শক্তি?
আগুন পদার্থ নাকি শক্তি?
আগুন । Image Source: Internet
পদার্থ কাকে বলে?- সহজ কথায় যার ভর আছে, স্থান দখল করে আবার বল প্রয়োগে বাধার সৃষ্টি করে তাকেই আমরা পদার্থ বলে জানি। একটু সূক্ষ্মভাবে বললে, পদার্থ হল তাই যা অণু-পরমাণু দ্বারা গঠিত। মহাবিশ্বের একটি সামান্য অংশ এই পদার্থ দ্বারা গঠিত। আর এছাড়াও আছে বিভিন্ন রকমের শক্তি।
বিজ্ঞানীদের মতে, মহাবিশ্বের মাত্র ৫ শতাংশ পদার্থ আর শক্তি দ্বারা গঠিত। বাকি অংশ ডার্ক ম্যাটার এবং ডার্ক এনার্জি নিয়ে গঠিত।
আবার এই ৫ শতাংশের মধ্যে যে পরিমাণ পদার্থ আছে তাদের মূলত তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়- কঠিন, তরল ও বায়বীয়। এদের পরিচয় নতুন করে দেবার কিছু নেই। কিন্তু যখন আমরা আগুন নিয়ে ভাবতে যাই, তখন ঠিক কূল করে উঠতে পারি না যে আগুন কোন ধরনের পদার্থ; নাকি এটি আদৌ কোন পদার্থ নয়!
বিভিন্ন পদার্থের সাধারণ সংজ্ঞা থেকে আমরা বেশ জোড় দিয়েই বলতে পারি যে আগুন কঠিন পদার্থের মধ্যে পড়ে না। আবার এটি তরলের মধ্যেও পড়ে না। তাহলে কি আগুন গ্যাসীয় পদার্থ? এটি যদি ভেবে থাকেন তাহলে আপনি উত্তরের খুব কাছাকাছি গেছেন। কিন্তু এটিও সম্পূর্ণ সঠিক উত্তর নয়।
আবার অনেকে পদার্থের চতুর্থ অবস্থা প্লাজমা অবস্থার কথা বলে থাকেন। কিন্তু প্লাজমা হতে গেলে এর তাপমাত্রা হতে হবে প্রায় ১০,০০০ কেলভিন। সাধারণ আগুনের তুলনায় যা অনেক অনেক বেশি। অর্থাৎ আগুনের তাপমাত্রা যদি ১০,০০০ কেলভিনের কাছাকাছি পৌঁছায় তাহলে তাকে আমরা প্লাজমা বলতে পারি, নতুবা নয়। তাহলে দাঁড়াল যে, আগুনকে আপনি সরাসরি প্লাজমাও বলতে পারছেন না।
এবার হয়ত ভাবতে পারেন আগুন হল শক্তি। যেমন অনেকেই আছেন যারা এরকম প্রশ্নে সরাসরি জানিয়ে দেন যে, "আগুন হল শক্তি, এটি কোনভাবেই পদার্থ হতে পারে না।" তবে আসলেই কি তাই?
তাহলে চলুন, দেখে নেওয়া যাক আগুন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা। এরপর নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিতে পারবেন আসলে আগুন কি? পদার্থ নাকি শক্তি? নাকি অন্য কিছু!
আগুন কি?
আগুন হল কোন পদার্থের দহন বিক্রিয়ার ফল। কোন বস্তুর দহনের ফলে যে তাপ ও আলোক শক্তির বিকিরণ ঘটে তাকেই আমরা আগুন হিসেবে দেখি। তাহলে আগুন কি শক্তি? না, আগুন কে শুধু শক্তি বললে ভুল হবে। আবার একে শুধু পদার্থও বলা যাবে না। মূলত এটি হল জ্বালানী পদার্থের সাথে অক্সিজেনের বিক্রিয়ায় উৎপন্ন শক্তির বহিঃপ্রকাশ।
বিষয়টি আর একটু খোলাসা করা যাক।
Also read :দিনের বেলা আকাশে তারা দেখা যায় না কেন?
অক্সিজেনের সাথে যখন অন্যান্য উপকরণের দ্রুত বিক্রিয়া ঘটে তখন প্রচুর তাপ ও আলোক শক্তি উৎপন্ন হয়ে থাকে। এ বিক্রিয়াকে দহন বিক্রিয়া বলে। আগুন বলতে মূলত এই দহন বিক্রিয়াকেই বুঝায়।
কোন জ্বালানীতে আগুন জ্বালাতে হলে তাকে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করতে হবে। এই নির্দিষ্ট তাপমাত্রা কে জ্বালানী পদার্থের Ignition Temperature বলা হয়। কোন জ্বালানী যখনই তার Ignition Temperature এ পৌঁছায়, ঠিক তখনই জ্বালানীতে আগুন ধরে যায়। Ignition Temperature এ পৌঁছানোর পর জ্বালানী থেকে ক্রমাগত গ্যাস নির্গত হয়ে থাকে।
নিচের চিত্রটি লক্ষ করুন-
আগুন জ্বলার প্রক্রিয়া । Image Sorce: sciencelearn
চিত্রটি থেকে সহজেই ধরতে পারবেন আগুন জ্বলার ধাপসমূহ।
জ্বালানী কঠিন, তরল বা গ্যাসীয় যাই হোক না কেন, প্রচণ্ড তাপমাত্রায় এর পৃষ্ঠ থেকে গ্যাস নির্গত হতে থাকে। নির্গত গ্যাস তখন বাতাসের অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া ঘটিয়ে বাষ্প ও কার্বন ডাই অক্সাইড এবং কোন কোন ক্ষেত্রে অন্যান্য পদার্থ উৎপন্ন করে থাকে। সে সাথে উৎপন্ন হয় প্রচুর তাপ যা আলো বিকিরণ করে। আর এই বিকরিত আলোকেই আমরা আগুনের শিখা হিসেবে দেখি। উৎপন্ন এই তাপ ও আলোক শক্তি আসে মূলত জ্বালানীর অভ্যন্তরীণ রাসায়নিক শক্তি থেকে।
অবিচ্ছিন্নভাবে আগুন জ্বালতে চাইলে অবিচ্ছিন্ন জ্বালানির সরবরাহ দেওয়া প্রয়োজন। যেহেতু এটি ক্রমাগত জ্বালানীর বিক্রিয়া ঘটিয়ে শক্তি নির্গত করছে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে কার্বন ডাই অক্সাইড, বাষ্প প্রভৃতি উৎপন্ন করছে, তাই ক্রমাগত জ্বালানীর সরবরাহ না থাকলে বিক্রিয়া থেমে যাবে, যাকে আমরা আগুন নিভে যাওয়া বলে থাকি। এমনকি সূর্য - যা পারমাণবিক ফিউশন বিক্রিয়ায় তাপ এবং আলো তৈরি করে, সেটিও প্রায় চার বিলিয়ন বছরের মধ্যে তার জ্বালানী নিঃশেষ হয়ে ধ্বংস হয়ে যাবে।
দহন বিক্রিয়ার সমীকরনঃ
জ্বালানী + অক্সিজেন + তাপ = কার্বন ডাই অক্সাইড + পানি (জলীয় বাষ্প) + তাপ
আগুনের ক্ষেত্রে যতক্ষণ পর্যন্ত জ্বালানী অবশিষ্ট থাকে, উৎপন্ন তাপ ক্রমাগত দহন বিক্রিয়া ঘটে যেতে সাহায্য করে। ফলে নির-বিচ্ছিন্নভাবে তাপ উৎপন্ন হতে থাকে যা পুনরায় দহন বিক্রিয়া ঘটে যেতে সাহায্য করে। এই কারণে আগুন কে সর্বগ্রাসী বলা হয়ে থাকে। যতক্ষণ পর্যন্ত আশেপাশে জ্বলনযোগ্য পদার্থ থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত আগুন জ্বলতে থাকবে। অবশ্য সে ক্ষেত্রে অক্সিজেনের সরবরাহ থাকাটা বাধ্যতামূলক।
তাহলে সবশেষে বলা যায় যে, আগুন কোন পদার্থ বা শক্তি নয়, এটি একটি রাসায়নিক বিক্রিয়া, যে বিক্রিয়ায় বিভিন্ন উত্তপ্ত গ্যাসের মিশ্রণ থেকে ক্রমাগত তাপ ও আলো উৎপন্ন হয়।