টেনশনে যদি মাথার চুল পরে যায়, তাহলে আনন্দে চুল গজায় না কেন? - ScienceBee প্রশ্নোত্তর

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রশ্নোত্তর দুনিয়ায় আপনাকে স্বাগতম! প্রশ্ন-উত্তর দিয়ে জিতে নিন পুরস্কার, বিস্তারিত এখানে দেখুন।

+2 টি ভোট
6,812 বার দেখা হয়েছে
"তত্ত্ব ও গবেষণা" বিভাগে করেছেন (9,280 পয়েন্ট)

1 উত্তর

0 টি ভোট
করেছেন (9,280 পয়েন্ট)
সম্পাদিত করেছেন

প্রশ্নটা হাস্যকর হলেও এর তাৎপর্য কিন্তু খুবই গভীর। তবে পুরো ব্যাপারটার চুলচেরা বিশ্লেষনের পূর্বে কয়েকটা বিষয়ে সাম্যক জ্ঞান প্রদান জরুরী।

প্রথমেই বলে রাখি মানুষ সহ সকল জীবজন্তুর যেমন একটা জীবনচক্র থাকে ঠিক তেমনি চুলেরও একটা জীবনচক্র আছে। একটা চুল নতুন গজানোর পর ১-৫ বছর  ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। চুলের জীবনচক্রের এই ধাপকে বলা হয় এনাজেন ধাপ। এর পর আসে ক্যাটসজেন ধাপ যেখানে চুলের গাঠনিক পরিবর্তন হয় এবং চুল পড়ার জন্য তৈরি হয়। এই ধাপের সময়কাল ২-৬ সপ্তাহ। এই ক্যাটাজেন ধাপের পরপর শুরু হয় চুল পড়া। আর সর্বশেষ এই ধাপকে বলা হয় টেলোজেন ধাপ। এটাকে আপনি অনেকটা চুলের মৃত্যুও বলতে পারেন।
টেলোজেন ধাপের ফলে আমাদের মাথা থেকে দৈনিক ২০-১০০ টার মতো চুল ঝরে পরে। কিন্তু এখানে চিন্তার কিছু নেই বরং এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। টেলোজেন ধাপ শেষ হল একটা সময় পর সেই হেয়ার ফলিকল থেকে একটা সময় পর আবার চুল গজায় অর্থাৎ আবার শুরুর ন্যায় প্রাথমিকভাবে এনাজেন ধাপ শুরু হয়।।
আমাদের মাথার শতকরা প্রায় ৮৫ ভাগ চুল অ্যানাজেন পর্যায়ে থাকে। প্রায় ১০ থেকে ১৫% চুল টেলোজেন পর্যায়ে থাকে (ক্যাটাজন খুবই স্বল্পকালীন সাধারণত ২ সপ্তাহ) এবং এরপরই শুরু হয় টেলাজেন পক্রিয়া যা ২ থেকে ৪ মাস পর্যন্ত হয়। টেলোজেন পর্যায়ের পর একটি চুলের গোড়ায় নতুন চুলের আবির্ভাব ঘটে এবং পুরনো চুলটি পড়ে যায়। এভাবে নতুন চুলটি অ্যানাজেন পর্যায়ে জন্ম নিয়ে জীবন চক্র শুরু করে।

যদি সে সময় যে কোনো কারণে টেলোজেন পর্যায় দীর্ঘতর হয় তা হলে চুল বেশি পড়বে। আর অনেক সময়েই এটা দেখা যায় যে, আমাদের মাথা থেকে স্বাভাবিকভাবে যেই ২০-১০০ টার মতো চুল পরার কথা ছিলো সেটার পরিমান আরো বেশি এবং যেই চুলগুলো ঝরে পরছে সেগুলো আর নতুন করে গজাচ্ছেনা। আর দৈনিক যে হারে চুল পড়া স্বাভাবিক, তার চেয়ে বেশি চুল পড়ে গেলে এবং একই অনুপাতে নতুন চুল না গজালে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, তাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় অ্যালোপেশিয়া বলা হয়।

কেন অ্যালোপেশিয়া হয়??
অ্যালোপেশিয়া বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে এবং এদের কারণও ভিন্ন ভিন্ন। তবে স্বাভাবিকভাবে যেসকল কারণে চুলপড়া বা অ্যালোপেশিয়ার সমস্যা দেখা দেয় সেগুলোকে আমরা কয়েকটি ফ্যাক্টরে ভাগ করতে পারি। যেমনঃ

অ্যালোপেশিয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে জেনেটিক্যাল ত্রুটি। যেমন আপনার পরিবারে কারোর চুল পড়ার ইতিহাস থাকলে আপনারও অ্যান্ড্রোজেনেটিক অ্যালোপেশিয়া হওয়ার সম্ভাবনা হতে পারে।অ্যান্ড্রোজেন বা অ্যান্ড্রোজেনিক হরমোন হল সে সকল প্রাকৃতিক স্টেরয়েড হরমোন, যেগুলো মেরুদন্ডী প্রাণীদের মধ্যে পুরুষদের এন্ড্রোজেন রিসেপ্টর বন্ধিত করতে কাজ করে| আর টেস্টোস্টেরন হচ্ছে এমনই একটি এন্ড্রোজেনিক হরমোন যা আমাদের চুলের বৃদ্ধির সাথে সম্পর্কিত। কিন্তু একটা বয়সের পর আমাদের দেহে থাকা কতিপয় এনজাইমের কারণে এই টেস্টোস্টেরন হরমোন
ডাই-হাইড্রোটেস্টোস্টেরন (DHT) তে পরিনত হয়। দেহে এই (DHT) হরমোনের আধিক্যভ টাকের অন্যতম কারণ। বিজ্ঞানীরা ধারনা করেন ডাই-হাইড্রোটেস্টোস্টেরন হরমোন তৈরীকারী এনজাইমগুলো দেহে কি পরিমান থাক সেটা বংশগতভাবেই নিয়ন্ত্রিত।
তবে আমাদের মাথার ত্বকে থাকা এন্ড্রোজেন রিসেপ্টর নামের একধরনের প্রোটিন টাকের ক্ষেত্রে অনেকাংশেই নির্ভর করে। এই প্রোটিনের পরিমান নিয়ন্ত্রন করে AR (DHTR, NR3C4) জিন। এখন মাথার ত্বকে এন্ড্রোজেন রিসেপ্টরের পরিমান যত বেশি হবে চুলও তত দ্রুত পড়বে।এখন এই এন্ড্রোজেন রিসেপ্টর এবং একসাথে DHT মিলেই টাক পরাকে ত্বরান্বিত করে।
সুতরাং উপরোক্ত  আলোচনার মাধ্যমে বুঝা গেলো যে টাক হওয়ার জন্য দায়ী জিনগুলো যদি বংশপরম্পরায় আপনার মধ্যে প্রকট হয় তাহলেই আপনার বংশগত টাক দেখা দিবে। ধরুন আপনার দাদা AR জিনের বাহক সেই জিন আপনার বাবার মধ্যে প্রচ্ছন্ন থেকে তার পরবর্তী প্রজন্ম মানে আপনার দেহে প্রকট হতে পারে।
এতক্ষণ আলোচনা করা হয়েছে বংশগত অ্যালোপেশিয়া নিয়ে। তবে বংশগত কারণ ছাড়াও আরো অনেক কারণেই অ্যালোপেশিয়া দেখা দিতে পারে। যেমন পর্যাপ্ত ঘুম ও পুষ্টির অভাব, মানসিক চাপ, দূষণ, ক্যান্সারের চিকিৎসা, বিশেষ কোনো রোগের উপসর্গ, ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, হরমোনাল সমস্যার কারণেও  চুলপরা  দেখা দিতে পারে।

অতিরিক্ত চুলপরা কিভাবে ঠেকাবো?
প্রথমেই বলে রাখি যাদের বংশগত অ্যালোপেশিয়া রয়েছে তাদের মাথা খালি হবেই। চিকিৎসা ব্যাতিত এটা আপনি নিজে থামাতে পারবেন না।
তবে যদি পরিবেশগত কারণে আপনার চুলপরার সমস্যা দেখা দেয় তাহলে সঠিক Lifestyle মেনে চলার মাধ্যমে আপনি চাইলেই চুলপড়া ঠেকাতে পারবেন।  পর্যাপ্ত ঘুম, পুষ্টিকর খাবার, কায়িকশ্রম, মানসিক প্রফুল্লতা তুলপড়া ঠেকাতে সহায়ক। সঠিক লাইফ স্টাইল না মেনে চললে চুলপড়ার সমস্যা দেখা দেওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়।
অর্থাৎ যেসকল পরিবেশগত ফ্যাক্টরের কারণে চুল পরার সমস্যা দেখা দেয় সেগুলো ঠেকাতে পারলেই চুলপরার সমস্যা অনেকটা লাঘব করা সম্ভব।

যাক পরিশেষে আসা যাক আপনার প্রশ্নেঃ "টেনশনের যদি মাথার চুল পরে তাহলে আনন্দে চুল গজায়না কেন??"
এইখানে মূলত আপনার প্রশ্নের মধ্যে একটা ত্রুটি আছে। কেননা আনন্দে থাকলে মানুষের চুল গজায়।
উপরের আলোচনায় কিন্তু আমি বলেছি বংশগত কারণ ব্যাতিত অন্য যেসকল ফ্যাক্টরের কারণে চুল ঝরে পরে সেগুলো বন্ধ করা গেলেই আপনার চুল আবার গজাবে। যেমন আপনার যদি নির্দিষ্টভাবে শুধু খাবারের কারণেই চুল পরে যায় তাহলে পুষ্টিকর খাবার খান চুল এমনেতেই গজাবে।
অতিরিক্ত টেনশনের বেলায়ও ব্যাপারটা তেমনই। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে অতিরিক্ত মানসিক চাপ বা টেনশন হতে পারে আপনার চুল পরার কারণ। মাত্রারিক্ত মানসিক চাপের কারণে একটা বৃহৎ সংখ্যক হেয়ার-ফলিকলকে "Resting Phase" এ পাঠিয়ে দেয়। ফলে নতুন করে আর অ্যানাজেন ধাপের সূচনা হয়না অর্থাৎ নতুন চুল গজায়না।
তবে আপমি মানসিক চাপ থেকে ফিরে আসলে এবং সবসময় প্রফুল্ল থাকলে সেই "Resting Phase" এ থাকা হেয়ার ফলিকলগুলো আবার সক্রিয় হতে শুরু করে।

মনে রাখতে হবে আপনার যদি পুষ্টির কারণে চুল পরে তাহলে কিন্তু প্রফুল্লতা কিংবা হাসিখুশি থাকলে সেখানে যেমন কোনো কাজ হবেনা তেমনি আপনার যদি সত্যিই মানসিক চাপের কারণে চুল পরে সেখানে পুষ্টিকর খাবার কোনো ভূমিকা রাখবেনা। আবার একই সাথে একাধিক কারণেও চুল পরতে পারে। অর্থাৎ চুল পরা ক্ষেত্রে আপনাকে চুল পরার কারণ বুঝে ব্যবস্থা ও চিকিৎসা নিতে হবে।

অ্যালোপেশিয়ার চিকিৎসা কি?
যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান এনএইচএস বলছে, সাধারণত চুল পড়া বা অ্যালোপেশিয়ার চিরস্থায়ী কোন সমাধান নেই। তবে ডাক্তারেরা রোগের প্রকৃত কারণ সনাক্ত করে মিনোক্সিডিল ও ফিনাস্টেরাইডের মতো কিছু ঔষধ সাজেস্ট করে থাকেন যা চুল পরা প্রশমিত করে এবং নতুন চুল গঁজাতে সাহায্য করে। তবে এই ঔষধগুলোর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে এবং ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ব্যাবহার করলে তা উলটা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। আবার চুলপরার ট্রিটমেন্ট হিসেবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে থেরাপি এবং হরমোনাল ট্রিটমেন্ট  প্রদান করা হয়।
অনেক সময় রোগীর অ্যালোপেশিয়া কেন হচ্ছে তার সঠিক কারণ বের করা সম্ভব হয়না সেক্ষেত্রে সঠিক চিকিৎসা দেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠে। তবে বংশগত টাক না হলে, আপনি যদি সঠিক লাইফস্টাইল এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করেন তাহলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অ্যালোপেশিয়ার সমাধান পাওয়া সম্ভব।
অন্যদিকে যাদের বংশত টাক রয়েছে, তারা চিরস্থায়ী সমাধান পেতে হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট করিয়ে থাকেন। তবে অভিজ্ঞ সার্জনের নিখুঁত অপারেশন এবং অপারেশনের পরবর্তীতে রোগী যদি নির্দেষণাগুলো মেইন্টেইন করতে না পারে তাহলে হেয়ার-ট্রান্সপ্লান্টেও শতভাগ সফলতা আসেনা।

সম্পর্কিত প্রশ্নগুচ্ছ

0 টি ভোট
1 উত্তর 363 বার দেখা হয়েছে
0 টি ভোট
1 উত্তর 141 বার দেখা হয়েছে
+15 টি ভোট
2 টি উত্তর 611 বার দেখা হয়েছে
01 জুন 2020 "মনোবিজ্ঞান" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Admin (71,000 পয়েন্ট)

10,720 টি প্রশ্ন

18,361 টি উত্তর

4,729 টি মন্তব্য

239,944 জন সদস্য

47 জন অনলাইনে রয়েছে
0 জন সদস্য এবং 47 জন গেস্ট অনলাইনে
  1. Ayon Ratan Agni

    390 পয়েন্ট

  2. Vuter Baccha

    150 পয়েন্ট

  3. almoyaj_k

    130 পয়েন্ট

  4. Mehedi_Bknowledge

    110 পয়েন্ট

  5. Monojit Das

    110 পয়েন্ট

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত বিজ্ঞান প্রশ্নোত্তর সাইট সায়েন্স বী QnA তে আপনাকে স্বাগতম। এখানে যে কেউ প্রশ্ন, উত্তর দিতে পারে। উত্তর গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই একাধিক সোর্স যাচাই করে নিবেন। অনেকগুলো, প্রায় ২০০+ এর উপর অনুত্তরিত প্রশ্ন থাকায় নতুন প্রশ্ন না করার এবং অনুত্তরিত প্রশ্ন গুলোর উত্তর দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রতিটি উত্তরের জন্য ৪০ পয়েন্ট, যে সবচেয়ে বেশি উত্তর দিবে সে ২০০ পয়েন্ট বোনাস পাবে।


Science-bee-qna

সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ট্যাগসমূহ

মানুষ পানি ঘুম পদার্থ - জীববিজ্ঞান এইচএসসি-উদ্ভিদবিজ্ঞান এইচএসসি-প্রাণীবিজ্ঞান পৃথিবী চোখ রোগ রাসায়নিক শরীর রক্ত আলো মোবাইল ক্ষতি চুল কী #ask চিকিৎসা পদার্থবিজ্ঞান সূর্য প্রযুক্তি প্রাণী স্বাস্থ্য বৈজ্ঞানিক মাথা গণিত মহাকাশ পার্থক্য এইচএসসি-আইসিটি #science বিজ্ঞান #biology খাওয়া শীতকাল গরম কেন #জানতে ডিম চাঁদ বৃষ্টি কারণ কাজ বিদ্যুৎ রাত রং উপকারিতা শক্তি লাল আগুন সাপ মনোবিজ্ঞান গাছ খাবার সাদা আবিষ্কার দুধ উপায় হাত মশা মাছ মস্তিষ্ক শব্দ ঠাণ্ডা ব্যাথা ভয় বাতাস গ্রহ স্বপ্ন রসায়ন তাপমাত্রা উদ্ভিদ কালো কি বিস্তারিত রঙ পা পাখি গ্যাস মন সমস্যা মেয়ে বৈশিষ্ট্য হলুদ বাচ্চা সময় ব্যথা মৃত্যু চার্জ অক্সিজেন ভাইরাস আকাশ গতি দাঁত আম বিড়াল কান্না নাক
...