সৃজনশীলতা হলো আমাদের শরীরের একটা অঙ্গের মতো। বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেহের মাংসপেশিগুলোকে সুগঠিত করতে যেমন পুষ্টিকর খাবার খেতে হয়, নিয়মিত ব্যায়াম করতে হয়, তেমনি সৃজনশীলতা বাড়াতে হলেও কিছু চর্চা প্রয়োজন। প্রত্যেক মানুষই নিজস্ব কিছু সৃজনশীলতা নিয়ে জন্মায়। আপনি যদি আপনার ভেতরের ‘শিল্পী’কে জাগিয়ে রাখতে পারেন, তাকে আরও পরিণত করতে পারেন, নিশ্চয়ই জীবনটা উপভোগ করবেন। আপনার পড়ার বিষয় যা-ই হোক, হোক ভূগোল কিংবা তড়িৎপ্রকৌশল; পেশাজীবনে আপনি যা-ই হোন না কেন, ব্যাংকের কর্মী বা গবেষক—সৃজনশীলতা নিশ্চয়ই আপনাকে ক্যারিয়ারে আরও এগিয়ে রাখবে। কোন চর্চাগুলো মানুষের সৃজনশীলতা বাড়ায়, সে প্রসঙ্গে ১০টি পরামর্শ দিয়েছেন হলিউডের অভিনেতা, গায়ক, নৃত্যশিল্পী, লেখক ও অভিনয় প্রশিক্ষক বার্নার্ড হিলার
১. নাচুন
৮ হাজার বছর ধরে ‘নাচ’ মানুষের অভিজ্ঞতার অংশ। নাচের মধ্য দিয়ে আপনি জীবনটাকে উদ্যাপন করেন। জীবন আপনাকে যে উপহারগুলো দিয়েছে, সেগুলোর সঙ্গে আপনার একটা যোগাযোগ তৈরি হয়। নাচের মাধ্যমেই আপনি আপনার ভেতরে লুকিয়ে থাকা সৃজনশীলতার স্পন্দন টের পাবেন। কেননা যত প্রশ্নের উত্তর আপনি খুঁজছেন, সব লুকিয়ে আছে আপনার শরীরে। মনে রাখবেন, নড়ন-চড়ন ছাড়া কিছুই ঘটে না।
২. গান করুন
মনের ভেতরের আওয়াজটা বেরিয়ে আসতে সাহায্য করে গান। ছোটবেলা থেকে আশপাশের মানুষ আপনার ওপর তাদের মতটা চাপিয়ে দিতে চেষ্টা করবে, আপনার নিজস্ব ভাবনাটা কেড়ে নিতে চাইবে। জীবনটা নির্ভর করে যোগাযোগের ক্ষমতার ওপর। আপনি কীভাবে মানুষের সঙ্গে কথা বলছেন, মিশছেন? সেটাই বলে দেবে, আপনি কেমন জীবনযাপন করছেন। নিজের চাওয়া ও দাবিগুলো স্পষ্টভাবে বলতে হলে আপনার অবশ্যই একটা শক্তিশালী কণ্ঠস্বর থাকা চাই।
৩. লম্বা করে দম নিন
নিশ্বাস আছে মানে আপনি নিঃশেষ হয়ে যাননি। যতটা গভীরভাবে আপনি শ্বাস নেবেন, জীবনটাকেও ততটা গভীরভাবে উপলব্ধি করবেন। প্রতিদিন ১৫ মিনিট সময় নিয়ে আপনার শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ শুনুন। এর যেমন অনেক শারীরিক সুফল আছে, তেমনি এটা আপনার মনকেও প্রশান্তি দেবে। গভীরভাবে নিশ্বাস নিলে আপনি আশপাশটাকে বুঝতে পারবেন, বুঝবেন আপনার সঙ্গে কী ঘটছে, কেন ঘটছে। জীবনে সফল হতে হলে সবার আগে জানতে হয়, কোন বাধা আমাকে থামিয়ে দিচ্ছে।
৪. গান শুনুন
গান আমাদের অনুভূতিগুলোকে ছুঁয়ে দেয়। জীবনের স্পন্দনের সঙ্গে আমরা গানের স্পন্দনের মিল খুঁজে পাই। দৃশ্যমান পৃথিবী থেকে দূরে সরে অদেখা পৃথিবীকে অনুভব করতে সাহায্য করে গান। মনকে স্থির করতেও গান সাহায্য করে।
৫. প্রকৃতির সঙ্গে সময় কাটান
এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সঙ্গে আপনার সংযোগ ঘটায় প্রকৃতি। প্রকৃতির কাছাকাছি গেলেই আপনি বুঝতে পারেন, আপনি কত বিশাল একটা কিছুর অংশ। আপনার চেনা-জানা গণ্ডির বাইরেও পৃথিবীটা অনেক বড়! বাইরের এবং ভেতরের সৌন্দর্য, দুটোই বুঝতে সাহায্য করে প্রকৃতির সংস্পর্শ। জীবনটাকে একটা নতুন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখতে শেখায় প্রাকৃতিক পরিবেশ।
৬. ছবি আঁকুন
যদি আপনি ছবি আঁকেন, এমন সব ‘আইডিয়া’ মাথায় উঁকিঝুঁকি দেবে, যেগুলোর অস্তিত্ব সম্পর্কে আপনার কোনো ধারণাই ছিল না। ছবি আঁকার জন্য যদি সঙ্গে সব সময় একটা নোটবুক রাখেন, নতুন কোনো সৃজনশীল ভাবনা মাথায় এলেই আপনি চট করে সেটা টুকে রাখতে পারবেন।
৭. নিজের ভেতরের শিশুটাকে জাগিয়ে তুলুন
শিশুরা বিশ্বাস করে, সবকিছুই সম্ভব। তারা সব সময় বর্তমানে বসবাস করে। সবকিছু ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখে এবং কল্পনাকে বিশ্বাস করতে ভয় পায় না। জীবনটাকে উপভোগ করার একটা সূত্র হলো, আজীবন ‘শিশু’ থাকা। ছোট বাচ্চারা প্রতিমুহূর্তে কিছু না কিছু আবিষ্কার করে। নিজের ভেতরের শিশুটাকে জাগিয়ে রাখুন। বিশ্বাস করুন—সবকিছুই সম্ভব। তাহলে জীবনটা উপভোগ করতে পারবেন।
৮. আনন্দের উপলক্ষ তৈরি করুন
জীবনে আনন্দ থাকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের সফল না হওয়ার পেছনে অন্যতম বাধা হলো, আমরা জীবনে আনন্দদায়ক মুহূর্ত তৈরি করার পেছনে খুব বেশি সময় দিই না। প্রতিদিন অন্তত তিনটি আনন্দের মুহূর্ত তৈরি করুন। আপনি যখন অখুশি থাকেন, আপনার সৃজনশীলতার পথ বন্ধ হয়ে যায়। সৃজনশীল ভাবনাগুলো আপনার ভেতরেই শেষ হয়ে যায়। আনন্দই আপনার ভেতরের সব সম্ভাবনার দরজা খুলে দেয়।
৯. সহজাত প্রবৃত্তির ওপর আস্থা রাখুন
আপনার সহজাত গুণগুলোই আপনাকে সৃজনশীলতার পথ দেখাবে। নিজের ওপর বিশ্বাস রাখুন। নির্ভয়ে আপনার উদ্ভাবনী ভাবনাকে অনুসরণ করুন। তবেই বেঁচে থাকার উদ্দেশ্য আর অর্থ খুঁজে পাবেন।
১০. হাসুন
শরীরের পরিপাকতন্ত্র সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে হাসি। হাসি আপনাকে আরও শক্তি দেয় এবং চাপ থেকে মুক্ত করে। যারা কঠিন কোনো অসুখে ভুগছে, চিকিৎসকেরা তাদের হাসতে উৎসাহিত করেন। প্রতিদিন অন্তত এক ঘণ্টা হাসা উচিত। হাসিমুখের কিছু সামাজিক উপকারিতাও আছে। আশপাশে তাকালে দেখবেন, রসবোধসম্পন্ন মানুষেরা দ্রুত মানুষের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে। তাঁদের জীবন মানুষকে আকৃষ্ট করে। হাসি ছাড়া আপনি জীবনকে উপভোগ করতে পারবেন না।
সূত্র: হাফিংটনপোস্ট