গাছ কী আমাদের শরীরের মধ্যে বৃদ্ধি লাভ করতে পারে?
প্রশ্নটা অনেক মজার কিন্তু বিশ্বাস করতে গেলেও দুইবার ভাবা লাগে। কারণ ছোটবেলায় আমরা অনেকেই বিশ্বাস করতাম বীজ খেয়ে ফেললে পেটের মধ্যে গাছ জন্ম নিবে। তারপর পেট ফেটে বেড়িয়ে আসবে। আসলেই কি তা সম্ভব? উত্তর হ্যাঁ আবার উত্তর না। কিন্তু কেন?
বীজ খেয়ে ফেললেও আসলে আমাদের শরীরে উদ্ভিদ বৃদ্ধি পাবে না৷ এর কারণ আমাদের শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। স্বরযন্ত্রে এপিগ্লটিস নামক ঢাকনা থাকে, যা খাদ্যগ্রহণের সময় যাতে খাদ্য ল্যারিংক্সে প্রবেশ করতে না পারে, এ জন্য ল্যারিংক্সকে ঢেকে রাখে। ফলে সেটি চলে যায় পাকস্থলিতে৷ পাকস্থলিতে থাকে এসিড এবং এনজাইম। এখন পাকস্থলির পিএইচের মান ১.৫-৩ এর কাছাকাছি। আর বেশির ভাগ বীজের বৃদ্ধি পাবার জন্য পিএইচ দরকার ৪.৫-৮ এর মধ্যে। যা মোটেও এখানে নেই। ফলে এসিডীয় পরিবেশে বীজটি নষ্ট হয়ে যায়। তবে এর ব্যতিক্রমও আছে। যেমনঃ জাম। এরা পাকস্থলিতেও অক্ষত থাকে। কিন্তু এর বৃদ্ধি পাওয়ার মত পরিবেশ এখানেও নেই৷ এবং এই বীজ গুলো আমাদের শরীর থেকে বাইরে বের হয়ে যায়।
তাহলে উপায়? আমি উত্তরে হ্যাঁ বলেছিলাম কেন? আমি কি মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছি? উত্তর হল না। এমন ঘটনা আগেও ঘটেছে৷ রাশিয়ায় আরটিয়ম সিডরকিন নামে এক ব্যক্তি রক্তপাত এবং বুকে প্রচন্ড ব্যাথা নিয়ে চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হন। চিকিৎসকেরা এক্সরে করে ভাবেন যে তার ক্যান্সার হয়েছে এবং এর জন্য দায়ী একটি টিউমার। তারা অস্ত্রোপচার করার সিদ্ধান্ত নেন এবং যা দেখেন তাতে অবাক না হয়ে উপায় নেয়৷ একটি ছোট গাছ তার ফুসফুসের মধ্যে বড় হচ্ছিল। যা তার এই রক্তপাতের মূল কারণ। ধারণা করা হয় একটি বীজ নিঃশ্বাস নেওয়ার সময় তার ফুসফুসে চলে গিয়েছিল যার কারণে তার এই পরিণতি হয়। শুধু তিনি নন আমেরিকার আরেক ব্যক্তির ক্ষেত্রেও এমনটা ঘটেছিল। তার মানে বোঝাই যাচ্ছে একমাত্র উপায় হল শ্বাস নেওয়ার সময় শরীরে প্রবেশ৷ কিন্তু এখনও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন রয়ে যাচ্ছে।
আলো ছাড়া গাছ হবেটা কী ভাবে?
এই প্রশ্নটাই মূলত সবার মনে উঁকি দিয়ে যায়। না আলো ছাড়া গাছ সত্যিই বৃদ্ধি পায়না৷ সালোকসংশ্লেষণ করে খাদ্য উৎপাদন করতে হলে অবশ্যই আলোর প্রয়োজন পরবে৷ শুধু আলো নয়। নিদিষ্ট তাপমাত্রা,পানি এবং আদ্রতাও লাগবে৷ তাহলে আলো ছাড়া গাছগুলো বৃদ্ধি পেয়েছিল কীভাবে? আসলে আমাদের ফুসফুসের ৬০% ই পানি। যার ফলে পরিমিত পরিমাণে পানি খুব সহজেই গাছগুলো লাভ করে। এর পরে যেটা দরকার সেটা হল তাপমাত্রা যা হওয়া লাগে উষ্ণ। আর আমাদের ফুসফুসের তাপমাত্রা প্রায় ৩৭° সেলসিয়াস। আর পুষ্টি উপাদান বীজের মধ্যে আগে থেকেই অল্প পরিমাণে থাকে। ফলে চারা সৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু কিছুটা বৃদ্ধি পাওয়ার পরই এর পুষ্টি শেষ হয়ে যায়। তখন দরকার পরে আলোর। যা আমাদের শরীরে প্রবেশের সুযোগ নেই৷ ফলে এদের বৃদ্ধি খুব কমই হয়। রাশিয়া আর আমেরিকার ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও তাদের ফুসফুসে থাকা চারা আকার ছিল মাত্র ০.৫ সে.মি।
পরিশেষে বলা যায়, ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমাদের শরীরের ভিতরে গাছ জন্মানোর ঘটনা খুবই দুর্লভ৷ তাই নিঃশ্চিন্ত মনে বীজ খান। পেটে গেলেও আপনার ওপর তেমন প্রভাব পরবে না৷ ছোটবেলার কাহিনিটাকে ছোট বেলাতেই রেখে আসুন৷ ভালো থাকবেন। আবার দেখা হবে অন্য কোনো ঘটনার ব্যাখা নিয়ে।