কী হবে যদি আমরা পানি পান করা বন্ধ করে দিই?
প্রোটোপ্লাজমের শতকরা ৯০ ভাগই পানি, তাই পানিকে ‘ফ্লুইড অফ লাইফ’ বলা হয়। উদ্ভিদের জীবনে পানির গুরুত্ব অনেক। পানির অভাবে প্রোটোপ্লাজম সংকুচিত হয়ে কোষের মৃত্যুও ঘটতে পারে! ঠিক তেমনই মানুষের দেহেও পানির ভূমিকা অনস্বীকার্য। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দৈহিক ওজনের শতকরা ৫০-৬৫ ভাগই পানি।
পানির উপকারিতাগুলো নিম্নরূপ:
১। পরিমিত পানি পান ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে। এছাড়াও হজমশক্তি বাড়ায়।
২। পর্যাপ্ত পানি পান রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়; হাড়, পেশি সুস্থ্য রাখে।
৩। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করলে ত্বক সুস্থ্য থাকে, তেলতেলে ভাব দূর হয়, ব্রণ কমে যায়, ত্বক উজ্জ্বল হয় ইত্যাদি।
৪। শরীরে তরলের ভারসাম্য বজায় থাকে, বিপাকীয় কাজে সুবিধা হয় ইত্যাদি।
তবে অনেকেই আছেন যারা নিয়মিত পানি পান করেন না! তবে যদি আপনি যদি পানি পান করা বন্ধ করে দেন, তবে কী হতে পারে? চলুন জেনে নেওয়া যাক।
প্রথম দিন:
২ ঘণ্টার মধ্যে আপনি তৃষ্ণার্ত অনুভব করবেন এবং ৪ ঘণ্টার মধে আপনার ঠোঁট শুকিয়ে যাবে। ৬ ঘণ্টা পার হতেই আপনি ক্লান্ত হয়ে পড়বেন। কাজে এনার্জি কমে যাবে। ৭ ঘণ্টা পার হয়ে গেলে আপনার প্রসাব কমে যাবে এবং ১২ ঘণ্টা পর আপনার প্রসাব গাঢ় রং ধারণ করবে। ১৮ ঘণ্টা পার হলে আপনার মধ্যে Erectile Dysfunction দেখা যেতে পারে। উল্লেখ্য erectile dysfunction এর ফলে শারিরীক মিলনে তীব্র অসুবিধার সৃষ্টি হয়। ২২ ঘণ্টার মধ্যে আপনার হালকা মাথাব্যথা শুরু হবে। ২৩ ঘণ্টার মধ্যে আপনার মস্তিষ্ক সংকুচিত হতে শুরু করতে পারে এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র মাথাব্যথা শুরু হবে।
দ্বিতীয় দিন:
ছোটোখাটো কাজকেও তখন খুব ভারী কাজ মনে হবে এবং শারিরীক শক্তি কমে আসবে। পেশিতে খুব একটা জোর পাবেন না। কোনো কাজেই মনোযোগী হতে পারবেন না। পানি আমাদের চোখে লুব্রিকেন্ট হিসেবে কাজ করে। তাই, পানি পান বন্ধ করলে আপনার চোখ শুকিয়ে আসবে। এছাড়াও আপনার মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাবে। এরপর আপনার প্রসাব এবং ঘাম সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যাবে, শ্বাস নিতে কষ্ট হবে। শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা শুরু হবে, মুখ শুকিয়ে যাবে। ডিহাইড্রেশনের ফলে ক্ষুধার্ত অনুভব করবেন। এছাড়াও ত্বকও শুষ্ক হয়ে যাবে।
তৃতীয় দিন:
পানি পান না করায় কিডনিকে রক্ত পরিশুদ্ধ করার জন্য অতিরিক্ত কাজ করতে হবে। ক্যালোরি বার্নিং রেট কমে যাবে এবং হুট করে আপনার ওজন খানিকটা বেড়ে যেতেও পারে! আপনার পেটে ব্যথা শুরু হতে পারে এবং আপনার মলত্যাগও বন্ধ হয়ে যেতে পারে! এছাড়াও কোষ্ঠকাঠিন্য তো আছেই। আপনার হৃদকম্পন বেড়ে যেতে পারে এবং মাংসপেশিতে তীব্র খিঁচুনি হতে পারে। বমি বমি ভাব বৃদ্ধি পেতে থাকবে এবং শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাবে। আপনি এক পর্যায়ে প্রলাপ বকাও শুরু করতে পারেন! যদিও এটা বৃদ্ধদের মাঝে বেশি দেখা যায়।
চতুর্থ দিন:
আপনার চামড়া খসখসে হয়ে উঠতে শুরু করবে এবং ত্বকের রঙ পরিবর্তন হতে শুরু করবে। এছাড়াও শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে তীব্র ব্যথা অনুভব করবেন। কিডনিতে পাথর দেখা দিতে পারে এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বৃদ্ধি পাবে। এরপর শরীর প্রায় অচল হয়ে পড়বে। পানির অভাবে আপনার রক্ত স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি ঘন হয়ে যেতে পারে যার ফলে আপনার বুকে ব্যথা অনুভূত হবে। আপনার Hypovolemic Shock দেখা দিতে পারে। এই অবস্থায় রক্ত নেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না! এছাড়াও আপনার শ্বাস-প্রশ্বাস অনেক ধীর হয়ে যাবে।
পঞ্চম দিন:
আপনার হৃদপিণ্ডের রক্ত সঞ্চালন কমে যাবে। আমরা জানি যে, পানি রক্ত থেকে বর্জ্য পদার্থ অপসারণে সাহায্য করে, কিন্তু দীর্ঘ কয়েকদিন পানি না পান করায় আপনার রক্ত দূষিত হয়ে পড়বে! অবশেষে আপনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বেন।
সুতরাং, শত ব্যস্ততার মাঝেও পানিকে ভুলে গেলে চলবে না! কথায় আছে ‘পানির অপর নাম জীবন’। তাই নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে, তবেই মিলবে একটি সুস্থ্য জীবন।
- হায়াত মোহাম্মাদ ইমরান আরাফাত | টিম সায়েন্স বী