অবশ্যই আছে! একটি না, দুইটি না, অনেকগুলো উপায়ই আছে। পড়তে বসলেই আমাদের মন এদিক ওদিক উঁকি দিয়ে অন্য দুনিয়ায় মজে যায়। মাঝখান দিয়ে পড়ালেখা চলে যায় গোল্লায়! তাই পড়ার প্রতি ‘মনোযোগ বৃদ্ধিতে’ কি কি করা যায়, তা নিয়েই সাজিয়েছি লেখাটি ( ১ নং পয়েন্টটি অধিক গুরুত্ব দিয়ে পড়ার অনুরোধ রইল)।
১৫। Study Music:
ইউটিউবে Study Music লিখে সার্চ করলেই আপনি সন্ধান পেয়ে যাবেন অসংখ্য মিউজিকের। পড়ালেখায় মনোযোগ বাড়াতে এগুলো বিশেষভাবে তৈরি করা হয়। এখন থেকে তবে পড়ায় মনোযোগ না বসলে যেকোনো একটি মিউজিক চালু করে পড়তে বসুন।
১৪। Think Big, Start Small:
আপনি নিশ্চয়ই অনেকক্ষণ একটানা পড়ালেখা করার চেষ্টা করেন কিন্তু মনোযোগ হারিয়ে যাওয়ায় তা আর সফল হয় না। তাই এখন থেকে ছোট একটি সময় নির্ধারণ করে পড়া শুরু করুন। প্রথম কয়েকদিন ২০ মিনিট পড়ুন ও ১০ মিনিট বিরতি নিন। এরপর আবার ২০ মিনিট পড়ুন ও আবার বিরতি নিন।
ধীরে ধীরে,কয়েকদিন পর ৩০ মিনিট, এরপর ৪০ মিনিট, এরপর ৫০ মিনিট- এভাবে সময়টিকে বাড়িয়ে নিন ও নিজের ‘মস্তিষ্ককে অভ্যস্ত করান’। দেখবেন আপনি ঠিকই একটি সময় পরে একটানা পড়তে পারছেন।
১৩।পর্যাপ্ত ঘুম:
একজন মানুষের দৈনিক ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন। পর্যাপ্ত পরিমাণ না ঘুমালে মস্তিষ্ক ঠিকমত কাজ করে না এবং মনোযোগও কমে যায়। তাই অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম সম্পন্ন করতে হবে (ঘুমটি বাসায় সম্পন্ন করবেন, ক্লাসে না!)
১২। পানি খাচ্ছেন তো?
পড়ার সময় আপনার মস্তিষ্ক কিন্তু অনেক খাটনি করে আর এই খাটনি করতে তার প্রয়োজন হয় প্রচুর পানি! তাই পড়ার ফাঁকে ফাঁকে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি খেয়ে তাকে আর্দ্র রাখুন। নাহলে কিছু সময় পরেই আপনি মনোযোগ হারিয়ে ফেলবেন।
১১। সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে পড়তে বসবেন:
খাতা, বই, নোট, কলম, পেন্সিল, স্কেল, রাবার, শার্পনার, জ্যামিতি বাক্স, স্ট্যাপলার, গ্রাফ পেপার ইত্যাদি সবকিছু আগে থেকে একসাথে নিয়ে পড়তে বসুন। ভুলে রেখে এসেছেন বলে বারবার টেবিল থেকে উঠতে হলে মনোযোগ হারিয়ে যায়।
১০। কঠিন পড়াগুলো আগে পড়ে ফেলুন:
এর কারণ হল, কঠিনগুলো আগে পড়ে ফেললে আপনার মস্তিষ্ক বুঝবে যে পরবর্তীতে যেই পড়াগুলো আসছে, সেগুলো সহজ। ফলে আপনি চিন্তামুক্ত থাকবেন । আর যদি সেই পড়াগুলো পরে পড়ার জন্য রেখে দেন, মস্তিষ্ক অনবরত ভাবতে থাকবে যে ‘সামনে কঠিন পড়া আসছে’ এবং ফলশ্রুতিতে চাপ সৃষ্টি হবে ও আপনি সেই চাপ থেকেই দ্রুত মনোযোগ হারাবেন। তাই আগে আগেই সেরে ফেলুন কঠিন পড়াগুলো!
৯। Peak Concentration Time:
সেই সময়ে পড়তে বসবেন যখন ‘আপনার’ সবচেয়ে বেশি মনোযোগ থাকে। পৃথিবীর প্রতিটি মানুষই বিচিত্র এবং বিচিত্র তাদের মস্তিষ্কও। আপনার যদি বেলা ৩টা হতে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যের সময়ে বেশি ভালো পড়া হয়, তাহলে ঐ সময়েই পড়তে বসবেন। কম সময়ে বেশি পড়ে কে না লাভবান হতে চায়?
৮। পড়ালেখার জন্য যেমন পরিবেশ চাই:
– এমন কোথাও পড়ুন যেখানে Distraction সবচেয়ে কম
– যেখানে মানুষের কথা/হাসির শব্দসহ যাবতীয় সব শব্দ ন্যূনতম অবস্থায় থাকবে
– মোবাইল ফোন অবশ্যই সাইলেন্ট করে পড়তে বসবেন
– টেবিলে বসে পড়ার চেষ্টা করুন, বিছানা কিংবা সোফায় নয়।
৭। আশেপাশের শব্দ হজম না হলে…
পাশের বাসার আন্টি এসে গল্প জুড়ে দিয়েছে আপনার মায়ের সাথে। অন্যদিকে দাদি আর বড় বোন মিলে টিভিতে উচু ভলিউমে স্টার জলসা দেখছেন। মায়েদের হাসির বিকট শব্দ ও নাটকের চরিত্রদের আওয়াজ উপেক্ষা করে কোনভাবেই পড়ায় মন দিতে পারছেন না। চিন্তা নেই! ইউটিউব বা গুগল থেকে ডাউনলোড করে নিন ‘ White Noise’।
White Noise আপনার মস্তিষ্কের মনোযোগকে ‘একটি জায়গায়’ নিয়ে আসতে সাহায্য করে। অতএব কানে হেডফোন গুঁজে নিয়ে White Noise চালু করুন এবং পুনরায় ফোকাস করুন নিজের পড়ায়!
৬। নিজেকে নিজেই পুরস্কার দিন:
নিজেকে বলুনঃ “আমি আগামী ৩০ মিনিটের মধ্যে প্রথম অধ্যায়ের ৩ পাতা পড়ে শেষ করব এবং তা সফলভাবে করতে পারলে আমার প্রিয় গান ‘ও বন্ধু লাল গোলাপি’ শুনবো কিংবা ফ্রিজে রাখা চকলেটটি খাবো কিংবা বন্ধুকে কল করে ৫ মিনিট গল্প করব”। এতে করে আপনি নিজেকে অনুপ্রাণিত রাখতে পারবেন এবং ভালো ফল নিশ্চয়ই পাবেন।
৫। Worry Time to Study Time:
সময় কম কিন্তু সিলেবাস অনেক বেশি এবং আপনিও কিছুই পড়েন নি এখনো। এমন সময়গুলোতে ‘কিছু পারি না! কিছু পারব না! কীভাবে পড়ব এতো কিছু’ ইত্যাদি বলে হা- হুতাশ করতে করতেই কিন্তু আপনি সময় নষ্ট করে ফেলেন।
তাই আপনার Worry Time কে তখন Study Time-এ পরিণত করতে হবে। সময় তো এমনিতেই কম! প্রতিটি মিনিটেরই অনেক মূল্য। তাই সময়টা ‘দুশ্চিন্তা’য় বিনিয়োগ না করে ‘পড়ায়’ বিনিয়োগ করুন।
৪। মেডিটেশন:
মেডিটেশন আপনার মনোযোগ বৃদ্ধিতে ব্যাপক সহায়তা করবে। তবে যদি আপনার সময় কম থাকে, আপনি নিম্নোক্ত উপায়গুলো অবলম্বন করতে পারেন।
– ঘুম থেকে উঠে ৫ মিনিট যেকোনো ‘একটি আওয়াজের প্রতি’ মনোনিবেশ করুন। তা হতে পারে সকাল বেলার পাখির ডাকের শব্দ, ফ্যানের শব্দ, এমনকি বাইরের গাড়ির হর্নের শব্দ (যেকোনো একটির প্রতি মনোনিবেশ করুন)
– বিরতিতে গেলেই চোখ বন্ধ করে কয়েকটি গভীর নিঃশ্বাস নিন। ফলে মস্তিষ্কে অক্সিজেন প্রবাহ বৃদ্ধি হবে এবং আপনি সতেজ অনুভব করবেন।
৩। Forest : যাদুকরী একটি অ্যাপ!
এই অ্যাপটি অ্যান্ড্রয়েড ও আইফোন– দুটির জন্যই পাবেন। এখানে আপনি একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করে দিবেন। ধরুন ৩০ মিনিট নির্ধারণ করলেন। সেই ৩০ মিনিটে স্ক্রিনে দেখবেন যে একটি বীজ থেকে চারা এবং চারা থেকে গাছ তৈরি হচ্ছে। তবে শর্ত হল, ঐ ৩০ মিনিটে আপনি ফোনে হাত দিতে পারবেন না। ফোনে হাত দিলেই গাছটি নষ্ট হয়ে যাবে। অতএব, নিজেকে ফোন হতে দূরে রাখতে এবার ফোনটাই ব্যবহার করুন ভিন্নভাবে!
২। ‘WHY SHEET’ তৈরি করুন:
পড়তে বসলে মন যখন এদিক-ওদিক চলে যায়, মনকে তখন বশ মানাবে এই WHY SHEET।
এই মুহূর্তে পড়লে আপনার কি কি ফায়দা হবে তা চিন্তা করুন। আপনার মানসিক কি সুবিধা হবে, আর্থিক কি সুবিধা পেতে পারেন- এভাবে চিন্তা করুন। যেমনঃ ঢাবিতে চান্স পেতে হবে, স্কলারশিপ পেতে হবে, বাবা-মা খুশি হবে, সকালে গ্রুপ স্টাডিতে বন্ধুদের বুঝাতে পারব ইত্যাদি হতে পারে উত্তরগুলো। এবারে এগুলো একটি কাগজে লিখে নিয়ে টেবিলের উপর এমন ভাবে বা এমন স্থানে লাগিয়ে রাখুন যেন বই থেকে চোখ তুললেই আপনি তা দেখতে পান।
এটি আপনাকে Instant Motivation দিবে পড়ার জন্য। বিশ্বাস করুন, খুবই কার্যকরী এটি।
১। অবচেতন মন ও চেতন মনের সমন্বয় ( Combination of Subconscious Mind & Conscious Mind):
পুরো লেখার মধ্যে এই পয়েন্টটি আপনাকে শুধু পড়ার টেবিলে নয়, জীবনের প্রতিটি কাজ করার ক্ষেত্রে ফোকাস করতে শিখাবে। দেখুন তবে।
Subconscious Mind-এ:
– আপনি সেই কাজগুলো করেন যেগুলো করতে আপনার ‘আলাদা মনোযোগ’ দিতে হয় না
– কাজগুলো সব স্বাভাবিক নিয়মেই হতে থাকে এবং আপনি বুঝতে পারেন যে কাজটি হচ্ছে কিন্তু আপনার নিজের ‘মনকে বুঝাতে হয় না’ যে আমি কাজটি করছি।
– আবার বলছি, আপনার মনকে ‘আলাদা করে বুঝাতে হয় না’ যে আপনি এই কাজটি করছেন
– উদাহরনঃ কোন টিভি বিজ্ঞাপন দেখার সময় আপনি ডায়লগও শুনতে পান, সেই সাথে ব্যাকগ্রাউন্ডে কিছু মিউজিকও শুনতে পান। এখন বলুন তো, আপনি আলাদা মনোযোগ দিয়ে কোনটি শুনছেন? অবশ্যই ডায়লগগুলো। কিন্তু আপনি তো আবার মিউজিকও শুনছেন! আপনি কি তাহলে মিউজিকের প্রতি ‘আলাদা মনোযোগ’ দিচ্ছেন? না, দিচ্ছেন না।
অর্থাৎ, এই মিউজিক শুনার কাজটিই আপনি করছেন অবচেতন মনে। একটি Subconscious+Conscious Mind এর কম্বিনেশনে কাজ দুটি করছেন।
Conscious Mind-এ:
– আপনি সেই কাজগুলো করেন যেগুলো করতে আপনার ‘আলাদা মনোযোগ’ দিতে হয়
– আপনার নিজের ‘মনকে বুঝাতে হয়’ যে আমি কাজটি করছি।
– উদাহরণঃ আপনি যখন এই ব্লগটি পড়ছেন তখন আপনার মন জানছে যে, “ হ্যাঁ, আমি এই মুহূর্তে একটি ব্লগ পড়ছি ”। অতএব, আপনি কিন্তু এখন‘একটি’ কাজের প্রতি ফোকাস করছেন।
- Subconscious Mind + Conscious Mind Combination –এ আপনি ‘দুইটি’ কাজ একসাথে করতে পারেন এবং দুইটির একটিতেও কোন বাঁধা সৃষ্টি হয় না ও ফোকাসও নষ্ট হয় না।
- Conscious Mind + Conscious Mind Combination-এ আপনি ‘দুইটি’ কাজ একসাথে করলে দুটিতেই ব্যাঘাত ঘটবে এবং ফোকাস নষ্ট হবে। (উদাহরণঃ একসাথে যদি এই ব্লগটিও পড়েন এবং অন্যদিকে একটু একটু পর এরই মাঝে কোন ভিডিও দেখেন, কোনটাই ঠিকমত করতে পারবেন না। কারনঃ দুইটি কাজের জন্যই আপনার Conscious Mind প্রয়োজন হচ্ছে। আপনার ব্রেইন তখন দুই দিকে মনোযোগ দেয়ার চেষ্টা করছে এবং এখানেই আপনি ফোকাস হারিয়ে ফেলছেন।
সিদ্ধান্ত:
– পড়ালেখা করার কাজটি ঘটে Conscious Mind-এ। অতএব, পড়ার সময় এমন কোন কাজ করবেন না, যেটা করতেও Conscious Mind প্রয়োজন হয়, যেটা করতে আপনার ব্রেইনকে আলাদা মনোযোগ দিতে হয়। যেমন ধরুনঃ পড়ছেন এবং পাশাপাশি ফেসবুক ব্যবহার করছেন। এমন করলেই আপনার ব্রেইন দুইদিকে ফোকাস করার চেষ্টা করবে এবং ফলশ্রুতিতে কোনটাতেই ফোকাস হবে না।
– অতএব পড়ার সময় শুধুই পড়ুন।
– কিংবা Subconscious Mind+Conscious Mind কম্বিনেশনে পড়ুন। যেমনঃ স্টাডি মিউজিক শুনুন ও পড়ুন। কিংবা অংক করার সময় গান শুনুন। আপনি এই ক্ষেত্রে Subconscious Mind-এ গান শুনবেন এবং Conscious Mind-এ পড়বেন। ফলে কোন কাজেই ব্যাঘাত ঘটবে না বরং আপনি পড়ায় ফোকাস করতে পারবেন।
– পড়াশোনাটা যদি ল্যাপটপে ও ইন্টারনেটে থাকে, তাহলে একাধিক ট্যাব না খুলে পড়ার চেষ্টা করুন।
©10 minute school