কিছু লাশ কবর দেওয়ার অনেকদিন পরেও পচে যায় না বা অক্ষত অবস্থায় থাকে। বৈজ্ঞানিকভাবে এর মূল কারণটা কী? - ScienceBee প্রশ্নোত্তর

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রশ্নোত্তর দুনিয়ায় আপনাকে স্বাগতম! প্রশ্ন-উত্তর দিয়ে জিতে নিন পুরস্কার, বিস্তারিত এখানে দেখুন।

+26 টি ভোট
24,519 বার দেখা হয়েছে
"বিবিধ" বিভাগে করেছেন (71,300 পয়েন্ট)
সম্পাদিত করেছেন

3 উত্তর

+10 টি ভোট
করেছেন (71,300 পয়েন্ট)
 
সর্বোত্তম উত্তর


"পুরানো কবরে অক্ষত লাশ!" শিরোনামের খবর আমরা প্রায়ই দেখেছি। অনেকসময় ৫০/৬০ বছর আগে মারা যাওয়া মানুষের কবর খুড়লে দেখা যায় লাশ পচেনি। তারপর সেই ঘটনাকে ঘিরে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়। অলৌকিকভাবে এই ঘটনা নানাভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। কিন্তু এসব ঘটনার বৈজ্ঞানিক ব্যাখা কি? চলুন জেনে নেওয়া যাক।science bee

মৃতদেহ পচার কারণঃ-

মৃত্যুর কয়েক মিনিট পরই মৃতদেহের পচন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। হৃদস্পন্দন বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে শারিরীক কার্যাবলী সচল রাখার জন্য পর্যাপ্ত অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয়। অক্সিজেনের অভাবে কোষে রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে বিষাক্ত উপজাত জমা হয় এবং কোষের অম্লত্ব বৃদ্ধি পায়। এনজাইম কোষ ঝিল্লী পরিপাক করতে শুরু করে এবং ধীরে ধীরে কোষের ভাঙন প্রক্রিয়া শুরু হয়। একে Autolysis বা Self Digestion বলে। এভাবে দেহের সব টিস্যু ও অঙ্গ বিকল হতে শুরু করে এবং পচনক্রিয়া ত্বরান্বিত করে। রক্ত অভিকর্ষের টানে ক্যাপিলারি ও ছোট ছোট শিরায় পৌছায়। কৈশিকজালিকায় রক্ত না পৌছানোর ফলে দেহের রং তখন ফ্যাকাশে দেখায়। হৃদস্পন্দন বন্ধ হওয়ার পর এন্ডোরফিন ক্ষরণের ফলে দেহের তাপমাত্রা কমে আসে। একে Algor Mortis বলে।

মানুষের অন্ত্রে থাকে মিথোজীবী ব্যাকটেরিয়া। মৃত্যুর পর এসব ব্যাকটেরিয়া অন্ত্রের বিশাল অংশকে ভক্ষণ করতে শুরু করে এবং অন্ত্রে উপস্থিত অ্যামিনো এসিডকে পচিয়ে দুর্গন্ধের সৃষ্টি করে। এই প্রক্রিয়াকে বলে Putrefying। দুর্গন্ধের প্রভাবে কিছু পরজীবী কীট আকর্ষিত হয়ে পচে যাওয়া টিস্যুতে ডিম পাড়ে এবং ডিম ফেটে লার্ভা বের হওয়ার পর তারা কয়েক সপ্তাহের মাঝেই দেহের প্রায় অর্ধেক অংশ ভক্ষণ করে ফেলে। মৃত্যুর কিছুদিন পরই সব মিথোজীবী ব্যাকটেরিয়া দেহকে পচানোর কাজে লেগে যায়। মৃত্যুর ৫০ দিন পর বিউটারিক ফার্মেন্টেশন এর ফলে ছত্রাক ও প্রোটোজোয়া আকর্ষণ হয় এবং ভক্ষণ কার্য শুরু করে। এভাবে মৃতজীবী ও মিথোজীবী ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক এর প্রভাবে দেহ পচতে থাকে৷ একসময় মানবদেহের কঙ্কাল ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট থাকেনা।

পচন প্রক্রিয়ায় পরিবেশের প্রভাবঃ-

গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রার প্রভাবে মৃতদেহের পচন প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন হয়। তাপ এর ফলে দেহের জৈব উপাদান দ্রুত ভেঙে পড়ে এবং ব্যাকটেরিয়া উৎপাদনও দ্রুত হয়। কিন্তু শীতকালে লাশ পচতে সময় লাগে, ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার নিচে ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিও কমে যায়। আর লাশ সমাহিত করা হলে কয়েক ইঞ্চি মাটির স্তরের জন্য মাছি বা অন্যান্য কীট ডিম পাড়তে পারেনা। লাশের উপর মাটির পুরুত্ব, মাটির ধরণ ও আদ্রতা ইত্যাদি পচন প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে। মৃত মানুষের দেহ যদি শুষ্ক থাকে তবে পচন প্রক্রিয়া ধীরে হবে, দেহ ভিজা ভিজা অবস্থায় থাকলে পচন দ্রুত হবে। অর্থাৎ লাশ পচার জন্য তাপমাত্রা, অক্সিজেনের পর্যাপ্ততা, ব্যাকটেরিয়ার বিস্তার, মৃত্যুর কারণ, আদ্রতা, বৃষ্টি, মাটির অম্লতা, কীটপতঙ্গের উপস্থিতি ইত্যাদির অনেকাংশে দায়ী!

মৃতদেহ অক্ষত থাকার কারণঃ-

▪️মৃতদেহ পচার জন্য বড় ভূমিকা পালন করে অনুজীব ও ব্যাকটেরিয়া। অনেক সময় কাদামাটিতে বা এমন স্থানে কবর দেওয়া হয় যেখানে বাতাস, অক্সিজেন পৌছাতে পারেনা। এর ফলে অনুজীব তার ক্রিয়া চালাতে ব্যর্থ হয়। অতিরিক্ত ঠান্ডা বা গরম ও শুষ্ক পরিবেশে অনুজীবের বিস্তার কমে যায়, এনজাইমের ক্রিয়া ধীরগতিতে হয়। এর ফলে মৃতদেহ সহজে পচেনা। science bee

▪️অনেক সময় মৃতদেহ যে মাটিতে কবর দেওয়া হয় সে মাটির আদ্রতা, ধরণ, আর্সেনিক ও লবণের পরিমাণ পচন প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে। মাটির অতিরিক্ত আর্সেনিক ব্যাকটেরিয়ার বিস্তার রোধ করে এবং মাটিতে লবণের পরিমাণ বেশি থাকলেও মৃতদেহ মমি হয়ে যেতে পারে। মাটিতে লবণ ও আর্সেনিকের উপস্থিতির জন্য কয়েকশত বছর লাশ অক্ষত থাকার নজিরও আছে। Science Bee

▪️ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসরণ করে অনেক সময় মৃতদেহকে গোসল করিয়ে, কাপড় মুড়ে সমাহিত করা হয়। কাপড় দিয়ে লাশ মুড়িয়ে দেওয়ার ফলে ব্যাকটেরিয়া, অনুজীব, পোকামাকড়ের বিস্তার ধীরগতিতে হয়। মৃতদেহের নাকে তুলা দেওয়া থাকলে মৃত ব্যক্তির নাক দিয়ে অক্সিজেন প্রবেশ করতে পারেনা এবং শরীরের ভিতরের অঙ্গগুলোর বিয়োজন দেরিতে হয় এবং পচন রোধ হয়। science bee

অর্থাৎ, মৃতদেহ অনেক বছর অক্ষত থাকার পিছনে নানা বৈজ্ঞানিক কারণ থাকতে পারে। মৃতদেহের কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করলেই লাশ না পচার সঠিক কারণ জানা যায়।

+8 টি ভোট
করেছেন (71,300 পয়েন্ট)
মৃত্যুর পর মৃতদেহ প্রাইমারী ফ্যাসিডিটিসহ অনেকগুলো স্টেজ পার করে, রাইগর মর্টিসের সময় মাংসপেশি সঙ্কুচিত হয়ে লাশ শক্ত হয়ে যায়। এরপরের স্টেজেই লাশ আবার শ্লথ হয়ে পচা শুরু করে। এই দুই স্তরের মাঝে যদি কোন ব্যত্যয় ঘটে, তাহলেই লাশ পচার সময় দীর্ঘায়ন হয়। এমনকি এসময় লাশ চোখ খোলা, উঠে বসা, সামান্য নড়াচড়াও করে। ডোমরা প্রায়ই মরা লাশ উঠে বসার যে কথা বলে তা আসলে স্নায়ুতে আটকে পরা শেষ সিগনালটা মাসলে পৌছানোর কারণে হয়।
এছাড়া কিছু খনিজ বা রাসায়নিক দেহে দেয়া হলে বা আগে থেকে জমা থাকলে লাশ পচতে দেরী হয়। আর দাফনের ক্ষেত্রে মাটিতে উপস্থিত খনিজও এই কাজ করতে পারে।যেমন শরীরে আর্সেনিক উপাদান থাকলে লাশ পচতে সময় দীর্ঘায়ন হয়।তাছাড়া শরীরে বিশেষ কোন উপাদান থাকে যার কারনে ব্যাকটেরিয়া সহজ আক্রমন করে না।প্লিজ কেউ ধর্মীয় ব্যাখ্যা আনবেন না।
+8 টি ভোট
করেছেন (71,300 পয়েন্ট)
লাশ না পচার কারণ :

অনেকসময় খবরের কাগজে শিরোনাম হয় অক্ষত লাশ কবর থেকে পাওয়া গেছে। আর এই ধরনের খবরকে কেন্দ্র করে প্রায় ধর্ম ব্যাবসায়ী, কবিরাজ,ধান্ধাবাজ এরা ফায়দা লোটার চেষ্টা করে, কুসংস্কার ছড়ায়৷ কিন্তু এমন লাশ পাওয়াটা একদম সাদামাটা বিজ্ঞান দিয়েই কিন্তু ব্যাখ্যা করা যায়।

লাশ পচার জন্য পরিবেশ বহুত বড় ভুমিকা পালন করে। যেমন অতিরিক্ত ঠান্ডা বা গরম পরিবেশ লাশ পচায় বাধা হয়ে দাড়ায়। কারণ অতিরিক্ত গরম বা ঠান্ডা লাশ পচাতে দায়ী মথ, পোকা, অনুজীব মেরে ফেলে, অনেক সময় এরা বাইরে বের হতে চায় না। অনুকুল তাপমাত্রা না হলে লাশ সহজে পচে নাহ। তবে অতিরিক্ত ঠান্ডা কেটে গেলে আবারও শরীর স্বাভাবিকভাবে পচতে শুরু করে কিন্তু গরমে একবার শরীর হাইড্রেট হয়ে গেলে তা মমি হয়ে যায়।
কেউ বর্ষাকালে মারা গেলে তার দেহ কত কিভাবে পঁচবে, দেহ ফুলে ফেঁপে উঠবে,  কত গন্ধ হবে এ নিয়ে কথাবার্তা হয়। কিন্তু অনেক সময় বর্ষার পানি বা জলাভূমি বা পানি পূর্ন জায়গায় মৃত দেহ পচার ভিলেন হয়ে ওঠে৷ কারণ অতিরিক্ত পানিতে ওইসব মথ, ম্যাগেট ব্যক্টেরিয়াগুলো জন্মাতে পারে না। পানি মাঝেমধ্যে মৃতদেহ মমি করে ফেলে৷ এজন্য  নদীর কাছে কবর দেওয়া তাজা লাশ পাবার রেকর্ড বেশি।
মৃতদেহ পচাতে ম্যাগট বা  ওইসব অনুজীবগুলোর অক্সিজেনের প্রয়োজন পড়ে। তাই অক্সিজেনের অভাবেও অনেক সময় লাশ পচে নাহহহহ।
লাশের পচার হার মাটির উপরও অনেকটা নির্ভর করে৷ যেমন মাটি লবনাক্ত হলে, বেশি পরিমাণে আর্সেনিক থাকলে মৃতদেহ প্রকৃতিকভাবে সংরক্ষিত হয়ে যায়। মাটিতে পচনে সহায়তাকারী অনুজীব থাকার অনুকূল পরিবেশও দরকার পড়ে। এজন্য কবরস্থানে অক্ষত লাশ পাওয়া যায় নাহহহ।
একজন চ্যাঙড়া বালক আর একজন ভুড়িওয়ালার মৃতদেহর ভিতর কোনটা আগে পঁচবে??? ওই ভুড়িওয়ালা। কারণ যার দেহে যতবেশি অর্গানিক ম্যাটেরিয়াল থাকবে সে তত তাড়াতাড়ি পচবে। সেই হিসেবে মমি হবার চান্স ওই চ্যাংড়া ছেলেটারই বেশি।এজন্য ছোট বাচ্চাদের মমি হবার চান্স বেশি।
অধিকাংশ সংস্কৃতিতেই মৃতদেহ সৎকারের জন্য কাপড় বা কিছু দিয়ে দেহ মুড়ে দেওয়া হয়। এরজন্য পোকামাকড়, ব্যাক্টেরিয়া এগুলো লাশে ঢুকতে পারে না৷ আবার অনেকক্ষেত্রে মৃতদেহকে সাজানো হয় বিভিন্ন ক্রিম দিয়ে৷ এগুলোও পোকামাকড়, ব্যাক্টেরিয়াদের দুরে রাখে। এটাও একটা কারণ দেহ না পচার বা দেরিতে পচার।
মমি বা অক্ষত দেহ সাধারণত মরুভূমি, গ্লেসিয়ার, সমুদ্রে( যদি না কোন প্রাণী খেয়ে ফেলে) এমন জায়গায় বেশি পাওয়া যায়। কিন্তু  তারপরও প্রকৃতিকভাবে একটা দেহ অক্ষত থাকার হার খুব কম।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ!  @রুপক হিমকর
Ref:
1/https://en.m.wikipedia.org/wiki/Decomposition
2/https://www.forensicrestorationsvcs.com/the-impact-of-environment-on-body-decomposition.html

সম্পর্কিত প্রশ্নগুচ্ছ

+14 টি ভোট
4 টি উত্তর 17,252 বার দেখা হয়েছে
0 টি ভোট
1 উত্তর 293 বার দেখা হয়েছে
08 অগাস্ট 2023 "পরিবেশ" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Rownok Jahan (710 পয়েন্ট)
+4 টি ভোট
1 উত্তর 304 বার দেখা হয়েছে

10,844 টি প্রশ্ন

18,545 টি উত্তর

4,746 টি মন্তব্য

847,143 জন সদস্য

12 জন অনলাইনে রয়েছে
1 জন সদস্য এবং 11 জন গেস্ট অনলাইনে
  1. Khairul_Alom_Fardush

    140 পয়েন্ট

  2. ganga-clubb.com

    100 পয়েন্ট

  3. remcuasifini

    100 পয়েন্ট

  4. ganga-club.org

    100 পয়েন্ট

  5. 5679cjcom

    100 পয়েন্ট

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত বিজ্ঞান প্রশ্নোত্তর সাইট সায়েন্স বী QnA তে আপনাকে স্বাগতম। এখানে যে কেউ প্রশ্ন, উত্তর দিতে পারে। উত্তর গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই একাধিক সোর্স যাচাই করে নিবেন। অনেকগুলো, প্রায় ২০০+ এর উপর অনুত্তরিত প্রশ্ন থাকায় নতুন প্রশ্ন না করার এবং অনুত্তরিত প্রশ্ন গুলোর উত্তর দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রতিটি উত্তরের জন্য ৪০ পয়েন্ট, যে সবচেয়ে বেশি উত্তর দিবে সে ২০০ পয়েন্ট বোনাস পাবে।


Science-bee-qna

সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ট্যাগসমূহ

মানুষ পানি ঘুম পদার্থ - জীববিজ্ঞান চোখ পৃথিবী এইচএসসি-উদ্ভিদবিজ্ঞান এইচএসসি-প্রাণীবিজ্ঞান রোগ রাসায়নিক শরীর #ask রক্ত আলো মোবাইল #science ক্ষতি চুল কী চিকিৎসা পদার্থবিজ্ঞান সূর্য প্রযুক্তি স্বাস্থ্য মাথা প্রাণী গণিত মহাকাশ বৈজ্ঞানিক #biology পার্থক্য এইচএসসি-আইসিটি বিজ্ঞান গরম খাওয়া #জানতে শীতকাল ডিম বৃষ্টি চাঁদ কেন কারণ কাজ বিদ্যুৎ রং রাত শক্তি উপকারিতা সাপ লাল আগুন গাছ মনোবিজ্ঞান খাবার সাদা মস্তিষ্ক আবিষ্কার দুধ উপায় হাত শব্দ মাছ মশা ঠাণ্ডা ব্যাথা ভয় বাতাস স্বপ্ন তাপমাত্রা গ্রহ রসায়ন কালো উদ্ভিদ পা মন কি বিস্তারিত রঙ পাখি গ্যাস সমস্যা বাচ্চা মেয়ে বৈশিষ্ট্য হলুদ বাংলাদেশ সময় ব্যথা মৃত্যু চার্জ অক্সিজেন ভাইরাস আকাশ গতি কান্না দাঁত বিড়াল আম
...