যিশুখ্রিষ্টের জন্মদিন ২৫ ডিসেম্বর হলে বছরের প্রথম মাস জানুয়ারী দিয়ে শুরু হয় কেন? - ScienceBee প্রশ্নোত্তর

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রশ্নোত্তর দুনিয়ায় আপনাকে স্বাগতম! প্রশ্ন-উত্তর দিয়ে জিতে নিন পুরস্কার, বিস্তারিত এখানে দেখুন।

+1 টি ভোট
309 বার দেখা হয়েছে
"বিবিধ" বিভাগে করেছেন (9,280 পয়েন্ট)
যীশু খ্রীস্টের জন্মদিন 25 ডিসেম্বর অর্থাৎ বড়দিন।।কিন্তু আমি  যতটুকু জানি যেইদিন যীশু খ্রীস্ট জন্মগ্রহন করেছিলেন সেইদিন থেকে খ্রীস্টাব্দ সাল ধরা হয়।।তাহলে তো 1 জানুয়ারি যীশু খ্রীস্টের জন্মদিন হওয়ার কথা ছিলো।।এই বিষয় সম্পর্কে সঠিক তথ্য  জানতে চাই।

1 উত্তর

0 টি ভোট
করেছেন (9,280 পয়েন্ট)
ইংরেজি বর্ষপঞ্জীর আসল নাম গ্রেগোরিয়ান ক্যালেন্ডার ৷ এর সাথে ইংরেজি বা যীশু খ্রিষ্টের কোনো সম্পর্ক নেই ৷ যীশু খ্রিষ্টের জন্মের বছর থেকে ইংরেজি বছর গণনা করা হয় এমন ধারণা ভুল ৷ তাহলে গ্রেগোরিয়ান ক্যালেন্ডারের ইতিহাস জেনে নেওয়া যাক ৷

শুরু প্রাগৈতিহাসিক রোমান চন্দ্রপঞ্জী (Lunar calendar) দিয়ে ৷ সপ্তম শতাব্দীতে আজকের হিজরি বর্ষপঞ্জীর মতো একটি চন্দ্রপঞ্জীর প্রচলন ছিল রোমান সাম্রাজ্যে, চাঁদ দেখে দিন-তারিখ ঠিক হতো ৷ ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে এই পঞ্জিকা মিলত না কেননা ঋতু পরিবর্তন চাঁদের উপর নয়, সূর্যের চারদিকে পৃথিবীর আবর্তনের উপর নির্ভর করে ৷ তাই এই পঞ্জিকা ত্যাগ করা হয় ৷

রোমান রাজা রোমিউলাস এই চন্দ্রপঞ্জীর সাথে পৃথিবীর আবর্তন সামঞ্জস্য করে নতুন এক ১০ মাসের পঞ্জিকা প্রবর্তন করেন ৷ ১০ মাসের এই পঞ্জিকায় মোট দিন ছিল ৩০৪ টি ৷ শীতের সময়ে কোনো মাস ছিল না ৷  মাসগুলো হলো মার্চ (যুদ্ধ দেবতা 'মার্স' থেকে, ৩১ দিন), এপ্রিল (সৌন্দর্যের দেবী 'অ্যাফ্রোডাইট' থেকে, ৩০ দিন), মে (দেবী 'মায়া' থেকে, ৩১ দিন), জুন (দেবতা 'জুনো' থেকে, ৩০ দিন), কুইন্টিলিস ('পঞ্চম' শব্দের ল্যাটিন, ৩১ দিন), সেক্সটিলিস ('ষষ্ঠ' শব্দের ল্যাটিন, ৩০ দিন), সেপ্টেম্বর ('সপ্তম' শব্দের ল্যাটিন, ৩০ দিন), অক্টোবর ('অষ্টম', ৩১ দিন), নভেম্বর ('নবম', ৩০ দিন), ডিসেম্বর ('দশম', ৩০ দিন) ৷ এরপরেও ঋতুচক্রের সাথে বর্ষপঞ্জী মিলছিল না ৷

৭১৩ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে রোমান রাজা নুমা পম্পিলিয়াস এই বর্ষপঞ্জী সংস্কার করেন ৷ দেবতা 'জানুস' ও 'ফেব্রুস' এর নাম থেকে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি নামক দুই মাস পঞ্জিকায় যোগ করেন ৷ নতুন ১২ মাসের এই বর্ষপঞ্জী 'রোমান রিপাবলিকান ক্যালেন্ডার' নামে পরিচিত ৷ নুমা চাইলিছেন প্রত্যেক মাসের দিন সংখ্যা যেমন বিজোড় হবে তেমনি বছরের মোট দিনও বিজোড় হবে ৷ কিন্তু মাস জোড় সংখ্যক তাই এটা অসম্ভব ৷ আগের ৩০ দিনের মাসগুলো ২৯ দিন করলেন ৷ আটটা ২৯ দিন ও চারটা ৩১ দিনের মাস নিয়ে মোট ৩৫৬ দিন হয় ৷ তখন ২৯ দিনের  ফেব্রুয়ারি থেকে একদিন কমিয়ে ২৮ দিন করলেন ৷ তখন থেকে এখনও পর্যন্ত ফেব্রুয়ারি ২৮ দিনের মাস ৷ বছরে দিন হলো ৩৫৫ টি ৷ তবু ঋতুর সমস্যা গেল না ৷ ঋতুর মেলানোর জন্য তিনি প্রতি দু বছর অন্তর ফেব্রুয়ারির পর ২৭ দিনের একটি সম্পূরক মাস যোগ করলেন ৷ প্রতি চার বছরের চক্রে দ্বিতীয় বছরে ফেব্রুয়ারিতে দিন কমে হবে ২৩ টি এবং ২৭ দিনের সম্পূরক মাসসহ মোট দিন হবে ৩৭৭ টি এবং চতুর্থ বছরে ফেব্রুয়ারি হবে ২৪ দিনের ও ২৭ দিনের সম্পূরক মাসসহ মোট ৩৭৮ দিনে বছর হবে ৷ এটা প্রথম অধিবর্ষ বা leap year ব্যবস্থা ৷

৪৬ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে জুলিয়াস সিজার তৎকালীন রোমান সাম্রাজ্যের অন্তর্গত মিশর ভ্রমণ করে রোমে ফেরেন ৷ ফিরে বর্ষপঞ্জতে গণ্ডগোল দেখতে পেলেন ৷ নির্দিষ্ট ২৭ দিনের সম্পূরক মাসেও যখন ঋতুচক্র মিলছিল না তখন পণ্ডিতদের উপর দায়িত্ব দেওয়া হয় যে বছর শেষে তারা গণনা করে বলবে যে কত দিনের সম্পূরক মাস দিতে হবে ৷ পণ্ডিতগণ ইচ্ছামতো দিন সংখ্যা নির্ধারণ করায় বর্ষপঞ্জী ঋতুচক্র থেকে অনেক পিছিয়ে যায় ৷ জুলিয়াস সিজার বর্ষপঞ্জীতে ৯০ দিন যোগ করে দিলেন, বছর হলো ৪৪৫ দিনের ৷ এজন্য ৪৬ খ্রিষ্টপূর্বাব্দকে বিভ্রান্তির বছর বলে ৷

জুলিয়াস সিজার মিশরের ৩৬৫ দিনের সৌরপঞ্জী দেখে প্রভাবিত হন ৷ তাই ৪৬ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের পর পৃথিবীর আবর্তন কাল ৩৬৫ দিন ৬ ঘণ্টা ধরে নতুন সৌরপঞ্জী প্রবর্তন করলেন ৷ জানুয়ারি, মার্চ, মে, কু়ইন্টিলিস, হেক্সটিলিস, অক্টোবর ও ডিসেম্বর হলো ৩১ দিনের ৷ এপ্রিল, জুন, সেপ্টেম্বর, নভেম্বর হলো ৩০ দিনের ৷ ২৮ দিনের ফেব্রুয়ারি ২৮ দিনই থাকলো ৷ জুলিয়াস সিজার দেখলেন বর্ষপঞ্জীতে ৩৬৫ দিন মিললেও ৬ ঘণ্টার ঘাটতি থাকে যা চার বছর পর গিয়ে বর্ষপঞ্জীকে ৬×৪ বা ২৪ ঘণ্টা বা ১ দিন পিছিয়ে দেবে ৷ তাই চার বছর অন্তর ফেব্রুয়ারিতে ১ দিন যোগ করে প্রথম অধিবর্ষ ব্যবস্থা চালু করলেন ৷ জুলিয়াস সিজার কর্তৃক প্রবর্তিত এই পঞ্জিকা জুলিয়ান পঞ্জিকা নামে পরিচিত ৷ ৪৪ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে জুলিয়াস সিজারের নাম থেকে কুইন্টিলিসের নাম হয় জুলাই এবং ৮ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে তাঁর ছেলে অগাস্টাস সিজারের নাম থেকে সেক্সটিলিসের নাম হয় অগাস্ট (বাংলা আগস্ট) ৷

সব ঠিক মতো চলছিল ৷ কিন্তু ১৫৮২ সালে এসে দেখা গেল জুলিয়ান পঞ্জিকায় ঋতুচক্র ও ধর্মীয় উৎসবের দিনগুলো গত ১৬০০ বছরে ১০ দিন পিছিয়ে গেছে ৷ কারণ পৃথিবীর আবর্তন কাল ৩৬৫ দিন ৬ ঘণ্টা ৯ মিনিট ১০ সেকেন্ড ৷ ৯ মিনিটের ঘাটতি থেকে গেছিল ৷ তাই প্রতি বছরে ৯ মিনিট পেছালে ১৬০০ বছরে ১৪৪০০ মিনিট বা ১০ দিন পিছিয়ে যায় ৷ তৎকালীন ত্রয়োদশ পোপ গ্রেগোরি বর্ষপঞ্জী সংশোধনের কাজে লাগলেন ৷ তিনি দেখলেন এখন বর্ষপঞ্জীকে টেনে ১০ দিন এগিয়ে দিলে ১৬০০ বছর পর আবার ১০ দিন পিছিয়ে যাবে ৷ আবার দেখলেন যে বছরগুলো ১০০ দিয়ে বিভাজ্য কিন্তু ৪০০ দিয়ে বিভাজ্য নয় সেগুলো থেকে অধিবর্ষ বাদ দিয়ে যেগুলো ৪০০ ও ১০০ উভয় সংখ্যা দিয়ে বিভাজ্য সেগুলোকে অধিবর্ষ রাখলে ৯ মিনিটের ঘাটতি পূরণ হয় ৷ তিনি সেটাই রাখলেন ৷ অর্থাৎ ২০০০ সাল অধিবর্ষ ছিল কিন্তু ২১০০ সাল অধিবর্ষ হবে না ৷

এরপর ত্রয়োদশ পোপ গ্রেগোরি ১৫৮২ সালের ৪ অক্টোবর ঘোষণা দিলেন পরের দিন হবে ১৫ অক্টোবর ৷ ১০ দিন পিছিয়ে যাওয়া বর্ষপঞ্জীকে ১০ দিন এগিয়ে দেন ৷ এই নতুন বর্ষপঞ্জকে ত্রয়োদশ পোপ গ্রেগোরির নাম অনুসারে গ্রেগোরিয়ান ক্যালেন্ডার বলে যা আমরা আজ ব্যবহার করি ৷ ১৭৫২ সালে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য জুলিয়ান বর্ষপঞ্জী ত্যাগ করে গ্রেগোরিয়ান বর্ষপঞ্জী অধিগ্রহণ করে ৷ ১৭৫৬ সালে ভারত উপমহাদেশে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সূচনা হলে ভারত উপমহাদেশে এর প্রচলন ঘটে যা আজও বিদ্যমান ৷

 

রাশিক আজমাইন| সায়েন্স বী

সম্পর্কিত প্রশ্নগুচ্ছ

+9 টি ভোট
3 টি উত্তর 273 বার দেখা হয়েছে
25 ডিসেম্বর 2020 "বিবিধ" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন noshin mahee (110,330 পয়েন্ট)
+3 টি ভোট
3 টি উত্তর 1,803 বার দেখা হয়েছে

10,743 টি প্রশ্ন

18,394 টি উত্তর

4,731 টি মন্তব্য

243,871 জন সদস্য

42 জন অনলাইনে রয়েছে
0 জন সদস্য এবং 42 জন গেস্ট অনলাইনে
  1. MIS

    930 পয়েন্ট

  2. shuvosheikh

    220 পয়েন্ট

  3. তানভীর রহমান ইমন

    160 পয়েন্ট

  4. Muhammad_Alif

    120 পয়েন্ট

  5. memo

    120 পয়েন্ট

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত বিজ্ঞান প্রশ্নোত্তর সাইট সায়েন্স বী QnA তে আপনাকে স্বাগতম। এখানে যে কেউ প্রশ্ন, উত্তর দিতে পারে। উত্তর গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই একাধিক সোর্স যাচাই করে নিবেন। অনেকগুলো, প্রায় ২০০+ এর উপর অনুত্তরিত প্রশ্ন থাকায় নতুন প্রশ্ন না করার এবং অনুত্তরিত প্রশ্ন গুলোর উত্তর দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রতিটি উত্তরের জন্য ৪০ পয়েন্ট, যে সবচেয়ে বেশি উত্তর দিবে সে ২০০ পয়েন্ট বোনাস পাবে।


Science-bee-qna

সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ট্যাগসমূহ

মানুষ পানি ঘুম পদার্থ - জীববিজ্ঞান এইচএসসি-উদ্ভিদবিজ্ঞান এইচএসসি-প্রাণীবিজ্ঞান পৃথিবী চোখ রোগ রাসায়নিক শরীর রক্ত আলো #ask মোবাইল ক্ষতি চুল কী চিকিৎসা পদার্থবিজ্ঞান সূর্য প্রযুক্তি #science স্বাস্থ্য প্রাণী বৈজ্ঞানিক মাথা গণিত মহাকাশ পার্থক্য এইচএসসি-আইসিটি #biology বিজ্ঞান খাওয়া গরম শীতকাল #জানতে কেন ডিম চাঁদ বৃষ্টি কারণ কাজ বিদ্যুৎ রাত রং উপকারিতা শক্তি লাল আগুন সাপ মনোবিজ্ঞান গাছ খাবার সাদা আবিষ্কার দুধ উপায় হাত মশা মাছ ঠাণ্ডা মস্তিষ্ক শব্দ ব্যাথা ভয় বাতাস স্বপ্ন তাপমাত্রা গ্রহ রসায়ন উদ্ভিদ কালো পা কি বিস্তারিত রঙ মন পাখি গ্যাস সমস্যা মেয়ে বৈশিষ্ট্য হলুদ বাচ্চা সময় ব্যথা মৃত্যু চার্জ অক্সিজেন ভাইরাস আকাশ গতি দাঁত আম হরমোন বিড়াল কান্না
...