জ্যোতির্বিজ্ঞান (ইংরেজি Astronomy প্রতিশব্দটি গ্রিক: ἀστρονομία শব্দটি থেকে উদ্ভূত) হল প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের একটি শাখা। এই শাখায় গ্রহ, প্রাকৃতিক উপগ্রহ, তারা, ছায়াপথ ও ধূমকেতু ইত্যাদি মহাজাগতিক বস্তু এবং অতিনবতারা বিস্ফোরণ, গামা রশ্মি বিচ্ছুরণ ও মহাজাগতিক অণুতরঙ্গ পটভূমি বিকিরণ প্রভৃতি ঘটনাবলি এবং সেগুলির বিবর্তনের ধারাটিকে গণিত, পদার্থবিজ্ঞান , রসায়ন ও ভূগোল এর মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ ও ব্যাখ্যা করা হয়। সাধারণভাবে বললে, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বাইরে ঘটা সকল ঘটনাই জ্যোতির্বিজ্ঞানের এক্তিয়ারভুক্ত বিষয়। ভৌত বিশ্বতত্ত্ব নামে আরেকটি পৃথক শাখাও জ্যোতির্বিজ্ঞানের সঙ্গেই সম্পর্কিত। এই শাখায় সামগ্রিকভাবে মহাবিশ্ব নিয়ে বৈজ্ঞানিক পর্যালোচনা করা হয়।[১]
অন্যদিকে,
জ্যোতিষশাস্ত্র এমন একটি শাস্ত্র যা নভোমণ্ডলে বিভিন্ন জ্যোতিষ্ক অর্থাৎ গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থান বিবেচনা করে মানুষের ভাগ্যগণনা তথা ভাগ্য নিরূপণ করে। যারা এরূপে ভাগ্য গণনা করে তাদের বলা হয় জ্যোতিষ।
জ্যোতিষ একটি সংস্কৃত শব্দ। এই শব্দের একটি অর্থ হল “জ্যোতির্বিষয়ক” এবং অস্ত্যর্থে এই শব্দের একটি অর্থ হল “জ্যোতিষশাস্ত্রবিৎ” এবং অন্য অর্থ “জ্যোতির্ব্বিৎ” [১]। জ্যোতিষ ৬ টি বেদাঙ্গের অন্যতম। বেদাঙ্গ জ্যোতিষের উপলব্ধ শ্লোকগুলিতে মূলতঃ সূর্য্য-চন্দ্রের আবর্তন ও ঋতুপরিবর্তন সংক্রান্ত বিষয় আলোচিত হয়েছে। বেদের লিপিবদ্ধকরণের সময় যজ্ঞানুষ্ঠানের দিন, ক্ষণ ও মূহুর্তাদি নির্ণয়েও জ্যোতিষের বহুল ব্যবহার ছিল। উল্লেখ্য এই যে সেই সময় জ্যোতির্বিদ্যা ও জ্যোতিষবিদ্যা অভিন্ন ছিল।
বর্তমানে প্রশ্নকর্তার জন্মসময়, তারিখ এবং জন্মস্থানের ভিত্তিতে, জন্মকালে মহাকাশে গ্রহের অবস্থান নিরুপণ করে অথবা প্রশ্নের সময় গ্রহাদির অবস্থান নির্ণয় করে, অথবা হস্তরেখাবিচার, শরীরের চিহ্নবিচার ইত্যাদি বিভিন্ন পদ্ধতির ব্যবহারে প্রশ্নকর্তার ভবিষ্যতের গতিপ্রকৃতি নির্ধারণ করার জ্ঞান ও পদ্ধতিকে জ্যোতিষশাস্ত্র বলা হয়। আবার জ্যোতিষশাস্ত্রের একটি বিভাগ দেশ, রাজ্য, শহর, গ্রাম ইত্যাদির এবং প্রাকৃতিক ঘটনাবলীর যেমন বৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, ভূমিকম্প, ঝড়, ঝঞ্ঝা, মহামারী বা প্লাবণের ভবিষ্যদ্বাণী করতেও ব্যবহৃত হয়।

সূর্য, পৃথিবী, চাঁদ এবং প্লুটো সহ জ্যোতিষের কয়েকটি গ্রহের জন্য জ্যোতিষশাস্ত্র বর্ণরূপ চিত্র
যিনি জ্যোতিষশাস্ত্রের চর্চা করেন, তিনি জ্যোতিষী নামে পরিচিত। আধুনিককালের জ্যোতিষীগণ প্রতীকের মাধ্যমে জ্যোতিষশাস্ত্র অধ্যয়ন করে থাকেন। এছাড়াও এটি এক ধরনের কলাশাস্ত্র বা ভবিষ্যৎকথন হিসেবে পরিচিত।
লক্ষণীয় এই যে জ্যোতিষশাস্ত্রের প্রয়োগসূত্রগুলি কেবল সম্ভাবনা নির্দেশ করে, কিন্তু কোন নিশ্চিত ঘটনার কথা বলে না। তার কারণ এই যে জ্যোতিষীগণ মনে করেন মানুষ সচেতন কর্মের সাহায্যে অথবা ঈশ্বরের আশীর্বাদে অথবা এই দুইয়ের মিশ্রিতফলে ভাগ্য অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ এবং পরিবর্তন করতে পারে। এই নিশ্চয়তার তারতম্যের কারণে অনেক বিজ্ঞানী জ্যোতিষশাস্ত্রকে মান্যতা দেন না। একদিকে যেমন বিখ্যাত বিজ্ঞানী ইয়োহানেস কেপলার একই সাথে জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং জ্যোতিষী ছিলেন, আবার অন্যদিকে বিজ্ঞানীদের অনেকে জ্যোতিষশাস্ত্রকে ভ্রান্ত প্রতিপন্ন করতে চেয়েছেন। যেমন, ১৯৭৫ সালের সেপ্টেম্বরে দ্য হিউম্যানিস্ট পত্রিকায় অনেক বিজ্ঞানী আনুষ্ঠানিকভাবে জ্যোতিষশাস্ত্রের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।[২] এছাড়া বিখ্যাত বিজ্ঞান কাহিনী লেখক কার্ল সেগান তার একটি প্রামাণ্য চিত্রে এ নিয়ে আলোচনা করেছেন।[৩] তৎসত্ত্বেও জ্যোতিষশাস্ত্রের প্রতি বহু মানুষের বিশ্বাস এখনও অটুট আছে।