বিশ্বে যত প্রজাতির মৌমাছি আছে তার মধ্যে চার প্রজাতির মৌমাছি মধু তৈরি করতে পারে। সব মৌচাকেই থাকে তিন ধরনের মৌমাছি। এরা হলো: রাণী (উর্বর মৌমাছি), কর্মী (স্ত্রী বন্ধ্যা মৌমাছি) ও পুরুষ (ড্রোন মৌমাছি)। আমরা জানি, একটি মৌচাকে একজন রাণী মৌমাছি থাকে। রাণী মৌমাছি অন্যান্য মৌমাছিদের তুলনার বড় আকৃতির হয় এবং তার প্রধান কাজ হলো সন্তান জন্ম দেওয়া। রাণী মৌমাছি দৈনিক ১৫০০ থেকে ২৫০০ ডিম পাড়ে।
রাণী মৌমাছির প্রার্থীরা যখন লার্ভা দশায় থাকে তখন তাদেরকে খাওয়ানো হয় The Royal Jelly। এটি প্রোটিন, ফ্যাটি এসিড, ভিটামিন, খনিজ, সুগার, অ্যামাইনো অ্যাসিডের মিশ্রণে তৈরি পুষ্টিকর খাবার। রয়্যাল জেলি নিঃসরণ হয় কর্মী মৌমাছিদের মাথা থেকে। অন্যান্য মৌমাছির লার্ভাদের প্রথম তিন দিন এই খাবার দেওয়া হয়, তারপর তাদের খাবার হিসেবে থাকে মৌরুটি। এই রয়্যাল জেলিতে আছে এক ধরনের রাসায়নিক উপাদান যার জন্য রাণী মৌমাছি নেত্রী স্বভাবের হয়।
রাণী মৌমাছি প্রার্থীর লার্ভাগুলো থেকে যে মৌমাছি সবার আগে পূর্ণাঙ্গ মৌমাছিতে রুপান্তর হয় সে অন্যান্য রাণী প্রার্থীদের হত্যা করে। আর যদি কয়েকটি মৌমাছি একসাথে পূর্ণাঙ্গ হয়ে বেরিয়ে আসে তবে তাদের মধ্যে যুদ্ধে যে জয়ী হয় সেই হয় মৌচাকে একমাত্র রানী। রাণীর মৌমাছির আয়ুষ্কাল হয় ২ থেকে ৩ বছর। রাণী মৌমাছি জীবনের প্রায় পুরোটা সময় কাটায় ড্রোনদের মাধ্যমে ডিম নিষিক্ত করে এবং মৌচাকে ডিম পেড়ে।
রাণী মৌমাছি ফেরোমন নির্গত করে যার জন্য পুরুষ মৌমাছিরা উত্তেজিত হয়ে যায়। তখন রাণী মৌমাছি নিজের পছন্দমত পুরুষের সাথে মিলন করে। পর্যায়ক্রমে ১৮ থেকে ২০ টি পুরুষের সাথে মিলিত হয় রানী মৌমাছি। রাণী মৌমাছির সাথে মিলনের পরপরই মারা যায় পুরুষ মৌমাছি। কারণ মিলনের সময় পুরুষ মৌমাছির এন্ডোফেলাস বা যৌনাঙ্গ ভেঙ্গে যায়। এই মিলনকে বলা হয় The Dramatic Sexual Suicide। রানী মৌমাছি জীবনে কেবল একবারই মিলন হলেও শুক্রাণু জমিয়ে রেখে বাকি জীবন ডিম পাড়ে।
রাণী মৌমাছি যখন বৃদ্ধ হয় তখন আর ডিম নিষিক্ত করতে পারেনা এবং ঠিকভাবে নেতৃত্বও দিতে পারেনা। তখন সমস্ত কর্মী মৌমাছিরা রানীর চারপাশে এসে জড়ো হয়ে ধীরে ধীরে চাপ দিতে থাকে। রাণী মৌমাছি এই চাপ ও উত্তাপে মারা যায়। এই মৃত্যুকেই বলে ক্যাডেল ডেথ বা মৃত্যু আলিংগন)।
© নিশাত তাসনিম (সায়েন্স বী)